দেশের সবচেয়ে বড় সরকারি পরিষেবা
স্কুল কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে নিপারদ ভবিষ্যতের আশায় প্রতি বছর হাজার হাজার ছেলেমেয়ে বসে সরকারি পরীক্ষায়। সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে গোটা ভারতে ভারতীয় রেলওয়ে সরকারি পরিষেবাতেই সর্বাধিক লোক নিয়োগ করা হয়। এই মুহূর্তে দেশ জুড়ে রেল-এর মোট ১৭টি জোন আছে। এই ১৭টি জোন ছাড়াও রেলের ইঞ্জিন ও কোচ তৈরির কারখানায় সব মিলিয়ে প্রতি বছর চাকরি পায় বহু ছেলেমেয়ে। রেলওয়ে মানে তো শুধু রেল চালানো নয়, তার সঙ্গে রয়েছে আনুষঙ্গিক আরও অনেক বিভাগ। ফলে প্রয়োজন অনেক লোকের। আ তাই, চাকুরিসন্ধানী ছেলেমেয়েরা অনেকেই স্টাফ সিলেকশন কমিশন, ডব্লিউ বি সি এস-এর পাশাপাশি বসে রেল-এর বিভিন্ন পরীক্ষাতে।
রেলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে চার রকমের স্তর রয়েছে। সর্বনিম্ন স্তর হল গ্রুপ-ডি। এই স্তরে চাকরি পেতে হলে ন্যূনতম যোগ্যতা মাধ্যমিক উত্তীর্ণ। দফতরের প্রশাসনিক কাজকর্মের পাশাপাশি গ্যাংম্যান, লাইনম্যান, সিগনালম্যান-এর মতো টেকনিক্যাল কাজেও গ্রুপ-ডি কর্মচারীর প্রয়োজন হয়। বছরে বিভিন্ন সময়ে এর জন্য লিখিত পরীক্ষা হয়। পরীক্ষাটির কিন্তু কোনও নির্দিষ্ট সময় নেই। একই বছরে বেশ কয়েকবারও এই পরীক্ষা হতে পারে বিভিন্ন জোনের চাহিদা অনুযায়ী। প্রধান সংবাদপত্রগুলিতে প্রথমে ইনডিকেটিভ নোটিশ দিয়ে উল্লেখ করা হয় পরীক্ষার কথা। তার পর এমপ্লয়মেন্ট নিউজ-এ বিশদ বিজ্ঞাপন করা হয়। এ ছাড়া, ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও জানতে পারা যায়। ওয়েবসাইটটি হল www.rrcer.com। লিখিত পরীক্ষাটি হয় রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট সেলের অধীনে। লিখিত পরীক্ষার পর থাকে ফিজিকাল এফিসিয়েন্সি বা শারীরিক দক্ষতা প্রদর্শনের পরীক্ষা। এর পর মেডিক্যাল টেস্ট নেওয়া হয়। আই-সাইট দেখা হয় এই পরীক্ষায়। কলকাতায় রেল-এর যে সেল’টি আছে, তার মাধ্যমে ইস্টার্ন রেলওয়ে, মেট্রো রেল এবং চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস (সি এম ডব্লিউ) এই তিনটি ক্ষেত্রে গ্রুপ-ডি স্তরের পরীক্ষায় বসা যায়। মাধ্যমিক উত্তীর্ণরা তো বটেই, প্রাক্তন মিলিটারিম্যান তাঁদের কর্মজীবনের শেষে যোগ্যতা অনুসারে গ্রুপ-ডি স্তরে নিয়োগের জন্য আবেদন করতে পারেন। বহুবাজার সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউ-এর মুখে রাইটস-এর বিল্ডিংয়ে এর দফতর রয়েছে।
গ্রুপ-সি কর্মচারীদের নেওয়া হয় রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ড-এর (আরআরবি) মাধ্যমে। আরআরবি কলকাতার অধীনে ইস্টার্ন রেলওয়ের হাওড়া ও শিয়ালদহ ডিভিশন, মেট্রো রেলওয়ে, চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস, সাউথ ইস্টার্ন-এর খড়্গপুর ডিভিশন, চক্রধরপুর ডিভিশনের জন্য আবেদন পত্র জমা নেওয়া হয়। এই লিখিত পরীক্ষার ন্যূনতম মান মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হলেও বিভিন্ন পোস্ট অনুযায়ী যোগ্যতার মাপকাঠি কিন্তু বদল হতে পারে। লিখিত পরীক্ষাটি হয় মোট ১৫০ নম্বরের। ১২০টি প্রশ্ন থাকে। ৯০ মিনিটের মধ্যে উত্তর দিতে হয়। লিখিত পরীক্ষার বিষয় থাকে জেনারেল ইংলিশ, পাটিগণিত, জেনারেল নলেজ এবং কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স। সমস্ত প্রশ্নই থাকে মূলত অবজেক্টিভ ধরনের। মাধ্যমিক মানের। বর্তমানে এই ক্ষেত্রে রিজিয়োনাল ল্যাঙ্গুয়েজ বা স্থানীয় ভাষায় পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থাও হচ্ছে। টেকনিক্যাল পরীক্ষার ক্ষেত্রে নিজস্ব বিষয় সম্পর্কে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় ছাত্রছাত্রীদের । এমপ্লয়মেন্ট নিউজে বিশদে বিজ্ঞাপন থাকে। এ ছাড়া, ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও বিশদে জানতে পারা যায়। ওয়েবসাইট: www.rrbkolkata.org। প্রতি বছরই বেশ কয়েকবার এই পরীক্ষা নেওয়া হয়। বিভিন্ন ক্লেরিকাল, সুপারভাইজার, টেকনিকাল ও নন-টেকনিকাল কর্মচারী কর্মচারীদের নিয়োগ হয় গ্রুপ-সি স্তরের পরীক্ষার মাধ্যমে। কলকাতায় এর দফতর আর জি কর হাসপাতালের বিপরীতে।
রেল-এর গ্রুপ-এ এবং বি স্তরে নিয়োগ হয় ইউ পি এস সি পরীক্ষার মাধ্যমে। ইন্ডিয়ান রেলওয়ে সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে রেলওয়েতে গ্রুপ-বি স্তরে প্রাথমিক ভাবে নিয়োগ হয় জুনিয়র অফিসার পদে। কমপক্ষে স্নাতকস্তরে উত্তীর্ণ হয়েই এই পরীক্ষায় বসা যায়।
বিভিন্ন স্তরের নিয়োগ অনুসারে প্রতি বছর সারা ভারতে ২০ হাজারের বেশি লোক নিযুক্ত হয় ভারতীয় রেলে। এ বিষয়ে ইস্টার্ন রেলওয়ের চিফ পি আর ও সমীর গোস্বামী বলেন, “সরকারি ক্ষেত্রে ভারতীয় রেলের প্রতি সারা ভারত জুড়েই ছেলেমেয়েদের একটা বিশেষ আগ্রহ আছে। প্রথমত, ষষ্ঠ বেতন কমিশনের পর রেলের মাইনে এখন খুব ভাল হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয়ত, রেলে চাকরি করলে বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়, যা অন্য ক্ষেত্রে কোথাও পাওয়া যায় না। যেমন এক জন কর্মচারী এবং তার পরিবারের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা ব্যবস্থা। এমনকী তার মৃত্যুর পরেও তার পরিবার এই সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। বর্তমানে গ্রুপ-ডি কর্মচারীদের বছরে এক বার এসি থ্রি-টায়ারে দূরভ্রমণ করার সুযোগ দেয় রেল কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া সাধারণ স্লিপার ক্লাসে বিনামূল্যে তিন বার যাতায়াত করার সুযোগ পান তাঁরা। ক্রমশ উপরের স্তরে উঠলে এই বিনামূল্যে পাস-এর সংখ্যা বাড়তে থাকে। গ্রুপ-এ এবং বি কর্মচারীরা এই পাস বছরে ৬টি পেতে পারেন। এ ছাড়াও উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের ক্ষেত্রে গোল্ড, কপার বা সিলভার পাস আছে বিশেষ সুবিধা ভোগ করার জন্য। রেলের কর্মচারীদের জন্য সব জায়গাতেই কোয়ার্টারের ব্যবস্থা থাকে। যারা ট্রেন চালান, তাঁরাও রানিং ভাতা, রাত্রি-ভাতা ইত্যাদি পান। এই সব সুযোগ-সুবিধার জন্য ভারতীয় রেলওয়ে আর পাঁচটি সরকারি দফতরের থেকে একটু আলাদা তো হয়ই।”
প্রতি দিনই নানা রকম ট্রেন বাড়ছে, ফলে নানা বিভাগেই দিন দিন প্রয়োজন হচ্ছে নতুন নতুন কর্মচারীর। এক বার যদি একটু খেটে একটা রেলের চাকরি জোগাড় করে ফেলতে পারা যায়, তা হলেই ব্যস, কেল্লা ফতে। তুমি তো বটেই, তোমার পরিবারও নিশ্চিন্ত। তা হলে আর দেরি না-করে রেলের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করো। মন দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাও। পরীক্ষাটা খুব কঠিন নয়। কেবল নিয়মিত কাগজপত্র পড়ার অভ্যেস এবং কিছু সাধারণ জ্ঞান থাকা দরকার। আর চাই অক্লান্ত পরিশ্রম করার ইচ্ছে আর স্পষ্ট আত্মবিশ্বাস।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.