কোনও প্রশ্ন নয়, চাপের মুখে অনির্দিষ্টকাল মৌনব্রতে অণ্ণা
গাঁধীর পদাঙ্ক অনুসকরণ করে হাতিয়ার করেছিলেন অনশনকে। এ বার পরিস্থিতির চাপ সামাল দিতে গাঁধীর আর এক অস্ত্র ‘মৌনব্রত’কে আয়ুধ করেছেন অণ্ণা হজারে।
মুখে বলছেন, এই মৌনী ‘আত্মশান্তি’ জাগ্রত করার জন্য। অস্বীকার করার জায়গা নেই, এই মুহূর্তে ঘরে-বাইরে একাধিক ‘অশান্তি’র কালো মেঘ ঘিরে ধরেছে অণ্ণা এবং তাঁর নিজস্ব বাহিনীকে। সুতরাং রালেগন সিদ্ধি গ্রামে বটগাছের তলায় বসে অণ্ণা যে আজ থেকে মুখে আঙুল দিলেন, সেটায় ‘শান্তি’ কামনার চেয়েও রাজনীতির কুশলী চালই লক্ষ করছে ওয়াকিবহাল মহল। প্রশ্ন উঠছে, অণ্ণা চুপ থাকছেন কি আদতে একাধিক প্রশ্নবাণ থেকে বাঁচতেই? কংগ্রেসের তরফে দিগ্বিজয় সিংহ সেই দিকেই ইঙ্গিত করেছেন আজ।
মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে রামলীলা ময়দানে ‘টিম অণ্ণা’র যে ঐক্যবদ্ধ ছবি দেখেছিল গোটা দেশ, দশচক্রে এখন তা অনেকটাই ছত্রভঙ্গ। লোকপাল বিলের খসড়া কমিটিতে অণ্ণার দুই প্রধান কুশীলব প্রশান্ত ভূষণ এবং অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মধ্যে মতপার্থক্য, অণ্ণার সঙ্গে দূরত্ব বৃদ্ধি, বিজেপি এবং আরএসএস-র থেকে অণ্ণার নিজেকে বিচ্ছিন্ন করার তাগিদ সব মিলিয়ে ছবিটা মোটেই সুখী সংসারের নয়। শান্তির তো নয়ই। আজ স্বামী অগ্নিবেশ নতুন করে আক্রমণ শানিয়ে বলেছেন, অণ্ণার টিম ব্রাক্ষ্মণ্যবাদে ভারাক্রান্ত, সেখানে কোনও গণতন্ত্র নেই। তাঁর মতে, কেজরিওয়াল স্পষ্টতই আরএসএস-বিজেপির পথে হাঁটছেন এবং আক্রমণ করছেন কংগ্রেসকে। অথচ মৌনীতে যাওয়ার আগে অণ্ণা কিন্তু বলে গিয়েছেন, মজবুত লোকপাল তৈরি করলে কংগ্রেসের সঙ্গেই কাজ করতে আগ্রহী তিনি! বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর চিঠিতে অনেকটাই আশ্বস্ত বোধ করছেন।
অথচ হিসার উপনির্বাচন ঘিরে এত দিন কংগ্রেসের প্রতি লাগাতার আক্রমণ শানিয়ে আসছিলেন অণ্ণা। হঠাৎ এখন সুর বদল কেন? বলা হচ্ছে, অণ্ণার ক্ষোভের কারণ লালকৃষ্ণ আডবাণীর রথযাত্রা। তিনি আডবাণীকে অনুরোধও করেছিলেন যাত্রার সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখতে। লোকপাল বিল নিয়ে তাঁর সরকার-বিরোধী আন্দোলন যখন শেষ হয়নি, তার মধ্যে আডবাণীর রথযাত্রা তাঁর পালের হাওয়া অনেকটাই কেড়ে নিল বলে মনে করছেন অণ্ণা। অন্তর্দ্বন্দ্বে জীর্ণ বিজেপির কোণঠাসা অবস্থার সুযোগ নিয়ে অণ্ণা একাই কংগ্রেস বিরোধিতার একটি পরিসর তৈরি করেছিলেন। এখন সেখানে রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে বিজেপিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার হলে, তা অণ্ণার জন্য খুব একটা সুখকর পরিস্থিতি নয়। আবার কর্নাটকে দুর্নীতির প্রশ্নেই ইয়েদুরাপ্পা গ্রেফতার হওয়ার পরে অণ্ণার কংগ্রেস বিরোধিতা এবং বিজেপি ঘনিষ্ঠতাও নতুন করে প্রশ্নের মুখে। এমতাবস্থায় অণ্ণা কাল দাবি করেন, আরএসএস বিজেপি-র সঙ্গে তাঁর যোগাযোগই হয়নি! তার আগেই কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ অভিযোগ করেছিলেন, বিজেপি অণ্ণাকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী করার টোপ দিয়েছে। প্রকাশ্যে এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেও বিষয়টিকে ঘিরে যথেষ্ট অস্বস্তি তৈরি হয়েছে অণ্ণা শিবিরে। ভাবমূর্তি সামাল দিতে অণ্ণাও তাই কংগ্রেসের প্রতি নরম হওয়ার ইঙ্গিত দিতে শুরু করেছেন।
ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও অণ্ণার এই অবস্থান কিন্তু সমর্থন করছেন না কেজরিওয়াল। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, “এই বিল নিয়ে সরকার কখনওই ইতিবাচক নয়। বরং অণ্ণার টিম যাতে ভেঙে যায়, তার জন্যই সর্বান্তঃকরণে চেষ্টা করছে মনমোহন সরকার।” ফলত কেজরিওয়ালের সঙ্গে অণ্ণার অবস্থানগত পার্থক্য ক্রমেই প্রকট হয়ে উঠছে। কেজরিওয়ালের আরও একটি মন্তব্যের খোলাখুলি সমালোচনা করেছেন অণ্ণা। কেজরিওয়াল বলে বসেছিলেন, ‘অণ্ণা সংসদের ঊর্ধ্বে’। সে কথার প্রতিবাদে নামতে হয়েছে খোদ অণ্ণাকেই।
মতপার্থক্যের এই আবহে কাশ্মীর নিয়ে প্রশান্ত ভূষণের মন্তব্যে জল আরও ঘোলা হয়েছে অণ্ণা শিবিরে। কাশ্মীরে গণভোটের সপক্ষে মন্তব্য করায় প্রশান্তের বিরুদ্ধে সম্প্রতি হামলা চালায় শ্রীরাম সেনা এবং ভগত সিংহ ক্রান্তি সেনার তিন সদস্য। হামলার সমালোচনা করলেও প্রশান্ত ভূষণের মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন অণ্ণা। নিজের অসন্তোষ গোপন না করেই তিনি বলেছেন, এই বক্তব্য একান্তই প্রশান্তর নিজের। অণ্ণার দলের কারও সঙ্গে তিনি আগে থেকে এ নিয়ে কোনও কথা বলেননি। প্রশান্ত ভূষণের মন্তব্যের বিরোধিতা করেছেন ‘টিম’-এর আর এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য কিরণ বেদীও। পরিস্থিতি এখন এমনই যে ‘দেশবিরোধী’ মন্তব্য করার জন্য প্রশান্তকে শিবির থেকে বহিষ্কার করা হবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
এত রকম প্রশ্ন! এত রকম অশান্তি! প্রয়োজন, ‘আত্মশান্তি’র। অণ্ণা তাই মৌনব্রত নিয়েছেন। প্রথমে জানানো হয়েছিল, এই মৌনী এক সপ্তাহের জন্য। পরে সংশোধন করে বলা হয়েছে, অনির্দিষ্ট কালের জন্য মৌনী নিচ্ছেন লোকপাল আন্দোলনের হোতা। অশান্তি কিছুটা থিতিয়ে না যাওয়া অবধি, কোনও প্রশ্ন নয়!
কোনও প্রশ্ন নয়!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.