দমকল না থাকলে আগুনের সঙ্গে নিজেরা কী ভাবে মোকাবিলা করবেন, ১৫ নম্বর কবিতীর্থ-র বহুতল আবাসন কমপ্লেক্সে রবিবার দুপুরে তা নিয়েই আলোচনা করছিলেন সেখানকার বাসিন্দারা। তখনও তাঁরা জানেন না যে, খানিকক্ষণের মধ্যে সত্যি সত্যিই হাতেকলমে দমকলকর্মীদের ভূমিকায় তাঁদেরই নামতে হবে। অন্যের জীবন বাঁচাতে লড়তে হবে আগুনের সঙ্গে। এ দিন দুপুরে ওই আবাসন থেকে ৬০ মিটার দূরে একটি সিমুইয়ের কারখানায় আগুন লাগে। পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে, এই আশঙ্কা করে ওই আবাসনে মজুত অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম দিয়ে আগুনের উপরে জল ছুড়তে থাকেন সেখানকার বাসিন্দারা। যার জেরে শেষ পর্যন্ত আগুন তেমন ভয়াল রূপ ধারণ করেনি।
পুলিশ জানিয়েছে, দুপুর দেড়টা নাগাদ ওই সিমুইয়ের কারখানায় আগুন লাগে। কারখানাটির লাইসেন্স নেই বলেই প্রাথমিক তদন্তের পরে অভিযোগ পুলিশ এবং দমকলের। অরবিন্দন বালিকি নামে এক যুবকের আগুনে জখম হওয়া ছাড়া আর কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলেই দাবি করেছে ওয়াটগঞ্জ থানার পুলিশ।
জীবনে প্রথম বার এই ধরনের আগুন নেভানোর পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়া ওই আবাসনের বাসিন্দাদের একেবারে ‘ফুল মার্কস’ দিচ্ছেন কবিতীর্থের লোকজন। তার কারণ, সিমুইয়ের কারখানার পিছনেই স্টিম গলির ভিতরে আছে একটি বিরাট বস্তি। যেখানে কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। ফলে, আগুন বস্তিতে ছড়িয়ে পড়লে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনার আশঙ্কা ছিল বলেই জানিয়েছেন বস্তিবাসীরা।
আগুনের লেলিহান শিখা যখন ওই কারখানা ছাড়িয়ে বস্তির একটি ঘরের ছাদের উপরে ছড়িয়ে পড়েছে, তখনই ‘ফায়ার ব্রিগেড’-এর ভূমিকায় নামেন ওই আবাসনের বাসিন্দারা। কমপ্লেক্সের ভিতরে দু’লক্ষ ১০ হাজার লিটার আয়তনের জলাধারের সঙ্গে ১০ কিলোগ্রামের ফায়ার পাম্প এবং চারটি ১৫ ফুটের পাইপ দিয়ে আবাসনের থেকে ৬০ মিটার দূরের ওই জ্বলন্ত কারখানার উপরে লাগাতার জল দেওয়া শুরু হয়। স্টিম গলির বাসিন্দাদের অভিযোগ, দমকল ঘটনাস্থলে পৌঁছতে দেরি করেছে।
|
কারখানার আগুন ততক্ষণে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। খবর পেয়ে এসে
গিয়েছেন দমকলকর্মীরাও। রবিবার, কবিতীর্থ-এ। নিজস্ব চিত্র |
স্টিম গলির বাসিন্দা মহম্মদ সাদিকের কথায়, “ওই আবাসন থেকে সাহায্য না-করলে এ দিন সত্যিই বড় বিপদ হতে পারত। এক দিকে ওই আবাসন থেকে আগুনে জল দেওয়া হয়েছে। আর অন্য দিকে, আমরা এলাকার লোকজন আগুনের উপরে বালি ছুড়েছি। প্রথম দফায় আমরাই আগুনের সঙ্গে লড়েছিলাম। তার পরে দমকল এসেছে।”
রবিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আগুন নিভে যাওয়ার পরে ওয়াটগঞ্জ রোডের উপর থেকে হাত নেড়ে ওই আবাসন কমপ্লেক্সের বাসিন্দাদের উদ্দেশে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন স্টিম গলির বস্তির বাসিন্দারা। আবাসন কমপ্লেক্সের বহুতলগুলির বারান্দা থেকে সেখানকার বাসিন্দারা বস্তির লোকজনকে আশ্বস্ত করছেন।
ওই আবাসন কমপ্লেক্সের সচিব মুস্তাফা খাসামওয়ালার কথায়, “আমরা তিন বছর এই আবাসনে রয়েছি। কখনও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা কাজে লাগানোর পরিস্থিতি আসেনি। আগুন নেভানোর যন্ত্রপাতি নিয়ে আমাদের আবাসনে মাঝেমধ্যে মহড়া দেন হাউস কিপারেরা। তবু কয়েক দিন ধরেই আমরা ভাবছিলাম, আগুনের সঙ্গে মোকাবিলা করার প্রশিক্ষণ নেব। আজ আমরা এই নিয়ে আলোচনাও করছিলাম। কিন্তু, এ ভাবে যে কিছু না-জেনে পরীক্ষায় নামতে হবে, সেটা ভাবিনি। হাউস কিপারদের সঙ্গে আমরাও আগুন নেভানোর কাজে নেমে পড়ি। ভেবে ভাল লাগছে যে, আমাদের প্রতিবেশীরা সকলে অক্ষত আছেন।”
এ দিকে, আগুন লাগার ঘটনার কথা জানতে পেরেই এ দিন ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী তথা স্থানীয় বন্দর এলাকার বিধায়ক ফিরহাদ হাকিম। ওই এলাকায় একটি দমকল কেন্দ্র তৈরি করার জন্য পুরমন্ত্রীর কাছে দাবি করতে থাকেন স্থানীয় মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, কাছাকাছির মধ্যে ওয়েস্ট পোর্ট এবং হাইড রোড ছাড়া ফায়ার ব্রিগেডের কোনও অফিস নেই। মন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করবেন বলে জানান। এ দিন ঘটনাস্থলে এসেছিলেন কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র পারিষদ ফৈয়াজ আহমেদ খানও। |