ভারতের মোবাইল টেলিফোনের দুনিয়ায় বেশ কিছু পরিবর্তন আসিতে চলিয়াছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কপিল সিব্বল সম্প্রতি যে ‘জাতীয় টেলিকম নীতি ২০১১’ ঘোষণা করিয়াছেন, তাহাতে এই পরিবর্তনের স্পষ্ট রূপরেখা রহিয়াছে। কয়েকটি নীতি বাজারের প্রতিযোগিতার স্বার্থে অতি প্রয়োজনীয়। দেশের মধ্যে ‘রোমিং চার্জ’ উঠাইয়া দেওয়া যেমন। রোমিং চার্জের নিয়মটি ভারতের বাস্তবের সহিত সঙ্গতিহীন। কাজেই, তাহার বিদায় জরুরি। ‘মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি’-র পরিধিও বর্ধিত হইতেছে। নূতন নীতি অনুযায়ী, যে কোনও শহরের যে কোনও অপারেটরের নম্বর ভিন্ন শহরে ভিন্ন অপারেটরের নিকট অপরিবর্তিত রাখা চলিবে। এই নীতি মোবাইল ফোন পরিষেবার গ্রাহকদের স্বার্থের অনুকূল। অতঃপর, টেলিকম সংস্থাগুলির সহিত দর-কষাকষির ক্ষমতা উপভোক্তাদের বাড়িবে। তবে, নাম্বার পোর্টেবিলিটির প্রক্রিয়াটি সহজতর হইলে সুবিধা হইত। টেলিকম নীতিতে মোবাইল পরিষেবা সংস্থাগুলির জন্যও সুখবর আছে। মোবাইল ফোন এখন আর শুধু কথা বলিবার জন্য ব্যবহৃত হয় না। বস্তুত, কথা বলা এখন আর মোবাইলের মুখ্য উপযোগিতা নহে। তাহার বহুবিধ ব্যবহার আছে। এবং, এত দিন সেই পরিষেবাগুলি দেওয়ার জন্য পৃথক পৃথক লাইসেন্স প্রয়োজন হইত। নূতন নীতি অনুযায়ী, মোবাইলের যাবতীয় পরিষেবা প্রদানের জন্য একটিমাত্র লাইসেন্স প্রয়োজন হইবে। ব্যবসায়িক জটিলতা কমাইবার পথে ইহা একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।
কিন্তু, নীতিটিতে একটি বড় গলদ রহিয়া গিয়াছে। তাহা সম্ভবত সরলীকরণের বাসনাসঞ্জাত। মন্ত্রী জানাইয়াছেন, এখন যেমন দেশের বিভিন্ন ‘সার্কল’-এর জন্য লাইসেন্স দেওয়া হয়, ভবিষ্যতে সেই ব্যবস্থাটি থাকিবে না। ব্যবসা করিবার অনুমতি পাইলে গোটা দেশ জুড়িয়াই ব্যবসা করা যাইবে। মোবাইল পরিষেবা ক্ষেত্রে অঙ্গুলিমেয় কয়েকটি সংস্থার একচেটিয়া অধিকার তৈরি করিবার জন্য এই নূতন ব্যবস্থাটি মোক্ষম। যখন গোটা দেশে ব্যবসা করিবার জন্য লাইসেন্স, তখন নিশ্চিত ভাবেই তাহার জন্য অধিক আর্থিক সামর্থ্যের প্রয়োজন হইবে। সেই সামর্থ্য, স্বাভাবিক ভাবেই, ক্ষুদ্র সংস্থাগুলির নাই। যে সংস্থাগুলির এই সামর্থ্য আছে, তাহারা বৃহৎ সংস্থা। তাহারাই লাইসেন্স পাইবে, এবং মোবাইল পরিষেবা ক্ষেত্রটি কার্যত তাহাদের একচেটিয়া ব্যবসার ক্ষেত্র হইয়া উঠিবে। পরিস্থিতিটি ভবিষ্যতের বাজারের পক্ষে বিপজ্জনক। ভারতে মোবাইল পরিষেবার বাজারটি এখনও গড়িয়া উঠিতেছে। তাহার চেহারা কী হইবে, তাহা এখনও অনিশ্চিত। সেই চেহারাটি নির্ধারণ করিবার দায়িত্ব সরকারের। তাহার জন্য বাজারে প্রতিযোগিতা চাই। আর, প্রতিযোগিতার শর্তই হইল, বাজারে প্রবেশের যোগ্যতামান উঁচু হইলে চলিবে না। এখন যেমন ‘সার্কল’-এর হিসাবে লাইসেন্স দেওয়া হয়, সেই ব্যবস্থা বজায় রাখাই বিধেয়। তাহা হইলে অপেক্ষাকৃত ছোট সংস্থাগুলিও এই বাজারে প্রবেশ করিতে পারিবে। তাহাই যে বাজারের অন্তিম চেহারা হইবে, তেমন নহে। বাজারের নিয়ম মানিয়াই সেই সংস্থাগুলি একে অপরের সহিত মিলিয়া যাইবে, কোনও বড় সংস্থা ছোট সংস্থাকে কিনিয়া লইবে। কিন্তু, যাহা ঘটিবে, তাহা বাজারের নিয়মে ঘটিবে। সেই বাজারটিকে যথাযথ ভাবে তৈরি করাই এখন কর্তব্য। তাহার জন্য সরকারকে ‘ইতিবাচক পক্ষপাত’-এর পথে হাঁটিতে হইতে পারে। তাহা সাময়িক ভাবে বাজারের নিয়মকে লঙ্ঘন করিবে, সত্য, কিন্তু সেই লঙ্ঘন ভবিষ্যতের বাজারের স্বার্থে। বৃহত্তর স্বার্থে। |