|
|
|
|
স্মৃতি উস্কে শহর দেখাতে পথে নামবে দোতলা বাস |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
কলকাতার রাজপথে ফের দোতলা বাসের ‘নস্ট্যালজিয়া’। এক ধাপ এগিয়ে সেই বাস আবার ছাদ-খোলা। সেই খোলা ছাদে পাতা আরামচেয়ারে বসে ঘুরে আসা যাবে ভিক্টোরিয়া থেকে শহিদ মিনার, জাদুঘর থেকে চিড়িয়াখানা, কিংবা কালীঘাট থেকে মার্বেল প্যালেস।
কলকাতাকে লন্ডনের আদল দেওয়ার কথা আগেই ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শহরের পর্যটনকে নতুন মাত্রা দিতে লন্ডনের ধাঁচের ছাদ খোলা দোতলা বাস এ বার চিন থেকে নিয়ে আসছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। পর্যটনমন্ত্রী রচপাল সিংহ জানিয়েছেন, দু’টি বাস আপাতত তৈরি হয়ে গিয়েছে। এক-একটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা। ব্যাটারিতে চলা সেই বাস কিছু দিনের মধ্যেই জাহাজে চেপে কলকাতায় চলে আসবে। অর্থাৎ, এ বার শীতের কলকাতায় পর্যটক টানতে পর্যটন বিভাগের তুরুপের তাস হতে চলেছে চিনে তৈরি ছাদ-খোলা সেই দোতলা বাসই। প্রসঙ্গত, খাস ব্রিটেনেও ২০১২ সালের অলিম্পিকের জন্য দোতলা বাস রফতানি করছে চিন। |
|
কলকাতায় প্রথম দোতলা বাস চলেছিল গত শতাব্দীর দুইয়ের দশকের শেষ দিকে। ১৯৮৫ সালে বাম সরকারের আমলেও এক সঙ্গে দুশোর বেশি ডবল-ডেকার বাস কেনা হয়। কিন্তু তার পরে সেগুলি আর চালানো হয়নি। উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধীরে ধীরে কলকাতার রাস্তা থেকে উধাও হয়ে যায় সেই সব বাস। তার পরেও কিছু দিন দোতলা বাসে ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার তৈরি করে স্মৃতিটুকু টিকিয়ে রাখার চেষ্টা হয়েছিল। তবে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে কলকাতাকে তার হারিয়ে যাওয়া দোতলা বাস শেষ পর্যন্ত ফেরত দিতে চলেছে।
রচপাল বলেন, “আপাতত রোজকার যাত্রী পরিবহণে বাসগুলি ব্যবহার হবে না। ওই বাসে শুধু পর্যটকদের কলকাতা ঘোরানো হবে। বাসের নীচের তলা হবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। পরে আরও ১০টি বাস চিন থেকে আনা হবে।”
দোতলা বাসের সংখ্যা বেশি হয়ে গেলে কোনও একটি জায়গায় পর্যটকের বেশি ক্ষণ থাকার ইচ্ছা হলে তিনি একটি বাস ছেড়েও দিতে পারবেন। ওই টিকিটেই এক ঘণ্টা বা দু’ঘণ্টা পরে অন্য বাস ধরতে পারবেন বলেও পর্যটন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। বাসগুলির গায়ে নানা রকম ছবি এঁকে সাজানো হবে বলেও দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ইউরোপ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে দোতলা বাস যাত্রী পরিবহণের অন্যতম মাধ্যম। তবে পর্যটনের জন্য, অর্থাৎ পর্যটকদের শহর ঘোরানোর জন্য লন্ডন-সহ বিভিন্ন জায়গায় ছাদ-খোলা দোতলা বাসকেই পছন্দ করা হয়েছে। এ বার সেই তালিকায় কলকাতাও জায়গা পেতে চলেছে।
দোতলা বাস সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “ছেলেবেলায় কলকাতায় দোতলা বাস চড়তাম। সুযোগ পেলে নস্ট্যালজিয়ার কারণে হয়তো আবার উঠব। কলকাতাকে লন্ডনের মতো করতে ছাদ ছাড়া দোতলা বাস অবশ্যই প্রয়োজন। তবে তার আগে দরকার রাস্তাঘাটের সংস্কার। না হলে পর্যটকেরা বাস থেকে কী দেখবেন? শহরময় আবর্জনা তো আর ঘুরিয়ে দেখানোর জিনিস নয়।” এ প্রসঙ্গে একমত সুচিত্রা ভট্টাচার্যও। তাঁর মতে, “বিদেশের মতো এখানেও নানা রঙের দোতলা বাস চললে বেশ সুন্দর দেখাবে কলকাতাকে। আবার দোতলা বাসে চেপে শহরটা ঘুরতে পারলে খুব ভাল লাগবে। কিন্তু তার আগে যে সব দ্রষ্টব্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হবে, সেগুলি পরিষ্কার করতে হবে। সারাতে হবে রাস্তাও। ভিন্ দেশের কোনও বন্ধুকে বাসে চড়িয়ে শহর দেখাতে গিয়ে যেন নিন্দা শুনতে না হয়।”
শুধু দোতলা বাসই নয়, এর পাশাপাশি উত্তর কলকাতার উল্লেখযোগ্য দ্রষ্টব্য জায়গাগুলি ঘোরানোর জন্য দু’টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভল্ভো বাসের ব্যবস্থা করেছে পর্যটন দফতর। এই ‘সুতানুটি ভ্রমণ’-এ জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, বিবেকানন্দের বাড়ি, বিদ্যাসাগরের বাড়ি, কলেজ স্ট্রিট, থিয়েটার পাড়া, মল্লিক বাড়ি, শোভাবাজার রাজবাড়ির মতো পুরনো কলকাতার গন্ধমাখা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে আসার সুযোগ মিলবে। |
|
|
|
|
|