জঙ্গলমহলে বিপুল উন্নয়নমূলক কর্মসূচি ঘোষণার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই কেন্দ্রের তরফে পূর্ণ সাহায্যের আশ্বাস পেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ এ ব্যাপারে আশ্বাস দেন। তাঁর মন্ত্রক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রয়োজনে বিশ্বব্যাঙ্কের সহায়তায় ওই এলাকার উন্নয়নে প্রায় ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হতে পারে।
জঙ্গলমহল সফর সেরে কলকাতা ফেরার পরে মমতা আজ জয়রাম রমেশের ফোন পান। জয়রাম তাঁকে বলেন, “গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে জঙ্গলমহলের উন্নয়নের জন্য প্রস্তাব পাঠান। আমরা সহযোগিতার হাত বাড়াতে প্রস্তুত।” সঙ্গে সঙ্গেই মমতা জয়রামকে বলেন, “প্রস্তাব তৈরিই আছে। রাজ্য সরকার তা আগামিকালই পাঠিয়ে দিতে পারে।” মুখ্যমন্ত্রীর কথা শোনার পরে জয়রাম মমতাকে জানান, আগামী সপ্তাহে জঙ্গলমহলে একটি প্রতিনিধি দল পাঠাবে তাঁর মন্ত্রক। দলটি ওই এলাকা পরিদর্শন করবে এবং তার পর রাজ্য সরকারের সঙ্গে বৈঠক করে কেন্দ্রকে রিপোর্ট জমা দেবে। সেই রিপোর্ট পাওয়ার পরেই জয়রাম নিজে পশ্চিমবঙ্গ সফরে যাবেন।
|
জয়রামের ফোন,
দিলেন সাহায্যের
আশ্বাস। নিজস্ব চিত্র |
তাঁর নিজেরও জঙ্গলমহল এলাকা পরিদর্শন করার ইচ্ছা আছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘ দিন ধরেই চাইছেন, জঙ্গলমহলে কেন্দ্র কোনও প্রতিনিধি দল পাঠাক। রাজ্যে সিপিএম একটানা ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও মেদিনীপুর, বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়ার মতো জেলাগুলির অনুন্নয়নের চেহারাটা কেমন, তা নিজেরাই দেখে যাক কেন্দ্রীয় দল। জয়রাম আজ জানান, যে প্রতিনিধি দলটি তিনি পাঠাবেন, তার নেতৃত্ব দেবেন তাঁর ব্যক্তিগত সচিব আর ভিনিল কৃষ্ণ। ওড়িশার মাওবাদী অধ্যুষিত মালাকানগিরির এই প্রাক্তন জেলা কালেক্টর আদিবাসীদের জন্য বহু উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। |
|
এ বছর ফেব্রুয়ারিতে মাওবাদীরা অপহরণ করেছিল ভিনিল কৃষ্ণকে। কিন্তু পরে চাপের মুখে তাঁকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় তারা। তার পরেই ভিনিল কৃষ্ণকে ব্যক্তিগত সচিব করে দিল্লি নিয়ে আসেন জয়রাম। আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে কাজের বিপুল অভিজ্ঞতা রয়েছে এই তরুণ আইএএস অফিসারের। সে কথা মাথায় রেখেই পশ্চিমবঙ্গ সফরেও
তাঁকে পাঠাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জয়রাম। শনিবার জঙ্গলমহল সফরে গিয়ে মমতা মাওবাদীদের সম্পর্কে যে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন এবং সাত দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন, তাতে দিল্লি খুব খুশি। কেন্দ্রের বক্তব্য, মমতা যে ভাবে জঙ্গলমহলের উন্নয়নের কথা বলছেন তাতে মাওবাদীরা যথেষ্ট চাপের মুখে পড়ছে। একই সঙ্গে সেখানকার সাধারণ মানুষ এই উন্নয়নের পক্ষেই রায় দিতে শুরু করেছেন। বিষয়টি মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যেমন এক দিকে যৌথ অভিযান শুরু করতে চাইছে, তেমনই অন্য দিকে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক এলাকার উন্নয়নের প্রশ্নে রাজ্যের নতুন সরকারকে সব রকম সাহায্যে রাজি। যাতে অনুন্নত জঙ্গলমহল এলাকার বর্তমান ছবিটা বদলায়।
দেশের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলি জুড়ে নিবিড় উন্নয়নমূলক কর্মসূচি নেওয়ার কথা দীর্ঘ দিন ধরেই বলে আসছেন রাহুল গাঁধী। তাঁর বক্তব্য, এক মাত্র এ পথে হেঁটেই মাওবাদী সমস্যার মতো বিষয়গুলির দীর্ঘমেয়াদি সমাধান সম্ভব। রাহুল- ঘনিষ্ঠ জয়রাম রমেশও মনে করেন, গ্রামীণ এলাকার উন্নয়নের মাধ্যমেই মাওবাদী সমস্যার সমাধান সম্ভব। সম্প্রতি রাজধানীতে সর্দার পটেল স্মারক বক্তৃতায় রমেশ বলেছিলেন, ‘গ্রামীণ উন্নয়নের মাধ্যমে যদি আরও বেশি করে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা যায়, তা হলে আম জনতার বিচ্ছিন্নতা ‘কমবে’। এবং সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সঙ্গে গ্রামীণ এলাকার প্রত্যন্ত মানুষের সুষ্ঠু যোগাযোগের মাধ্যমে এই সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান করা যেতে পারে’। গত কাল মমতা জঙ্গলমহলে যা যা ঘোষণা করেছেন, সে গুলি দেখে জয়রামও মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সঠিক ভাবেই উন্নয়নের পথে হাঁটছেন এবং সে কারণেই এ ব্যাপারে কেন্দ্র মমতাকে সব রকম ভাবে সাহায্য করতে পারে। তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি-সহ একাধিক বিষয় নিয়ে কিছু দিন আগেই কেন্দ্রের সঙ্গে মমতার একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তা দ্রুত মিটিয়ে ফেলতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদেরও নির্দেশ দিয়েছেন, দু’পক্ষের মধ্যে সহযোগিতার পরিবেশ তৈরি করতে। কেন্দ্রের শাসক জোটের প্রধান দল কংগ্রেস এবং বৃহত্তম শরিক তৃণমূলের মধ্যে যে সংঘাতের আবহ তৈরি হয়েছিল, তা মেটাতে প্রধানমন্ত্রীর সবচেয়ে বড় তুরুপের তাস জয়রাম রমেশ। সেই জয়রাম এ বার মমতার রাজ্যে বিশেষ উন্নয়নের জন্য উদ্যোগী হওয়ায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও ভাল হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। |