‘অবস্থা খারাপ’ জানিয়ে প্রসূতিকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছিল মহকুমা হাসপাতাল।
তারা আবার ‘মাসখানেকের মধ্যে প্রসব হবে না’ বলে ছুটি দিয়ে দেয় বলে অভিযোগ।
মাঝপথে প্রসব যন্ত্রণা। শেষমেশ সেই কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ফিরেই স্বাভাবিক প্রসব হল প্রসূতির। ঘুরপাক খেয়ে হয়রান বৃহস্পতিবার প্রসূতির বাড়ির লোক দুই হাসপাতালেরই চিকিৎসক ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন। গত সোমবার রাতে প্রসব বেদনা নিয়ে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মঙ্গলকোটের খেঁড়ুয়ার নমিতা থান্দার। তাঁর শ্বশুরবাড়ি হুগলির ভদ্রেশ্বরে। নমিতাদেবীর দাদা অশোক থান্দার জানান, মঙ্গলবার লেবার রুমে নিয়ে যাওয়ার পরে এক চিকিৎসক জানান, প্রসূতির অবস্থা ভাল নয়। তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ‘রেফার’ করেন তিনি। রাত ১০টা নাগাদ অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে নমিতাদেবীকে বর্ধমানে নিয়ে যান তাঁরা। তাঁকে ভর্তিও করে নেওয়া হয়। নমিতাদেবীর অভিযোগ, “বুধবার সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ এক চিকিৎসক পরীক্ষা করে বলেন, প্রসব হতে মাসখানেক দেরি আছে। তার পরে একটি ছোট সাদা কাগজে দু’টি ওষুধের নাম লিখে আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।”
অশোকবাবু জানান, হাসপাতাল থেকে ছাড়ার পরে তাঁরা বোনকে নিয়ে বাসে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন। কিন্তু মাঝরাস্তায় নমিতাদেবীর প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়। তড়িঘড়ি বাস থেকে নামিয়ে তাঁকে মঙ্গলকোটের সিঙ্গত গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানকার চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানান, শীঘ্রই প্রসব হবে। দুপুর ২টো নাগাদ সেখান থেকে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হলে বিকেল সাড়ে ৪টেয় স্বাভাবিক প্রসব হয় নমিতাদেবীর। অশোকবাবুর ক্ষোভ, “চিকিৎসকদের জন্য হয়রান হতে হল। রাস্তায় কোনও অঘটন ঘটলে তার দায় কে নিত?”
এ দিন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তন্ময় মুখোপাধ্যায়ের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান অশোকবাবু। অভিযোগের প্রতিলিপি পাঠিয়েছেন জেলাশাসক, কাটোয়ার মহকুমাশাসক, কাটোয়া হাসপাতালের সুপারের কাছেও। তন্ময়বাবু বলেন, “আমার কাছে ফ্যাক্সবার্তা মারফত অভিযোগ এসেছে। কিন্তু লেখাটি বিশেষ স্পষ্ট নয়। ওঁদের আর এক বার অভিযোগপত্র পাঠাতে অনুরোধ করেছি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।” বর্ধমান মেডিক্যালের ডেপুটি সুপার তাপস ঘোষ বলেন, “শুক্রবার প্রসূতি বিভাগের প্রধানকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এমন ভুল কী ভাবে হল, তা জানতে চাওয়া হবে।” জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “গুরুতর অভিযোগ। শুক্রবার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গড়া হবে। অন্য হাসপাতালে পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রসূতি মাতৃযান সুবিধা পেলেন না কেন, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে।” |