|
|
|
|
|
|
|
ওর আব্দার সব সময় মেনে নেবেন না |
সন্তান যখন যা চায়, অনেক সময়েই বাবা মায়েরা সেটা তাকে দেওয়ার চেষ্টা করেন। অল্প
বয়স থেকে এই পাওয়ার অভ্যাস কিন্তু বাচ্চার ক্ষতিই করে। কিছু ক্ষেত্রে শক্ত হয়ে সন্তানের
অন্যায় আব্দার প্রশ্রয় না দেওয়াটা জরুরি। জানাচ্ছেন মন-চিকিৎসক রিমা মুখোপাধ্যায় |
|
আমার ছেলের ৬ মাস বয়সে হার্নিয়া হয়েছিল। সেই সময় ডাক্তারবাবু পরামর্শ দেন যে অসুস্থ থাকাকালীন ওকে কোনও রকম কান্নাকাটির পরিস্থিতি থেকে দূরে রাখতে হবে। কান্নাকাটি করলেই অসুস্থতা বাড়ত। তাই আমরা ওকে কোনও বকাবকি করতাম না। এর ফলে ধীরে ধীরে ওর ভেতর একটা একগুঁয়েমি ভাব লক্ষ করি। বর্তমানে ও সম্পূর্ণ সুস্থ। আমি গৃহবধূ। শিক্ষাগত যোগ্যতা সাম্মানিক স্নাতক। আমার স্বামী ব্যবসা করেন। শ্বশুর ও শাশুড়ি বর্তমান। মধ্যবিত্ত পরিবার। আর্থিক অস্বচ্ছলতা নেই। কিন্তু ছেলেকে নিয়ে ভীষণ সমস্যায় আছি। সমস্যাগুলি হল:
১) আমার ছেলের এখন ৬ বছর বয়স। প্রথম শ্রেণিতে পড়ে (বাংলা মাধ্যম)। ক্লাসে প্রচণ্ড অমনোযোগী। সব সময় শেষ বেঞ্চে বসে। শিক্ষকরা বোর্ডে কিছু লিখে দিলে কিছুতেই তা খাতায় লিখে আনবে না। প্রথমে আদর করে অনেক বুঝিয়েছিলাম। অনেক ধৈর্য ধরে চেষ্টা করেছি। এক দিন ওকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম কেন ও স্কুল থেকে লিখে আনে না বা পড়াশোনায় অমনোযোগী। উত্তরে বলেছিল যে ওর পড়াশোনা করতে ভাল লাগে না। তা ছাড়া
২) মিথ্যা কথা বলে।
৩) অত্যন্ত জেদি। কেনা খাবার খাওয়ার জন্য জেদাজেদি করে। প্রতি দিন নতুন খেলনার জন্য বায়না করে। না কিনে দিলে চিৎকার-চেঁচামেচি করে। এই আচরণের জন্য পরিবারে হামেশাই অশান্তি হয়। বাড়িতে কিন্তু পড়াশোনায় মনোযোগী। ভীষণ অনুভূতিপ্রবণ। ওর সঙ্গে কেমন আচরণ করব? ও আমার একমাত্র সন্তান। সব সময় একটা দুশ্চিন্তায় থাকি। আপনার সুচিন্তিত মতামত জানালে বাধিত হব।
চিত্রা ঘোষ, হুগলি |
|
মাকে বলছি |
আপনার চিঠি থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, ছোটবেলায় অসুস্থতার জন্য বাচ্চাকে আপনারা খুব বেশি প্রোটেকশনের মধ্যে মানুষ করেছেন। একই সঙ্গে তার বায়না এবং আব্দার সবই মিটিয়েছেন। এই কারণেই হয়তো ওর চাহিদাগুলোকে ও ঠিক মনে করে। সাধারণত প্রথম থেকেই যদি কোনও বাচ্চা চাহিদামতো জিনিস পেতে থাকে, তা হলে সেটাই সে নিয়ম মনে করে এবং বড় হতে থাকলেও এই অভ্যেস চট্ করে পাল্টানো যায় না। এখন আপনার ছেলের বয়স ৬ বছর। এর পরে যখন ও আরও বড় হবে তখন বয়সের সঙ্গে ওর বিভিন্ন জিনিসের আব্দার আরও বাড়তে থাকবে। অনেক ক্ষেত্রেই এটা থেকে খুব বড় সমস্যার সৃষ্টি হয়। সুতরাং, ওকে অবশ্যই এখন থেকে বোঝানো প্রয়োজন যে, ও যা বায়না করবে, সেটা দেওয়া হবে না। বাইরের খাবার কিনে না দিলে যদি না খাওয়ার কথা বলে, সে ক্ষেত্রেও কিন্তু মনকে শক্ত করে আপনাদের নিজেদের জায়গায় স্থির থাকতে হবে। এই ভাবে যদি ও দেখে যে ওর বায়নাকে আর কোনও ভাবেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না, তখন নিজে থেকেই ও এই ধরনের বায়না আর করবে না। এই ধরনের সমস্যা মেটাতে হলে যেটা প্রথম প্রয়োজন, সেটা হল, নিজেরা আত্মবিশ্বাসী থাকা এবং একটু কঠিন হয়ে সন্তানের কোনও সমস্যা সামলানো। অনেক সময়ই এখনকার বাচ্চারা স্কুলের বন্ধুদের কথা বলে বাবা-মায়েদের কাছ থেকে বিভিন্ন জিনিসের আব্দার করে। বহু ক্ষেত্রেই বাবা-মায়েরা এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ে বাচ্চাদের এই সব অন্যায় আব্দার মেনে নেন। এ ধরনের কোনও জিনিস কখনওই প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। তা হলে সন্তান বড় হলেও এই সমস্যা কোনও দিনই যাবে না। বরং বাড়বে।
এ বারে আসি ওর পড়াশোনা সংক্রান্ত সমস্যার ক্ষেত্রে। অনেক সময়েই ক্লাসে বাচ্চাদের মনঃসংযোগের অভাব ঘটে। একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে খুব বেশি সময় ধরে সে হয়তো মন দিতে পারে না। কিন্তু এরই সঙ্গে বাচ্চার যদি রাগ হঠকারিতা বা প্রচণ্ড জেদের বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়, তা হলে অবশ্য মনোবিদের সাহায্য নিতে হবে। এমন কোনও খেলাধুলোয় ওকে দিতে পারেন, যেখানে মনঃসংযোগের প্রয়োজন। এখনও আপনার ছেলে অনেক ছোট, তাই ফুটবল বা ক্রিকেট জাতীয় খেলায় ভর্তি করলে ও আনন্দও পাবে, আবার উল্লিখিত সমস্যারও মনে হয় কিছুটা সুরাহা হবে।
|
|
ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য |
ক্লাসে অনেক ছাত্রছাত্রী থাকলে শিক্ষক বা শিক্ষিকার পক্ষে আলাদা করে প্রতিটি বাচ্চার প্রতি মনোনিবেশ করা সম্ভব হয় না। তাই আপনাকেই ওর স্কুলের আচরণের ব্যাপারে শিক্ষক-শিক্ষিকার সঙ্গে কথা বলতে হবে। ও যাতে সব সময় শেষ বেঞ্চে না বসে, সেটার কথাও বলুন ওঁদের সঙ্গে। আপনি লিখেছেন যে, বাড়িতে যখন ও পড়াশোনা করে, তখন সে অমনোযোগী নয়। হয়তো বাড়ির পরিবেশে ও একা যখন আপনার কাছে পড়ে, তখন ওর পুরো মনোযোগটাই পড়াশোনায় থাকে। কিন্তু ক্লাসের অনেক ছাত্রছাত্রীর মাঝখানে ও মনঃসংযোগ হারিয়ে ফেলে। ক্লাসে পড়া জিজ্ঞেস করলে ও কতটা উত্তর দেয় অথবা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে কতটা মেশে, সে ব্যাপারেও আপনার খোঁজখবর নেওয়া উচিত। অনেক সময় বাচ্চা ঠিকমতো ক্লাস ফলো করতে না পারলে পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ে। তখন তার মধ্যে একটা হীনম্মন্যতা জন্ম নেয়। বন্ধুরাও অনেক সময় তার পড়া না পারা নিয়ে ঠাট্টা-ইয়ার্কি করে, যা শিশুমনে গভীর দাগ কাটে। ফলে বাচ্চাটি আরওই নিজের ভেতর গুটিয়ে যায় এবং পড়াশোনার প্রতি বিমুখ হয়ে পড়ে। সেই কারণেই আপনাকে অবশ্যই দেখতে হবে যে, এ ধরনের কোনও সমস্যা তার স্কুলে হচ্ছে কিনা।
সবশেষে বলি, আপনারা বাড়িতেও এ ব্যাপারে কখনও নেতিবাচক মনোভাব দেখাবেন না। ‘তুই তো কিছুই পারিস না’ বা ‘তোর দ্বারা কিছু হবে না’ ধরনের মন্তব্য কখনওই করবেন না। ধৈর্য ধরে ওকে উৎসাহ দিন, ও যে যে কাজ ভাল পারে, সেগুলোকে বেশি করে প্রশংসা করুন। দেখবেন, আস্তে আস্তে ও নিজেই মনোযোগী হয়ে উঠবে।
দুশ্চিন্তা করে সমস্যার সমাধান হবে না। এখনও ও ছোট। ঠান্ডা মাথায় ওকে ব্যাপারগুলি বুঝিয়ে বলতে হবে। অহেতুক বায়নার ক্ষেত্রে একটু কঠিন মনোভাব দেখাতে হবে। অন্যান্য সময় আদর করে ওর সমস্যাগুলো শুনতে হবে, সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।
|
অনুলিখন: শুভ্রা চক্রবর্তী |
|
ছেলেমেয়েকে নিয়ে মা-বাবার সমস্যা? নাকি মা-বাবাকে নিয়ে ছেলেমেয়ের সমস্যা? পড়ার খরচ
নিয়ে অভিভাবকের দুশ্চিন্তা? দূরের শহরে পড়তে যাওয়ার নামে মেয়ের গায়ে জ্বর আসা? যে
মুশকিলই হোক না কেন, পরিবারের সবাই মিলেই সমাধানে পৌঁছতে হবে। এ বার থেকে
‘প্রস্তুতি’-ও কথা বলবে গোটা পরিবারের সঙ্গেই। অভিভাবকদের বা সন্তানের যে কোনও
দুশ্চিন্তার কথা আমাদের জানান (এবং জানাও) নিজেদের সমস্যা।
সুচিন্তিত উত্তর দেবেন বিশেষজ্ঞরা।
ইমেল: prastuti@abp.in বিষয়: Haate Haat।
অথবা, চিঠি পাঠান (এবং পাঠাও) এই ঠিকানায়:
হাতে হাত, প্রস্তুতি,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
এ বি পি প্রাঃ লিঃ,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০ ০০১ |
|
|
|
|
|
|