শহরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের কথা ভেবে কলকাতায় আইন অমান্য কমর্সূচির দিন পরিবর্তন করল বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক। সংসদের প্রকাশিত একটি পুস্তিকায় ১৮ অগস্ট, ১৯৪৫-কে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যুদিন হিসাবে উল্লেখ করার প্রতিবাদে এবং নেতাজির জন্মদিন ২৩ জানুয়ারিকে ‘দেশপ্রেম দিবস’ হিসাবে ঘোষণার দাবিতে আগামী ১৮ নভেম্বর দেশ জুড়ে ‘জেল ভরো’ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে ফ ব। কিন্তু ওই দিন কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজের এক দিনের ম্যাচ রয়েছে। সেই দিনই কলকাতায় আইন অমান্য করতে নামলে এক দিকে যেমন ক্রিকেটপ্রেমী জনতার অসুবিধা হবে, তেমনই পুলিশ-প্রশাসনকে সমস্যায় পড়তে হবে। সেই জন্যই কলকাতা এবং আশেপাশের আরও চারটি জেলায় আইন অমান্য কর্মসূচিটি পিছিয়ে ২১ নভেম্বর করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ফ ব নেতৃত্ব। রাজ্যের বিরোধী শিবিরের একটি দল হিসাবে ফ ব-র এই সিদ্ধান্ত ‘দায়িত্ববোধে’রই পরিচায়ক বলে রাজনৈতিক শিবিরের অভিমত।
মূলত নেতাজি-প্রশ্ন এবং মূল্যবৃদ্ধির সমস্যাকে সামনে রেখে ওই আইন অমান্য আন্দোলনের কলকাতা কর্মসূচিতে যোগ দিতে চান ফ ব-র প্রবীণ রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষ স্বয়ং। দলের সর্বোচ্চ নেতা যেখানে গ্রেফতার বরণ করবেন, সেখানে ১৫-২০ হাজার লোক এনে আশেপাশের জেলাগুলি প্রত্যাশিত ভাবেই কর্মসূচি ‘সফল’ করতে চায়। সেই জন্যই ক্রিকেট ম্যাচের দিনটি এড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন ফ ব নেতৃত্ব। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর দু’দিনের এবং রাজ্য কমিটির এক দিনের বৈঠকে আলোচনার পরে অশোকবাবু রবিবার বলেন, “এই কর্মসূচি রাজ্যে বাম আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দেবে!”
ফ ব-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জয়ন্ত রায়ের বক্তব্য, “নেতাজির মৃত্যুরহস্য নিয়ে উদ্দেশ্যপ্র ণোদিত ভাবে বারবার বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। তার প্রতিবাদে আমরা নাগরিক কনভেনশনেরও আয়োজন করব।” আগামী ২১ অক্টোবর আজাদ হিন্দ ফৌজের সরকারের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। ওই দিনটি পালনে রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কোনও সহযোগিতা করে কি না, ২৩ জানুয়ারিকে ‘দেশপ্রেম দিবস’ হিসাবে পালনের জন্য উদ্যোগী হয় কি না, সেই দিকে মানুষ ‘নজর’ রাখছেন বলেও মন্তব্য করেন অশোকবাবু।
ফ ব সূত্রের খবর, রাজ্য কমিটির বৈঠকে অশোকবাবু এ দিন ফের বলেছেন, সিপিএমের ‘লেজুড়বৃত্তি’ করে তাঁরা আর চলবেন না। বামফ্রন্টের যা কর্মসূচি হয়, তার প্রায় সবই সিপিএম-নির্ধারিত। ফ্রন্টের শরিক দল হিসাবে সেগুলি ফ ব অবশ্যই পালন করবে। কিন্তু তার পাশাপাশি তাদের ‘স্বতন্ত্র উপস্থিতি’ মানুষকে জানান দিতেই বেশি করে কর্মসূচি নিতে হবে নিজেদের। নভেম্বরের ‘জেল ভরো’ তারই অঙ্গ। আন্দোলনের রাস্তায় থাকলে দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব সামাল দিতেও অবশ্য সুবিধা হয় ফ ব-র। দ্বন্দ্ব সামাল দিতেই বর্ধমান ও জলপাইগুড়ি জেলা কমিটি ভেঙে দু’টি করে কমিটি গড়তে হয়েছে ফ ব-র এ বারের রাজ্য কমিটিতেই!
প্রসঙ্গত, দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের সদস্য থাকবেন কি না, সেই প্রশ্নের জবাবে অশোকবাবু এ দিন জানিয়েছেন, কোচবিহার জেলা নেতৃত্বের সিদ্ধান্তই মেনে চলা হবে।
অর্থাৎ উদয়নবাবু ওই পর্ষদের সদস্য হিসাবে কাজ চালিয়ে যাবেন। |