নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
দুই সন্তানের জননী এক বধূকে মারধরের পরে বিবস্ত্র করে চুল ছেঁটে দেওয়ার অভিযোগ উঠল শ্বশুরবাড়ি লোকজনের বিরুদ্ধে। শনিবার সন্ধ্যায় খাস মেদিনীপুর শহরের রাস্তায় ওই ঘটনা দেখেছেন অনেকে। অথচ, নিগৃহীতার সাহায্যে এগিয়ে যাননি কেউ। শেষে আত্মীয়েরাই রুমকি বেহেরা নামে ওই বধূকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করান।
মেদিনীপুর শহরের বটতলা চক লাগোয়া বেহারাপাড়ার শেখর বেহারার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল রুমকির। দম্পতির দুই ছেলেও রয়েছে। মেদিনীপুর মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন বধূটির দাবি, বেহেরাপাড়ার এক জনের সঙ্গে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে উঠেছে সন্দেহে তাঁর উপরে নিয়মিত নির্যাতন করত শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। শেষমেশ শ্বশুরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। তারপর থেকে দুই ছেলেকে নিয়ে নিমতলা চকে ঠাকুমার কাছে থাকেন রুমকি। পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালান। তাঁর দাবি, “যাকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোক সন্দেহ করে, তাকে আমি ভাইয়ের মতো দেখি। আর আমার স্বামী সকাল থেকে মদ খেত। কোনও কাজ করত না। অকারণে আমাকে সন্দেহ আর মারধর করত।” |
শনিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ কাজ সেরে বটতলা চক দিয়ে নিমতলার বাড়িতে ফিরছিলেন রুমকি। তখনই শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁর উপরে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। বধূটিকে ‘জোর করে’ বেহারাপাড়ায় নিয়ে গিয়ে শুরু হয় ‘নির্যাতন’। রুমকির কথায়, “ওরা রাস্তার উপরেই আমায় প্রচণ্ড মারধর করে। বিবস্ত্র করে চুল ছেঁটে দেয়।” বধূটির ক্ষোভ, “আমি পরিত্রাহি চিৎকার করলেও সাহায্যের জন্য কেউ আসেনি।” রুমকির ঠাকুমা কৃষ্ণা পাল বলেন, “শ্বশুরবাড়ির লেকেরা মেয়েটাকে রাস্তায় নির্যাতন করল, নগ্ন করে ঘোরাল, চুল ছেঁটে দিল, অথচ কেউ প্রতিবাদ করল না? কী যে যুগ এল!” রুমকি পরে কোতয়ালি থানায় শ্বশুরবাড়ির পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান।
ঘটনা জেনে প্রতিবাদে সরব হন পুর-কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় কাউন্সিলর শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এমন অমানবিক কাজ বরদাস্ত করা হবে না। পুলিশকে বলেছি, অবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।” মেদিনীপুরের উপ-পুরপ্রধান এরশাদ আলিরও বক্তব্য, “এই ধরনের বর্বরোচিত ঘটনা সমাজের লজ্জা। পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সে জন্য পুরসভার পক্ষ থেকে প্রচার চালানো হবে। পুলিশকে বলব, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে, যাতে এমন করার কথা ভবিষ্যতে কেউ ভাবতে না পারে।” কোতয়ালি থানার আইসি পবিত্র বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, অভিযুক্তেরা পলাতক। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। |