বাড়িতে যাদের পরিচারক হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন, তাদের পদবিটুকুও জানতেন না গৃহকর্তা বা কর্ত্রী। ওই দুই পরিচারক জানিয়েছিল, তারা ওড়িশার বালেশ্বরের বাসিন্দা। স্থানীয় থানাতেও ওই দু’জনের ছবি বা অন্য তথ্য দেননি রাজেশ বাগাড়িয়া নামে ওই গৃহকর্তা। কাজে যোগ দেওয়ার চার দিন পরেই গৃহকর্তার মা ও মেয়ের খাবারে মাদক মিশিয়ে টাকা-গয়না নিয়ে উধাও হয়ে গেল ওই দুই পরিচারক। শুক্রবার বালেশ্বরের সোরো থানা এলাকা থেকে ওই দুই পরিচারক-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
বাড়িতে পরিচারক নিয়োগের সময়ে তাঁর সচিত্র পরিচয়পত্র স্থানীয় থানায় জমা রাখার কথা বারবার পরিবারগুলিকে বললেও অনেক মানুষই যে তোয়াক্কা করছেন না, এই ঘটনা ফের তার প্রমাণ । পুলিশ জানায়, ধৃত দুই পরিচারকের নাম করুণাকর রাউত ওরফে বিজয়, তারাকান্ত মল্লিক ওরফে সঞ্জয়। ধরা হয়েছে বিজলি বেহেরা তৃতীয় এক জনকেও। পুলিশের দাবি, জেরায় করুণাকর ও তারাকান্ত জানায়, বিজলির কথা মতোই তারা এ কাজ করেছে। ডাকাতির অভিযোগে বিজলি আগে ওড়িশায় জেল খেটেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
রাজেশবাবু পুলিশকে জানান, ৮ অক্টোবর কাজে যোগ দেয় করুণাকর ও তারাকান্ত। নিজেদের নাম বলে বিজয় ও সঞ্জয়। কাজে ঢুকে বিজয় ও সঞ্জয়ের ‘দেশের লোক’ পরিচয় দিয়ে ফ্ল্যাটে আসে বিজলি। পরদিন স্ত্রীকে নিয়ে বেরিয়ে যান রাজেশবাবু। বিজয় ও সঞ্জয় ছাড়া সে সময় বাড়িতে ছিলেন রাজেশবাবুর মা ও মেয়ে।
কয়েক ঘণ্টা পরে ফ্ল্যাটে ফিরে বাগাড়িয়া দম্পতি দেখেন, ঘরের মেঝেতে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে আছেন মা ও মেয়ে। উধাও মায়ের দু’টি হিরে বসানো বালা ও নগদ ৬০ হাজার টাকা। বেপাত্তা দুই পরিচারক। পড়ে রয়েছে তাদের জামাকাপড়ের ব্যাগ। মা ও মেয়েকে নার্সিংহোমে ভর্তি করা হলে চিকিৎসকেরা জানান, তাঁদের খাবারে মাদক মেশানো হয়েছিল। ১০ অক্টোবর পুলিশে অভিযোগ করেন রাজেশবাবু।
পুলিশ জানায়, রাজেশবাবুর এক পরিচিতের বাড়ির পরিচারকের সুপারিশে কাজে ঢুকেছিল ওই দু’জন। পুলিশ ওই পরিচারকের সূত্র ধরে করুণাকর ও তারাকান্তের হদিস পায়। তাদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে মেলে চুরি যাওয়া গয়না ও টাকাও। তারা জানায়, নিজেকে ‘দেশের লোক’ বলে পরিচয় দিয়ে ৮ অক্টোবর রাজেশবাবুর ফ্ল্যাটে যায় বিজলি। সঙ্গে নিয়ে যায় মাদক। জানতে পারে, পরদিন বাইরে যাবেন রাজেশবাবু। পরদিন রাজেশবাবুরা বেরিয়ে গেলে বহুতলের মুখে দাঁড়িয়েছিল বিজলি। গয়না, টাকা নিয়ে দুই পরিচারক বেরোতেই তাদের নিয়ে হাওড়ায় পৌঁছয় সে। সেখান থেকে বালেশ্বর। পুলিশের দাবি, ধৃতেরা জেরায় জানিয়েছে, এই ঘটনায় আরও এক জন জড়িত। তার খোঁজ চলছে। |