নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
একটা বিয়ের অনুষ্ঠান। আর তাকে ঘিরেই নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন গোয়েন্দারা।
নিমন্ত্রিতের তালিকায় কারা ছিলেন? পরিবারের কে কে উপস্থিত ছিলেন? বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে কোথায় কোথায় সে দিন ফোন করা হয়েছিল?
তার কারণ বিয়ের অনুষ্ঠানটা ছিল দাউদ ইব্রাহিমের ছোট ছেলে মইন নওয়াজের। গত মাসের শেষ দিকে করাচির প্রাসাদোপম বাড়িতে এই বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। আর সেই অনুষ্ঠান নিয়েই কাটাছেঁড়া শুরু করেছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। দাউদের কনিষ্ঠতম পুত্রের বিয়ের অনুষ্ঠানে দাউদ পরিবারের সব লোকজনই উপস্থিত ছিল বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রের খবর, পাক গোয়েন্দা সংস্থা তথা আইএসআই-এর পরামর্শে বিবাহ অনুষ্ঠানের কোনও ভিডিও বা ছবি তোলা যাতে না তোলা হয়, সে ব্যাপারে নির্দেশ ছিল দাউদের। তবে তা সত্ত্বেও বেশ কিছু ছবি যে
প্রকাশ্যে এসেছে, তার কারণ অভ্যাগতদের মোবাইল ক্যামেরা। সেখানে দাউদ পরিবারের এমন কয়েক জন আত্মীয় এবং বন্ধুর মুখ দেখা গেছে, যাদের এর আগে কখনও দেখা যায়নি। এদের মধ্যে থেকে কোনও সূত্র পাওয়া যায় কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, “ওই বিয়ের অভ্যাগত তালিকা খতিয়ে দেখাটা খুবই জরুরি। দাউদের পরিবারে আপাতত এটাই শেষ বিয়ের অনুষ্ঠান। ফলে প্রচুর লোক এসেছে, যাদের অনেকেই দাউদের আন্ডারওয়ার্ল্ড ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তাদের মধ্যে অনেকেই নতুন। আমরা চিনি না। চেনার চেষ্টা চলছে।”
ভারতীয় গোয়েন্দাদের ‘মোট ওয়ান্টেড’-এর তালিকায় এক নম্বরে থাকা দাউদ ইব্রাহিমকে দেশে ফেরাতে দীর্ঘদিন ধরেই ইসলামাবাদের উপর চাপ দিচ্ছে দিল্লি। সম্প্রতি দু’দেশের মধ্যে কথা শুরু হওয়ার পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকেও দাউদের প্রসঙ্গ ওঠে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনও রকম ইতিবাচক পদক্ষেপই করেনি ইসলামাবাদ। বরং দাউদ ও তার পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয় দিচ্ছে আইএসআই এমন অভিযোগই বারবার করেছেন ভারতীয় কর্তারা।
গত মাসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করায় তিনি বলেন, “আমরা খুব ভাল করেই জানি, দাউদ কোথায় আত্মগোপন করে আছে। শুধু আমরা না, পাক নেতৃত্বও সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ অবহিত। কিন্তু দাউদের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছতে ইসলামাবাদ আমাদের কোনও সাহায্য করছে না।” বিষয়টি নিয়ে গত এক দশক ধরেই চলছে দু’দেশের মধ্যে চাপানউতোর। লালকৃষ্ণ আডবাণী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় আগরা সম্মেলনে যোগ দিতে দিল্লি এসেছিলেন তৎকালীন পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফ। তখন আডবাণী দাউদের প্রসঙ্গ তুললে মুশারফ সরাসরি অস্বীকার করে বলেছিলেন, দাউদ পাকিস্তানে নেই। খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছিল, পারভেজের ভারত সফরের সময় দাউদকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল দুবাই!
আজ এত বছর পরেও আঙুল সেই ইসলামাবাদের দিকেই। দাউদের ছেলের বিয়ের ছবি প্রকাশ্যে চলে আসায় কূটনৈতিক ভাবে ভারতের কিছুটা সুবিধা হল বলেই মনে করছে সাউথ ব্লক। কিন্তু এর পরের পদক্ষেপ কি হবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত ভাবে আজও কিছু বলতে পারছেন না ভারতীয় গোয়েন্দারা। |