এককথায় তাঁরা সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ে নেমে পড়ে, ঝুঁকির তোয়াক্কা না-করে।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের জমিতে পা রাখতে গিয়ে সেই এনএসজি-বাহিনীই সামান্যতম ‘ঝুঁকি’ও নিতে নারাজ।
এনএসজি’র একটি অতিরিক্ত হাব গড়তে রাজারহাটে ৩৫ একর জমি চিহ্নিত করেছে রাজ্য সরকার। হস্তান্তরের কাগজপত্রও তৈরি হয়ে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও এখনই সেই জমিতে কাজ শুরু করতে চাইছেন না এনএসজি-কর্তারা। কারণ, ওখানে এখনও চাষ-আবাদ চলছে, রয়েছে বেশ কয়েকটা কুঁড়েও। এনএসজি চাইছে, রাজ্য প্রশাসন আগে ফসলের ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে, কুঁড়েঘর সরিয়ে তিন নম্বর অ্যাকশন এরিয়ার ওই জমি তাদের হাতে তুলে দিক। তখন তারা জমি ঘিরে পাঁচিল তুলে ভিতরে নির্মাণকাজ শুরু করবে, তার আগে নয়। এনএসজি-সূত্রের খবর: পশ্চিমবঙ্গে জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি ‘স্পর্শকাতর’ বলেই এই সিদ্ধান্ত।
২৬/১১-র মুম্বই-হামলার প্রেক্ষিতে কলকাতা, মুম্বই, চেন্নাই ও হায়দরাবাদে এনএসজি’র একটা করে হাব গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। স্থির হয়েছিল, কলকাতা বিমানবন্দরের কাছে তৈরি ওই হাবে এনএসজি-কম্যান্ডোবাহিনী মোতায়েন থাকবে। যাতে পূর্ব বা উত্তর-পূর্ব ভারতে কোথাও কোনও সন্ত্রাসবাদী হামলা হলে কলকাতা থেকে বিশেষ বিমানে চটজলদি তারা সেখানে পৌঁছে যেতে পারে। পাশাপাশি কলকাতায় এনএসজি’র একটা আঞ্চলিক কেন্দ্র তৈরিরও সিদ্ধান্ত হয়, যেখানে মোতায়েন এনএসজি-বাহিনী দরকারে রাজ্য
পুলিশকে ভিআইপি-নিরাপত্তা ও কম্যান্ডো প্রশিক্ষণ দেবে।
কিন্তু জমি না-মেলায় আঞ্চলিক কেন্দ্রের পরিকল্পনা ধাক্কা খেয়েছে। আজ এখানে এনএসজি-র ডিজি আর কে মেধেকর বলেন, “আমরা আঞ্চলিক কেন্দ্রের জন্য জমি পাইনি। এখন তাই ঠিক হয়েছে, রাজারহাটেই একটি বাড়তি হাব বানানো হবে। সেখানে মোতায়েন থাকবে অতিরিক্ত এক স্কোয়্যাড্রন কম্যান্ডো।”
|
কলকাতাকে এত গুরুত্ব দেওয়ার কারণ কী?
মেধেকরের জবাব, “পূর্ব ও উত্তর-পূর্বের বারোটা রাজ্য কলকাতার উপরে নির্ভরশীল। সেখানে কোথাও সন্ত্রাসবাদী হামলা হলে কলকাতা থেকেই কম্যান্ডো পাঠানো হবে।”
আর এই গুরুত্বের প্রেক্ষিতেই যত দ্রুত সম্ভব রাজারহাটে হাবের কাজ শুরু করতে চাইছেন তিনি। এবং সেই কারণেই ওঁরা চাইছেন, জমি খালি করে, ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে রাজ্য সরকার যত শীঘ্র সম্ভব ‘অ-বিতর্কিত’ জমি তাঁদের হাতে তুলে দিক। মধ্যমগ্রামের বাদুতে এনএসজি-র একটা হাব ইতিমধ্যে চালু হয়ে গিয়েছে। সেখানে মজুত আছে একটি স্কোয়্যাড্রন। রাজারহাটের হাব চালু হয়ে গেলে আরও এক স্কোয়্যাড্রন পাঠানো হবে। আর তখন দুই স্কোয়্যাড্রন কম্যান্ডোই রাজারহাটে মোতায়েন রাখা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। কেন?
এনএসজি-কর্তাদের ব্যাখ্যা: বাদু থেকে কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছতে এমনিতেই এক ঘণ্টা লেগে যায়। এর উপরে রয়েছে যশোহর রোডে নিত্য যানজট। অন্য দিকে রাজারহাটের তিন নম্বর অ্যাকশন এরিয়ার জায়গাটি থেকে বিমানবন্দর বড়জোর আধ ঘণ্টার রাস্তা। তাই আপৎকালীন পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে রাজারহাটেই কম্যান্ডোদের মোতায়েন রাখার সিদ্ধান্ত। সে ক্ষেত্রে মধ্যমগ্রামের হাবটি নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং প্রশাসনিক কাজকর্মের জন্য ব্যবহৃত হবে।
এ দিকে কলকাতায় এনএসজি-র আঞ্চলিক কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা বাতিল হওয়ায় রাজ্য ও কলকাতা পুলিশের কর্তাব্যক্তিদেরও কিছুটা আশাভঙ্গ হয়েছে। তাঁরা ভেবে রেখেছিলেন, কেন্দ্রটি হলে সেখানে তাঁদের কর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো যাবে। কিছু দিন আগে এনএসজি-র এক শীর্ষকর্তা যখন রাজারহাটের জমি দেখতে কলকাতা গিয়েছিলেন, সে সময়ে তাঁর সঙ্গে কলকাতার পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দার এ বিষয়ে আলোচনাও হয়েছিল। উল্লেখ্য, এখন বিশেষ প্রশিক্ষণের দরকার পড়লে সব রাজ্যের পুলিশকে আসতে হয় মানেসরে, এনএসজি-র এই মূল শিবিরে। এনএসজি-কর্তারাও বলছেন, কলকাতায় প্রয়োজনীয় ছ’শো একর জমিতে আঞ্চলিক কেন্দ্র গড়া গেলে শুধু পশ্চিমবঙ্গ বা কলকাতা পুলিশ নয়, অন্যান্য রাজ্যের পুলিশকর্মীদেরও সেখানে তালিম দেওয়া যেত।
কিন্তু ওখানে এনএসজি-র হাতে জমি বলতে সাকুল্যে বাদুতে ২২ একর আর রাজারহাটের ৩৫ একর। তাতে অন্য বাহিনীর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা আদৌ সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন এনএসজি’র কর্তারা।
গত ২১ সেপ্টেম্বর বাদুর এনএসজি-হাবটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। সিকিম ও উত্তরবঙ্গে ভূকম্পের জেরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বোধন স্থগিত রাখেন। খুব শিগগিরই অনুষ্ঠানটি হবে বলে আজ জানিয়েছেন মেধেকর। |