উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে ‘সেন্টার অব এক্সেলেন্স’ হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। সেই লক্ষ্যে দ্রুত বেশ কয়েকটি অত্যাধুনিক মানের বিভাগ চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে, ‘ট্রমা সেন্টার’, নিউরো সার্জারি, কার্ডিওথোরাসিক সার্জারি, পেডিয়েট্রিক সার্জারি চালু। শয্যা সংখ্যা আরও অন্তত ৩১৮ টি বাড়ানোর কথা ভাবা হয়েছে। হাসপাতাল সুপার এবং মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের তরফে সম্প্রতি স্বাস্থ্য দফতরে লিখিত প্রস্তাব আকারে জানানো হয়েছে সেন্টার অব এক্সেলেন্স হিসাবে গড়ে তুলতে সুনির্দিষ্ট কী কী পরিকাঠামো প্রয়োজন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবকেও বিস্তারিত জানানো হয়েছে। হাসপাতালের সুপার শৈবাল গুপ্ত জানিয়েছেন, এই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উন্নত শল্য চিকিৎসার বিভিন্ন পরিকাঠামো প্রায় নেই বললেই চলে। ওই সমস্ত পরিকাঠামো গড়ার কথা প্রস্তাবে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পুজোর পর ফের বৈঠক করে সমস্ত কিছু চূড়ান্ত করা হবে। এই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে সেন্টার অব এক্সেলেন্স হিসাবে গড়ে তুলতে দ্রুত কাজ শুরু করা হচ্ছে।” উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অনুপ রায় বলেন, “সেন্টার অব এক্সেলেন্স হিসাবে গড়ে তুলতে কী কী পরিকাঠামো দরকার তার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এখানে কার্ডিওথোরাসিক, নিউরো এবং পেডিয়েট্রিক সার্জারির জন্য কোনও পরিকাঠামো নেই। শল্য চিকিৎসার ক্ষেত্রে সুপার স্পেশালিটি পরিষেবা দেওয়ার জন্য ওই সমস্ত পরিকাঠামো অত্যন্ত জরুরি। প্রায় ১২ কোটি টাকা খরচ করে ওই পরিকাঠামো গড়ে তোলার পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে। জানানো হয়েছে আরও অন্য পরিকল্পনার কথা।” প্রস্তাবে প্রথমেই যে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে জানানো হয়েছে তা হল, উত্তরবঙ্গে এখনও একমাত্র টার্শিয়ারি কেয়ার সেন্টার হল এই মেডিক্যাল কলেজ। কোচবিহার থেকে মালদহ, উত্তরেরর ৬ টি জেলার প্রত্যন্ত এলাকার গরিব বাসিন্দারা উন্নত চিকিৎসা পরিষেবার জন্য একান্তভাবে নির্ভরশীল এই হাসপাতালের উপর। তা ছাড়া লাগোয়া রাজ্য বিহার, অসম, সিকিম, নেপাল, ভুটানের মতো দেশের সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা এখানে চিকিৎসা পরিষেবা নিতে আসেন। অথচ পরিকাঠামোর অভাবে উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগ পান না তাঁরা। সে কারণেই এই হাসপাতালকে সেন্টার অব এক্সেলেন্স হিসাবে গড়ে তোলা প্রয়োজন। হাসপাতাল সূত্রেই জানা গিয়েছে, বর্তমানে ৫৯৯ টি শয্যার অনুমোদন থাকলেও গড়ে ৯০০ রোগী ভর্তি থাকেন। শয্যার অভাবে বহু রোগীর স্থান হয় মেঝেতে। শয্যা অনুপাতে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী থাকলেও প্রায় দ্বিগুণ রোগীকে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে গিয়ে খামতি থেকেই যায়। সে কারণে আরও অন্তত ৩১৮ টি শয্যা বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এবং সেই অনুপাতে প্রয়োজন চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, সাফাই কর্মী নিয়োগ। কার্ডিওথোরাসিক, নিউরো, এবং পেডিয়েট্রিক সার্জারির জন্য আলাদা ভবন এবং যন্ত্রাংশ কেনার জন্য পরিকল্পনায় খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা। ওই বিভাগ গড়তে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, অতিরিক্ত স্বাস্থ্যকর্মী প্রয়োজন। বর্তমানে রিকভারি ইউনিটে ডায়ালিসিস বিভাগের কাজ চলে। সম্পূর্ণ আলাদা ইউনিট গড়ে ওই পরিষেবার মানোন্নয়নের প্রস্তাব রয়েছে। প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি এবং এক্সরে, সিটি স্ক্যানের মতো বিভিন্ন পরীক্ষা ব্যবস্থা ২৪ ঘন্টাই হাসপাতালে চালু রাখতে পর্যাপ্ত এবং দক্ষ কর্মী নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য জেনেটিক ল্যাবরেটরি চালুর প্রস্তাবও রয়েছে। প্রস্তাবে জানানো হয়েছে, বর্তমানে হাসপাতালে ট্রমা সেন্টারের ঘর তৈরির কাজ চললেও দ্রুত শেষ করা প্রয়োজন। হাসপাতালে কেমোথেরাপির ব্যবস্থা রয়েছে। কেমো নিতে আসা রোগীদের এক দিন ভর্তি থাকতে হয় বলে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে আলাদা ডে কেয়ার ইউনিট গড়ার। তা না থাকায় রোগীদের সাধারণ ওয়ার্ডে রাখতে গিয়ে শয্যা আটকে থাকছে। নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (নিকু) এবং পেডিয়েট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (পিকু) মানোন্নয়য়নের প্রস্তাব রয়েছে। বর্তমানে শিশু বিভাগের ওয়ার্ডেই কয়েকটি শয্যা নিয়ে পিকু চলছে। আলাদা ওয়ার্ড করে উন্নত পরিষেবা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। |