|
|
|
|
অবরোধে পণ্ড ত্রিপক্ষ বৈঠক |
সঞ্জয় চক্রবর্তী • শিলিগুড়ি |
কিসানগঞ্জে ট্রেন অবরোধের জেরে ভেস্তে গেল চা শ্রমিকদের মজুরি চুক্তি নিয়ে আয়োজিত ত্রিপাক্ষিক বৈঠক। বৃহস্পতিবার কলকাতায় কাঁকুকগাছিতে স্টেট লেবার ইন্সস্টিটিউটে ওই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। এদিন সকাল ১১টা থেকে বৈঠক শুরুর কথা ছিল। যেহেতু রাজ্যের সমস্ত চা বাগান উত্তরবঙ্গেই, তাই ওই বৈঠকে যোগ দিতে বুধবার সন্ধ্যায় উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নের নেতারা রাতের ট্রেনে চড়েছিলেন। কিসানগঞ্জে ট্রেন অবরোধের জেরে শেষ পর্যন্ত গভীর রাতে ট্রেন ইউনিয়ন নেতারা স্টেশন ছেড়ে বাড়িতে ফিরতে বাধ্য হন। এই পরিস্থিতিতে শ্রম দফতর কালী পুজোর পরে ফের ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের পরিকল্পনা নিয়েছে। শ্রম দফতরের উত্তরবঙ্গের যুগ্ম শ্রম কমিশনার মহম্মদ রিজওয়ান বলেন, “ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে চা বাগান মালিক প্রতিনিধি এবং ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের তো উপস্থিত থাকতে হবে। উত্তরবঙ্গে ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় তো কেউই আসতে পারেননি। বাধ্য হয়েই ত্রিপাক্ষিক বৈঠক পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী ৩ নভেম্বর পরবর্তী বৈঠক হতে পারে বলে ভাবা হয়েছে। সকলের সঙ্গে আলোচনা করে শুক্রবারের মধ্যে পরবর্তী বৈঠকের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হবে।” রাজ্যে প্রতি তিন বছর চা শ্রমিকদের মজুরি চুক্তি হয়। ২০০৮ সালের পরে চলতি বছরের মার্চ মাসে পরবর্তী চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও মজুরির হার নিয়ে মালিক-শ্রমিক ঐকমত্য না-হওয়ায় বিষয়টি ঝুলেই রয়েছে। মার্চ মাস থেকে এ পর্যন্ত সরকারি ভাবে ৪টি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে। ডিফেন্স কমিটির অব প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্স সূত্রে জানা গিয়েছে, শেষ বৈঠকটি হয়েছে গত ৪-৫ অগস্ট। কিন্তু মালিকপক্ষ শ্রমিকদের ৮২ টাকার বেশি মজুরি দিতে রাজি না-হওয়ায় বার বার বৈঠক ভেস্তে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সমস্যা মেটাতে আসরে নেমেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব ট্রেড ইউনিয়ন এবং মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পরে দুর্গা পুজোর পরে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের দিন স্থির হয়েছিল। চলতি মাসে উত্তরবঙ্গে সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই চা শ্রমিকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে চা বাগানের বাস্তব পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেন। রাজ্য সরকার হস্তক্ষেপ করায় এই বৈঠকেই মজুরি চুক্তি নিয়ে বিরোধ মিটে যাবে বলে আশা করেছিলেন সকলেই। কিন্তু উত্তরবঙ্গে ট্রেন চলাচল বিপযর্স্ত হয়ে পড়ায় আপাতত বৈঠক পিছিয়ে গিয়েছে। টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার উত্তরবঙ্গ শাখার সচিব রণজিৎ দত্ত বলেন, “বুধবার যে ঘটনা ঘটেছে তাতে বৈঠক পিছিয়ে দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। যাঁরা বৈঠক করবেন তাঁরাই তো কলকাতায় পৌঁছতে পারেননি। তবে নভেম্বরে বৈঠক হলে সমস্যা মিটবে বলে আশা করছি।” ডিফেন্স কমিটির অব প্ল্যান্টেশন ওয়াকার্সের সম্পাদক সমীর রায় বলেন, “বুধবার আমরা ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা রাত প্রায় সাড়ে১২টা পর্যন্ত নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে অপেক্ষা করেছি। তার পরে ফিরে আসতে বাধ্য হই। তবে পরবর্তী বৈঠকে মজুরি চুক্তি নিয়ে ঐক্যমত হবে বলে আশা করছি।” সিটুর দার্জিলিং জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গৌতম ঘোষ অবশ্য বুধবার ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, “সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ট্রেন লাইন অবরুদ্ধ করে আন্দোলন মানা যায় না। রেলের আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিল। তাহলে হয়তো এ বারই ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে সমাধানের রাস্তা বার হত। যাই হোক, সমস্যা মিটবে বলে আশাবাদী।” |
|
|
|
|
|