পৃথক রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনের জেরে আরও একটি অশান্ত দিনের সাক্ষী হয়ে থাকল তেলেঙ্গানা। আন্দোলন দমনে রাজ্য সরকার কড়া মনোভাব নেওয়ায় সোমবার রাজ্য জুড়ে বন্ধের ডাক দিয়েছে তেলেঙ্গানা যৌথ সংগ্রাম কমিটি।
পৃথক রাজ্যের দাবিতে যৌথ সংগ্রাম কমিটির ডাকা রেল রোকো আজ দ্বিতীয় দিনে পড়েছে। ফলে দুর্ভোগের হাত থেকে রেহাই পাননি রেলযাত্রীরা। আজ ১২৪টি ট্রেন বাতিল করেছে দক্ষিণ-মধ্য রেল। আরও বেশ কয়েকটি ট্রেনের সময়সূচি বদলানো হয়েছে। শুনশান ছিল নামপাল্লি, সেকেন্দ্রাবাদ ও কাচিগুডার মতো ব্যস্ত স্টেশন। তবে কড়া নিরাপত্তায় ৫০টি ট্রেন চালানো সম্ভব হয়েছে।
বস্তুত ট্রেন চালানো নিয়েও স্নায়ুর লড়াই শুরু হয়েছে যৌথ সংগ্রাম কমিটি এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে। শনিবার আন্দোলনকারীদের বাধা সত্ত্বেও বেশ কয়েকটি ট্রেন চালাতে পেরেছিল সরকার। রেল রোকোয় যুক্ত থাকায় তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির নেতা কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের ছেলে কে টি রাম রাও, সাংসদ বিজয়া শান্তি-সহ বেশ কয়েক জন নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার হন বহু আন্দোলনকারীও।
রবিবার বিজয়া শান্তি-সহ বেশ কয়েক জন নেতাকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। পরে অবশ্য সেকেন্দরাবাদের রেল আদালতের নির্দেশে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন বিজয়া শান্তি। জামিনে মুক্তি পেয়েছেন কে টি রাম রাও ও তাঁর বোন কে কবিতাও। রেড্ডি সরকার রাজ্যের মানুষকে ভয় পাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কে টি রামা রাও। তাঁর দাবি, পুলিশ, আধা সেনা দিয়ে আন্দোলন দমন করে অগণতান্ত্রিক মনোভাবের পরিচয় দিয়েছে রাজ্য। গত এক মাস ধরে আন্দোলন চলছে। কেন্দ্রের উচিত পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন হওয়া। |
বিক্ষোভ। হায়দরাবাদে, রবিবার। ছবি: পি টি আই |
কংগ্রেস নেতা কেশব রাও বলেছেন,“ রেড্ডি সরকার পৃথক রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনকে বাধা দিতে পারে। কিন্তু, আন্দোলনকে দমন করা সম্ভব হবে না। কংগ্রেসের সরকারই কংগ্রেস কর্মীদের জেলে পুরেছে। এই ঘটনা লজ্জাজনক। আন্দোলনে বাধা দিলে তা বিপ্লবের চেহারা নেবে।”
রবিবার আন্দোলনের গতিতে ভাঁটা পড়েনি। খাম্মাম জেলার গাঁধীপুরমে রেল লাইন আটকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার চেষ্টা করেছিলেন এক দল আন্দোলনকারী। তাঁদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হায়দরাবাদে মন্ত্রীদের বাসভবনে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করেছিলেন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের এক দল সমর্থক। তাঁদেরও আটক করা হয়েছে। নালগোন্ডা, মেহবুবনগর, নিজামবাদ ও ওয়ারাঙ্গাল জেলায় বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন চলাচলে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা। তেলেঙ্গানা অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় বন্দি নেতা ও আন্দোলনকারীদের মুক্তি চেয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন মানুষ। আপাতত আন্দোলনের প্রতি নরম মনোভাব দেখানোর লক্ষণ দেখায়নি রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রী ও অন্ধ্র পুলিশের ডিজি সাফ জানিয়েছেন, রেল সুরক্ষা আইনে গ্রেফতার হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হতে পারে। তাতে অনেকের, বিশেষত ছাত্রদের জীবন নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তেলেঙ্গানা আন্দোলনে ছাত্রদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গোলমালে অনেক স্কুল বন্ধ রয়েছে। সোমবার থেকে না খুললে ওই স্কুলগুলি সরকারি স্বীকৃতি হারাবে বলে হুমকি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তেলেঙ্গানা নিয়ে অশান্তির জেরে হায়দরাবাদে বিনিয়োগ ধাক্কা খেয়েছে বলে স্বীকার করে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। হায়দরাবাদের বিভিন্ন শপিং মলে সুরক্ষার ব্যবস্থা দেখেও অনেকে আতঙ্কিত বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। |