দ্রুত শহিদ মিনারের হাল ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেড় মাস আগে পূর্ত দফতরের পদস্থ ইঞ্জিনিয়ারেরা গিয়ে সমীক্ষাও চালিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু সংস্কারের কাজ শুরু হয়নি। কবে শুরু হবে, তা-ও জানা নেই তাঁদের। পূর্ত এবং পর্যটন দফতর বসে রয়েছে অর্থ দফতরের ছাড়পত্রের অপেক্ষায়।
বছর আড়াই আগেই শহিদ মিনারের হাল ফেরাতে রাজ্য সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গাঁধী। ২০০৯-এর মে মাসের এক রবিবার তিনি সপরিবার মিনারের উপর উঠেছিলেন। ভিতরে চামচিকে, বাদুড় ও বিভিন্ন রকম পাখির বংশবৃদ্ধি এবং চারপাশের অবস্থা দেখে বিরক্ত হয়ে তিনি চিঠি দেন তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামীকে। এর পর দায়সারা সামান্য কিছু কাজ হলেও মিনারের অবস্থা বদলায়নি।
১৮১৪-১৬ সালের গোর্খা যুদ্ধে নিহত সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ১৮২৮ সালে মেজর জেনারেল ডেভিড অক্টারলোনি তৈরি করান এই স্মৃতিস্তম্ভ। খরচ পড়েছিল ৩৫ হাজার টাকা। ১৫৭ ফুট উঁচু এই স্তম্ভের নীচের অংশে মিশর, সিরিয়া ও তুকির্র্ স্থাপত্যের মিশেল ঘটেছে।
এ রাজ্যে দ্বিতীয় যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ১৯৬৯-এর ৯ অগস্ট স্তম্ভের নাম বদল করে রাখা হয় ‘শহিদ মিনার’। বিদেশি এবং ভিনরাজ্যের পর্যটকদের অনেকের কাছেই এই মিনার কলকাতার অভিজ্ঞান। কিন্তু তার চার পাশের অবস্থা? তিনটে দিকই দখলদার এবং বাস-গুমটির গ্রাসে। মিনারের কাছে পৌঁছনোই দুঃসাধ্য। মিনারে উঠতে চাইলেও অনেক রীতিনীতির বেড়াজাল। পুলিশের আগাম অনুমতি দরকার। |
শোচনীয় অবস্থা শহিদ মিনারের উপরের অংশের। রাজীব বসুর তোলা। |
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে পূর্তমন্ত্রী সুব্রত বক্সী এবং পর্যটনমন্ত্রী রচপাল সিংহকে নির্দেশ দেন যাতে দ্রুত মিনারের হাল ফেরানো হয়। গত ১ সেপ্টেম্বর দুই দফতরের এক দল পদস্থ কর্তা মিনারটি দেখতেও যান। সমীক্ষার পরে পূর্তসচিব অজিত রঞ্জন বর্ধন বলেন, মিনার রং করা ছাড়াও চার পাশের লোহার ফেন্সিং এবং সংলগ্ন রাস্তা ঠিক করতে হবে। একটি ফলকে থাকবে মিনারের নানা তথ্য। বাড়তি কিছু আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। এ সবের জন্য প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার হিসেব পূর্ত দফতর পাঠায় পর্যটন দফতরে। কিন্তু পূর্ত দফতরের এক পদস্থ অফিসার রবিবার জানান, “পর্যটন দফতরের ছাড়পত্র না এলে প্রস্তাবিত কাজের টেন্ডার ডাকা যাচ্ছে না।” সমস্যাটা কোথায়? পর্যটন-অধিকর্তা পৃথা সরকার বলেন, “মিনার সংস্কারের কাজটা আমরাই করাব পূর্ত দফতরকে দিয়ে। এ ব্যাপারে পূর্ত দফতরের প্রস্তাব অর্থ দফতরে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে কোনও উত্তর না এলে পূর্ত দফতরকে জানাতে পারছি না।” সুতরাং শহিদ মিনারের ভবিষ্যৎ এখন অর্থ দফতরের হাতে।
যতীন চক্রবর্তী পূর্তমন্ত্রী থাকাকালীন মিনারের চূড়ার রঙ লাল করা হয়েছিল। তখন এ নিয়ে প্রচুর হইচই হয়। পরে চূড়ার রং আবার আগের মতো হাল্কা করে দেওয়া হয়। পূর্ত অফিসারেরা জানিয়েছেন, মহাকরণে পালাবদলের কোনও প্রভাব মিনারের রংয়ের উপর পড়বে না।
পূর্ত সচিব বলেন, “এটা যেহেতু ঐতিহ্যবাহী মিনার, রং এখনকার মতো হাল্কাই থাকবে।” |