বেহাল তিস্তা সেতু, সংস্কার নিয়ে টালবাহানার নালিশ
টাকা বরাদ্দ হয়েছে মাস দুয়েক আগে। দিল্লি থেকে কাজের অনুমোদনও মিলে গিয়েছে। তবু বেহাল তিস্তা সেতুর মেরামতির কাজ শুরু হয়নি। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে জেলা প্রশাসনকে মাস খানেক আগে জানানো হয়েছিল, পুজোর সময়ে শ্রমিক পাওয়া যাবে না বলে কাজ শুরু করতে সমস্যা হবে। পুজোর পরে প্রায় ১৫ দিন কেটে গেলেও কাজ শুরু করতে সমস্যা কোথায় তার সদুত্তর নেই জেলা প্রশাসনের কাছেও। প্রায় এক কিলোমিটার লম্বা তিস্তা সেতুতে অন্তত গোটা দশেক বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। সেতু জুড়েই অসংখ্য ছোট ও মাঝারি খন্দ। দিন রাত ক্রমাগত ভারী যানবাহনের চাকার আঘাতে গর্তগুলি প্রসারিত হয়ে পরষ্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তার ফলে সেতুর কোনও অংশই আর মসৃণ নেই। অত্যন্ত বিপজ্জনক ভাবে দুলে দুলে ছোট বড় গাড়ি চলাচল করছে উত্তর পূর্ব ভারতের সঙ্গে অন্যতম যোগাযোগ মাধ্যম জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া এই তিস্তা সেতু দিয়ে।
ছবিটি তুলেছেন সন্দীপ পাল
প্রায় আট মাস ধরে তিস্তা সেতুর এমন হাল হয়ে থাকলেও কেন মেরামতির কাজ হচ্ছে না তা নিয়ে বিস্মিত খোদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও। রবিবার গৌতমবাবু বলেন, “জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আজই আবার কথা বলব। দু’চারদিনের মধ্যে যাতে কাজ শুরু হয় তার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি।” গত অগস্ট মাঝের মাঝামাঝি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয় তিস্তা সেতু সহ ৩১ ডি জাতীয় সড়ক মেরামতির জন্য প্রায় ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে, যার টেন্ডার প্রক্রিয়াও হয়ে গিয়েছে. বাকি শুধু কাজ শুরুর জন্য দিল্লির অনুমোদন। আগস্ট মাসেই সেই অনুমোদনও মিলে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। জলপাইগুড়ির বিভাগীয় কমিশনার অমরেন্দ্র কুমার সিংহ বলেন, “জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছিল, পুজোর মরসুমে শ্রমিক পাওয়ার সমস্যার কারণে কাজ করা যাবে না। পুজো তো হয়ে গিয়েছে। এখনও কেন কাজ শুরু হল না সেটাই বোঝা যাচ্ছে না।” বেহাল তিস্তা সেতু নিয়ে জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিকদের গলাতেও একই সুর। কংগ্রেস নেতা তথা বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায় বলেন, “জুলাই মাসে দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। জাতীয় সড়ক দফতরের পদস্থ আধিকারিকরা একমাসের মধ্যে কাজ শুরু হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। অথচ তার পরে প্রায় তিন মাস চলে গেল। কিছুই হল না।” জেলা তৃণমুল কংগ্রেসের সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণী বলেন, “তিস্তা সেতুর হাল উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীকে জানিয়েছি। উনি বিষয়টি দেখছেন।” জেলা কংগ্রেসের সভাপতি তথা জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “তিস্তা সেতুর দশায় সাধারণ মানুষ তিতিবিরক্ত। যতবারই দফতরে যোগাযোগ করেছি, দ্রুত কাজ শুরুর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।”পিচের চাদর সরে গিয়ে লোহার কাঠামো বেরিয়ে যাওয়া তিস্তা সেতু দিয়ে যাতায়াত করতে নিত্যযাত্রীরা তিতিবিরক্ত। স্কুল শিক্ষক তথা নিত্যযাত্রী রাজা রাউত বলেন, “সেতুর ওপর দিয়ে যাওয়ার সময়ে রক্তচাপ বেড়ে যায়। মনে হয় এই বুঝি যাত্রীবাহী বাস উল্টে নদীতে পড়ে গেল। প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটে চলছে। আর কবে প্রশাসনের হুঁশ ফিরবে?” জলপাইগুড়ি ডুয়ার্স মিনিবাস ওর্নাস আসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক গৌরব চক্রবর্তী বলেন, “প্রতিদিন বাসের যন্ত্রাংশ বিগড়ে যাচ্ছে। সেতু দিয়ে যাতায়াত করতে বেশি সময় লাগছে। বেহাল সেতুতে যানজটের কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছে। কোনও বাস সময়সূচি মেনে চলাচল করতে পারছে না। এর পরে এই রাস্তায় বাস বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোনও উপায় নেই।” জলপাইগুড়ি জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সাধন বসু বলেন, “যতদূর জানি রাজ্য সরকার, জেলা প্রশাসন, সব তরফেই সেতুর মেতামতি কাজ শুরুর জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। অজানা কারণে হচ্ছে না। দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে বাঁচতে রাস্তাটিই হয়তো বন্ধ করে দিতে হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.