সম্পাদকীয় ২...
অবরোধের সহজ পথ
রাত্রির অন্ধকার গাঢ়তম হইবার পরে দিনের আলো ফুটিয়া ওঠে। রেল অবরোধ যে অব্যবস্থা এবং দুর্ভোগের সূচনা করিয়াছে, কিষাণগঞ্জের অবরোধের ঘটনা তাহাকে চরম অবস্থায় লইয়া গিয়াছে। সেই কারণেই প্রতিকারের সম্ভাবনা দেখা দিয়াছে। রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী রেল অবরোধ বিরোধী আইন প্রণয়ন এবং রেল পুলিশের হাতে অধিকতর ক্ষমতা অর্পণের বিষয়ে আগ্রহী হইয়াছেন। তাঁহার এই আগ্রহ সম্পূর্ণ সমর্থনযোগ্য। গণতন্ত্রে রাজনৈতিক প্রতিবাদের প্রয়োজন নিশ্চয়ই রহিয়াছে, কিন্তু রেললাইন সেই প্রতিবাদের মঞ্চ হইয়া উঠিতে পারে না। আবালবৃদ্ধবনিতা সকল রেলযাত্রীকে চরম দুরবস্থার মধ্যে ফেলিয়া একদল মানুষ নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি করিবে, ইহা কখনওই গণতান্ত্রিক প্রতিবাদের উপায় হইতে পারে না। দীনেশবাবু যথার্থই বলিয়াছেন, ইহাও এক প্রকার সন্ত্রাস। অপরের ক্ষতি করিবার ক্ষমতা প্রয়োগ করিয়া অভীষ্ট সিদ্ধি করিবার প্রয়াসকে সন্ত্রাস ভিন্ন আর কী-ই বা বলা যায়? সাধারণ নাগরিকের এই দুর্ভোগের প্রতিকার করিতে তাহাদের প্রতিনিধিদেরই অগ্রণী হইতে হইবে। রেলমন্ত্রী যে সকল দলের নেতাদের এ বিষয়ে চিঠি পাঠাইয়া রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি করিবার চেষ্টা করিতেছেন, তাহাও সমর্থনের যোগ্য। বস্তুত, প্রায় কোনও বড় জননেতাই সচরাচর এই ধরনের অবরোধ সমর্থন করেন না। কিন্তু স্থানীয় নেতারা দুঃসাহস দেখাইবার জন্য, পেশিশক্তি প্রদর্শনের জন্য রেল অবরোধের পথ বাছিয়া লয়। নূতন রাজ্য হইতে নূতন বিশ্ববিদ্যালয়, যে কোনও দাবিতে রেল অবরোধ ঘটিতেছে। সহজে এবং শস্তায় দৃষ্টি আকর্ষণ করিবার এমন সহজ উপায় আর নাই। ইহাতে যাত্রীদের যেমন নাকাল হইতে হয়, তেমনই প্রভূত আর্থিক ক্ষতি হয়, যাহার অধিকাংশই জনগণের সম্পত্তি। রেল অবরোধ এবং রেলের সম্পত্তির ভাঙচুর সামাজিক অপরাধ। অপরাধ করিলে শাস্তি পাইতেই হইবে। বর্তমান আইনি ব্যবস্থায় যথাযথ শাস্তিবিধান না হইলে নূতন আইন প্রয়োজন। তাই এ বিষয়ে সকল দলকেই ক্ষুদ্র রাজনীতির উর্ধ্বে উঠিয়া সহযোগিতা করিতে হইবে।
রেলমন্ত্রীর অবরোধ-বিরোধী আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নূতন করিয়া অবরোধের রাজনীতির বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত করিতে পারে। ইহা সত্য যে, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে হরতাল এবং অবরোধের পথ বাছিয়া নিয়াছিলেন রাজনৈতিক নেতৃত্ব। স্বয়ং গাঁধীজি অনেক বার বেসরকারি এবং সরকারি ক্ষেত্রে হরতাল এবং অবরোধের ডাক দিয়া গোটা দেশকে অচল করিয়া দিয়াছিলেন। স্বাধীনতার পর সেই ধারা অব্যাহত রহিয়া গিয়াছে। অবরোধ যে মান্যতা ব্রিটিশ যুগে পাইয়াছিল, আজও তাহার সুযোগ লইতেছেন নেতারা। তাঁহারা ভুলিয়া গিয়াছেন, ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তিই ছিল অনৈতিক, এবং তাঁহারা গণতান্ত্রিক রীতিতে দেশ চালাইতেন না। দেশের মানুষ প্রশাসনের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করিতে চাহিলে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করিতে চাহিলে, আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করিয়া, সরকারকে আঘাত করিয়াই তাহা করিতে হইত। স্বাধীনতার পর ছয় দশক কাটিয়া গিয়াছে, এখন ভারত একটি পরিণত গণতন্ত্র রূপে কাজ করিবে, ইহাই প্রত্যাশিত। গণতন্ত্রে বিরোধিতা কাম্য, বিরোধিতার যথাযথ প্রকাশও কাম্য। মানুষের নিজস্ব মত জানাইবার নানা গণতান্ত্রিক মঞ্চ তৈরি হইয়াছে। রাজনৈতিক দল, নাগরিক সংগঠন, সামাজিক, ধর্মীয় কিংবা সাংস্কৃতিক নানা মঞ্চ তৈরি হইয়াই আছে, তৈরি করার সুযোগও রহিয়াছে। এইগুলি ব্যবহার করিয়া সরকারি সিদ্ধান্ত বদলাইতে হইলে পরিশ্রম করিতে হইবে, জনমত গঠন করিতে হইবে। বন্ধ-অবরোধের মতো সহজ কাজ ইহা নহে। গণতন্ত্র সর্বদাই শ্রমসাধ্য। অবরোধ-বিরোধী আইন তাহাই মনে করাইয়া দেবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.