|
|
|
|
শিল্পমহলের সঙ্গে আজ মুখ্যমন্ত্রীর সৌজন্য-কথা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
প্রায় চার মাস বাদে আজ, সোমবার আবার শিল্পপতি, শিল্পোদ্যোগী, ব্যবসায়ীদের মুখোমুখি হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার প্রায় এক মাসের মধ্যে (গত ১৮ জুন) বাংলাকে ‘শিল্প-বাণিজ্যে’ সমৃদ্ধ করে তুলতে রাজ্যের প্রথম সারির শিল্পকর্তা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন মমতা। প্রধানত তাঁদেরই সঙ্গে আজ সন্ধ্যায় বালিগঞ্জ পার্কে মুখ্যমন্ত্রীর সাক্ষাৎ হওয়ার কথা। রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেছেন, “বিজয়া ও আসন্ন দীপাবলিকে সামনে রেখে এটা সৌজন্যমূলক সমাবেশ।” গত বছরও এই বালিগঞ্জ পার্কেই রাজ্যের ব্যবসায়ী ও শিল্প জগতের শীর্ষ ব্যক্তিদের নৈশভোজে আপ্যায়িত করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা। তবে এ বার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতার শিল্প-বাণিজ্য কর্তাদের ‘আপ্যায়ন’ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। আজকের অনুষ্ঠানে প্রথামাফিক বক্তৃতা বা আলোচনার কর্মসূচি না-থাকলেও পারস্পরিক (সরকার ও শিল্প-বাণিজ্য জগৎ) মত বিনিময়ের সম্ভাবনা আছে। |
এই অনুষ্ঠানের প্রধান আয়োজক পার্থবাবুই। শিল্পমন্ত্রী রবিবার জানিয়েছেন, সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, সঞ্জয় বুধিয়া, হর্ষ নেওটিয়া, জয়ন্ত রায়, এস কে রায় থেকে শুরু করে বণিকসভার প্রতিনিধি, কোল ইন্ডিয়া-সহ কেন্দ্র ও রাজ্যের শিল্প-বাণিজ্য বিভিন্ন সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের আজকের আসরে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন পার্থবাবু। আমন্ত্রিতের সংখ্যা প্রায় ৩০০। টাটা গোষ্ঠীর অন্যতম কর্তা (যিনি একটি বণিক-সভারও প্রাক্তন সভাপতি)
সন্দীপন চক্রবর্তীকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সিঙ্গুর আইন নিয়ে টাটাদের করা মামলায় হাইকোর্টে প্রাথমিক ভাবে জয় পেয়েছে মমতার সরকার। তার পরে তাঁর সরকারের তরফে এই ‘সৌজন্য’ যথেষ্ট ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই প্রশাসনিক ও শিল্প মহলের একাংশের মত।
গত বছর মমতা বিজয়ার পরে শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ করেছিলেন, তার প্রেক্ষাপট ছিল আজকের তুলনায় অনেকটাই আলাদা। সিঙ্গুর থেকে টাটাদের ন্যানো প্রকল্প গুটিয়ে গুজরাতের সানন্দে নিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে সে দিন শিল্প-বাণিজ্য কর্তাদের কাছে মমতা একটা ‘বার্তা’ পৌঁছনোর চেষ্টা করেছিলেন তিনি ‘শিল্প-বিরোধী’ নন। কৃষিকে বাঁচিয়েই তিনি রাজ্যে শিল্পের প্রসার চান। আর এ বারে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে মমতার সরকার যে নতুন জমি-নীতি ঘোষণা করেছে, তাতে শিল্পের জন্য জমি কেনার দায়িত্ব শিল্পপতিদেরই দেওয়া হয়েছে। এর ফলে নিজেরা জমির ব্যবস্থা করে বড় শিল্প গড়তে শিল্পপতিরা কতটা উৎসাহিত হবেন, তা নিয়ে শিল্প মহলের একাংশে কিছু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এই প্রেক্ষিতে শিল্প ও বাণিজ্য জগতের ‘আস্থা’ অর্জনও মমতার এ বারের ‘সৌজন্য’-আসরের অন্যতম উদ্দেশ্য বলে মনে করা হচ্ছে।
পার্থবাবুর কথায়, “গত বছর ওই অনুষ্ঠানের সময়ে আমরা রাজ্যে বিরোধী ছিলাম। বিরোধী দল সম্পর্কে সেই সময়ে রাজ্যের তৎকালীন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার শিল্প ও বাণিজ্য মহলকে একটা ভ্রান্ত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। সরকার বলতে চেয়েছিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিল্প-বিরোধী। কিন্তু এটা যে কত অসত্য প্রচার, তা নেত্রী বারবার বণিক-সভাগুলির কাছে গিয়ে বলেছেন। আমরা আমাদের অবস্থান শিল্পপতি, বিনিয়োগকারীদেরও জানিয়েছি।” পশ্চিমবঙ্গে ‘পরিবর্তনে’র পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা যে রাজ্যে শিল্প ও বাণিজ্যের প্রসারে উদ্যোগী ভূমিকা নিয়েছেন, তা বোঝাতে গিয়ে শিল্পমন্ত্রী বলেন, “শিল্প দফতরের যে কোর কমিটি করা হয়েছে, সেখানে রাজ্যের বিশিষ্ট শিল্পপতি, শিল্পোদ্যোগী ও ব্যবসায়ীদেরও রাখা হয়েছে। রাজ্যে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের প্রসারের লক্ষ্যে স্যাম পিত্রোদার মতো বিশেষজ্ঞকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।” রাজ্যের শিল্প-বাণিজ্যে, বিশেষত বিনিয়োগ বাড়াতে তাঁদের সহযোগিতা যে প্রয়োজন, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে নানা অনুষ্ঠানেই শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের কাছে মমতা সেই কথা বলেন। রাজ্যের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে, শিল্পের নানা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে শিল্পপতি, বিনিয়োগকারীদের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা দিতেও প্রস্তুত মমতা-সরকার। শিল্প-বাণিজ্য জগতের সঙ্গে মমতা-সরকারের এই ‘সুসম্পর্ক’কে আরও দৃঢ় করতেই এই অনুষ্ঠান বলে সংশ্লিষ্ট মহলের ব্যাখ্যা। |
|
|
|
|
|