দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • ভোপাল |
ইয়েদুরাপ্পা কাঁটায় আপাতত নাজেহাল লালকৃষ্ণ আডবাণীর রথযাত্রা। গত কাল কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দুর্নীতির অভিযোগে জেলে যাওয়ায় তার ধাক্কা ভাল ভাবেই এসে লাগে আডবাণীর দুর্নীতি-বিরোধী রথযাত্রায়। কিন্তু আপাতত কর্নাটক সরকারকে বাঁচাতে ইয়েদুরাপ্পাকে সমর্থন করে যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
কতটা ধাক্কা খেয়েছে রথযাত্রা?
গত কাল ইয়েদুরাপ্পার জেলে যাওয়ার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আডবাণীর রথে জরুরি বৈঠক শুরু হয়। যদিও কর্নাটকের এই লিঙ্গায়েত নেতাকে আগেই দুর্নীতির অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তবু রথযাত্রার মধ্যে এই ঘটনা নতুন করে বিজেপির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগকে প্রাসঙ্গিক করে দিয়েছে। কংগ্রেসও নতুন করে আক্রমণের সুযোগ পেয়ে গিয়েছে। বিজেপির এখন তাই দ্বিমুখী সমস্যা। নিজেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ বড় করে ওঠায় তাদের কংগ্রেস-বিরোধী প্রচার অনেকটাই মার খাবে বলে আশঙ্কা দলের একাংশের। তা ছাড়াও সমস্যা কর্নাটকের সরকারকে টিকিয়ে রাখা। বিজেপি নেতৃত্বের আশঙ্কা, ইয়েদুরাপ্পা জেলে গেলেও কর্নাটকের সরকার ফেলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আপাতত ইয়েদুরাপ্পাকে সমর্থন জুগিয়ে যাওয়ার কৌশলই নেওয়া ভাল। মজা হচ্ছে, রথযাত্রার সময় প্রতিদিন সকালে সাংবাদিক সম্মেলন করলেও গলা খারাপ বলে আজ তা বাতিল করেছেন আডবাণী। অথচ ভোপালের পথে অনেকগুলি জনসভায় বক্তব্য রেখেছেন। কিন্তু ইয়েদুরাপ্পা নিয়ে যাবতীয় প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন।
প্রশ্ন উঠেছে, এ ভাবে কত দিন তিনি বিষয়টি ‘এড়িয়ে’ যাবেন? কারণ, আডবাণীর রথ কর্নাটকে ঢুকছে এ মাসের ৩০ তারিখ। হিসেব মতো ইয়েদুরাপ্পার বিচারবিভাগীয় হেফাজত শেষ হচ্ছে ২২ তারিখে। যদি তার পরে মেয়াদ না বাড়ে তা হলে ‘মুক্ত’ ইয়েদুরাপ্পা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে নিজের রাজ্যে রথযাত্রার সঙ্গী হতে পারেন। সেটা তো আডবাণীর কাছে কাঁটার মতো বটেই। আর যদি ইয়েদুরাপ্পা তখনও হেফাজতেই থাকেন, তা হলে? ইয়েদুরাপ্পাপন্থীরা অনুরোধ জানাচ্ছেন, সে ক্ষেত্রে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জেলে বা হাসপাতালে গিয়ে দেখা করুন আডবাণী। তাঁদের যুক্তি, সদানন্দ গৌড়ার সরকার বাঁচাতে এটুকু করাটা প্রয়োজন।
বস্তুত, কাল ইয়েদুরাপ্পা জেলে যাওয়ার পর থেকে সেখানে তাঁর অনুগামী নেতাদের ভিড় লেগে যায়। বিষয়টি নিয়ে দলের কৌশল স্থির করতে গত কাল রাত পর্যন্ত বৈঠক করেন বিজেপি নেতারা। আডবাণীর সফরসঙ্গী এক নেতার মতে, ইয়েদুরাপ্পা মুখ্যমন্ত্রিত্ব খোয়াতে পারেন, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া, লিঙ্গায়েত সম্প্রদায় ও তাঁর অনুগামী বিধায়কদের উপর নিয়ন্ত্রণ এখনও অটুট। জেলে তাঁর সঙ্গে দেখা করার ভিড় দেখলেই সেটা বোঝা যায়। গত কাল রাত দেড়টায় ‘বুকের ব্যথা’র জন্য ইয়েদুরাপ্পাকে হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়েছে। এ বারে হাসপাতালে সেই অনুগামী মন্ত্রী, বিধায়ক, নেতা-কর্মীদের ভিড় দেখা যাবে। ইয়েদুরাপ্পার বিরুদ্ধে দুর্নীতি অবশ্য এখনও প্রমাণিত নয়। তবু সেই অভিযোগেই তিনি জেলে গিয়েছেন। তাই এমন এক নেতার সমর্থনে যদি বিজেপির নেতারা একজোট হন, সেটা দলের কাছে খুব একটা শুভ ইঙ্গিত নয় বলেও অনেকে মনে করছেন।
তবু কর্নাটকের রাজনীতিতে ইয়েদুরাপ্পার প্রভাবের কথা মাথায় রেখে আপাতত তাঁকে ‘সমর্থন’ জোগানোর কৌশল নিয়েছে বিজেপি। দলের নেতা জগৎ প্রকাশ নাড্ডা বলেছেন, “দল দুর্নীতির বিষয়ে আপস না করলেও ইয়েদুরাপ্পার মামলার আইনি লড়াই করবে।” তেমনই কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া গত কাল ইয়েদুরাপ্পাকে গ্রেফতার করার জন্য পুলিশ পাঠালেও আজ তাঁর অসুস্থতা যে যথার্থ, তা বলার জন্য নিজেই ময়দানে নেমেছেন। পূর্বসূরির অসুস্থতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “ইয়েদুরাপ্পা এতই দুর্বল যে কথাই বলতে পারছেন না।”
তবে বিজেপি নেতৃত্ব এটাও ভেবে রেখেছেন, ইয়েদুরাপ্পার সমর্থনে দলীয় নেতাদের ভিড় বাড়তে থাকলে দিনকয়েক পরে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। আডবাণীর রথের সারথি ইয়েদুরাপ্পা বিরোধী নেতা অনন্ত কুমার যেমন চাইছেন, অপেক্ষা না করে এখনই সেই বার্তা দিন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। যাতে ইয়েদুরাপ্পা একঘরে হয়ে পড়েন। কিন্তু দলের অন্য অংশ মনে করেন, এখন বিষয়টি টাটকা রয়েছে। ইয়েদুরাপ্পার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিতও নয়। বরং তাঁর পক্ষে সমর্থনও যথেষ্ট। এই মুহূর্তে তাই কড়া হতে গেলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা। উল্টে জেলের মধ্যে থেকেই গোটা ‘অপারেশন’ চালিয়ে অনুগামীদের সরকার থেকে সরিয়ে নিতে পারেন তিনি। সে ক্ষেত্রে দক্ষিণের প্রথম দখল করা রাজ্য হাতছাড়া হবে বিজেপির থেকে।
স্পষ্টতই ইয়েদুরাপ্পা-কাঁটা নিয়ে যথেষ্ট নাজেহাল বিজেপি নেতৃত্ব। সব থেকে বেশি চিন্তায় অবশ্যই আডবাণী। তিনিও বুঝতে চান, ইয়েদুরাপ্পা-পর্বের রাজনৈতিক পরিণতি কী হতে পারে। তবে তার আগে, অন্তত কর্নাটকে পৌঁছনো পর্যন্ত বিষয়টি তাঁর রথযাত্রায় কাঁটা হয়েই রইল। |