হলদিয়ার বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ‘আইকেয়ার ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসার্চ’-এর ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আজ, সোমবার দিল্লিতে বৈঠকে বসছে মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই) এবং ডেন্টাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (ডিসিআই)। সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ ওই কলেজের পরিচালন কমিটির সভাপতি। ‘আইকেয়ার’ নামে যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কলেজটি তৈরি করেছে, সেটিরও চেয়ারম্যান লক্ষ্মণবাবু।
এমসিআই এবং ডিসিআইয়ের যৌথ পরিদর্শন-রিপোর্ট খতিয়ে দেখার পরে গত ১২ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এ কে পট্টনায়ক এবং বিচারপতি আর ভি রবীন্দ্রনের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, বিধি ভেঙে একই বাড়িতে হলদিয়ার মেডিক্যাল কলেজ (আইকেয়ার ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস) এবং ডেন্টাল কলেজ (বিসি রায় ডেন্টাল কলেজ) চালানো হচ্ছে। ডেন্টাল কলেজটি চলছে গত চার বছর ধরে। মেডিক্যাল কলেজে অবশ্য ছাত্রভর্তি শুরু হয়েছে চলতি শিক্ষাবর্ষে। নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট আরও জানায়, বিধি ভাঙার দায়ে কলেজ-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, এমসিআই এবং ডিসিআই-কেই বৈঠকে বসে তা ঠিক করতে হবে।
সেই সিদ্ধান্ত নিতেই আজ আলোচনায় বসছে দুই কাউন্সিল।
এমসিআইয়ের সচিব সঙ্গীতা শর্মা রবিবার বলেন, “সোমবার আমরা দুই কাউন্সিল এ ব্যাপারে বৈঠকে বসব। হলদিয়ার বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজটির কর্তৃপক্ষ সব নিয়ম মেনেছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। বৈঠকের পরে আমাদের পরিচালন বোর্ড পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করবে।” এমসিআই আগে কীসের ভিত্তিতে হলদিয়ার মেডিক্যাল কলেজটিতে পড়ুয়া ভর্তির অনুমোদন দিয়েছিল, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন সচিব।
অন্য দিকে হলদিয়ার ওই মেডিক্যাল কলেজ-কর্তৃপক্ষের দাবি: এমসিআই কলেজ পরিদর্শন করে অনুমোদন দেওয়ার পরেই পড়ুয়া ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। কলেজের তরফে সুপ্রিম কোর্টেও এ কথা জানানো হয়েছিল। এবং তার পরেই সুপ্রিম কোর্ট এমসিআই এবং ডিসিআই-কে বলেছিল হলদিয়ার প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে যৌথ পরিদর্শন করে রিপোর্ট দিতে।
সেই মতো, পুজো মিটতেই গত ৭ অক্টোবর বেসরকারি মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ পরিদর্শনে হলদিয়া আসেন এমসিআই-ডিসিআইয়ের প্রতিনিধিরা। ১২ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টে তাঁদের পরিদর্শন-রিপোর্ট জমা পড়ে। রিপোর্টে বলা হয়, নিয়ম ভেঙে মেডিক্যাল কলেজের ভবনের মধ্যেই ডেন্টাল কলেজের কয়েকটা বিভাগ চালানো হচ্ছে। উপরন্তু দু’টো কলেজের জন্য একটাই ছাত্রাবাস, যা নিয়মবিরুদ্ধ।
আর সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে হলদিয়া মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে বিধিভঙ্গের দায়ে ফেলে শীর্ষ আদালত।
এ দিকে পুজোর ছুটির পরে আজ, সোমবার হলদিয়ার মেডিক্যাল কলেজ খোলার কথা। কলেজ-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পূর্ব ঘোষণামতোই সোমবার কলেজ খুলবে। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য: এমসিআই গত ৩০ জুন একটি চিঠি পাঠিয়ে ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ১০০ ছাত্রছাত্রী নিয়ে কলেজ চালু করার অনুমতি দিয়েছিল। সেই অনুমোদনের ভিত্তিতে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়েছে। তবে ভর্তি প্রক্রিয়ায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার কোনও সহযোগিতা করছে না বলে অভিযোগ তুলে কলেজ-কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন পেশ করেছিলেন, যার নিষ্পত্তি এখনও হয়নি বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। তাঁরা জানিয়েছেন, মেডিক্যাল কলেজের প্রথম বর্ষে এখনও পর্যন্ত ৮০ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছেন।
এ হেন পরিস্থিতিতে ওই সব ছাত্রছাত্রী ও তাঁদের অভিভাবকেরা পড়েছেন অকূলপাথারে। যদি কলেজের অনুমোদন বাতিলই হয়, সে ক্ষেত্রে তাঁদের দায় কে নেবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যে রাজ্য সরকার এবং এমসিআইয়ের মধ্যে চাপান-উতোর শুরু হয়েছে।
আপাতত আজকের বৈঠকের ফলাফলের দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে রয়েছেন ওঁরা। |