|
|
|
|
উন্নয়ন চেয়ে মমতাকে বিজয়া |
অনির্বাণ রায় • জলপাইগুড়ি |
বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার জলবন্টন নিয়ে ‘দৃঢ় অবস্থান’ নেওয়া এবং পিছিয়ে পড়া উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে পৃথক দফতর গঠনের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানিয়ে ‘বিজয়া’ সারলেন বিধায়ক তথা কংগ্রেস নেতা দেবপ্রসাদ রায়। বুধবার চালসার পূর্ত দফতরের বাংলোয় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দেবপ্রসাদবাবু। সেই সঙ্গে উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের জন্য ১১ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপিও দিয়েছেন। দেবপ্রসাদবাবুকে বিজয়ার পাল্টা শুভেচ্ছা জানিয়ে কলকাতায় ফিরে গিয়ে দাবিগুলি খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। উত্তরবঙ্গে হাতি মৃত্যু ঠেকাতে বিকল্প রেলপথ তৈরি থেকে শুরু করে ভারত-ভুটান সীমান্তের নদী নিয়ন্ত্রণ, জলপাইগুড়ি জেলার প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সংযুক্তিকরণ, পর্যটন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি, আদিবাসীদের একাংশের মধ্যে তৈরি হওয়া অস্থিরতা প্রশমনে সংবিধানের পঞ্চম তফশিলের পরীক্ষামূলক ব্যবহার-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয় রয়েছে দাবিপত্রে। বিধায়ক বলেন, “বুধবার মুখ্যমন্ত্রীকে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাতে চালসায় গিয়েছিলাম। একটি স্মারকলিপিও দিয়েছি। সেখানে উত্তরবঙ্গ তথা জলপাইগুড়ি জেলার সার্বিক পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য প্রতিটি বিষয়ে পৃথক প্রস্তাব দিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী সবগুলিই প্রস্তাব খুঁটিয়ে দেখে পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছেন।” মাস কয়েক আগে বাংলেদেশের সঙ্গে তিস্তা জলবন্টন চুক্তি নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপোড়েন চলাকালীন দিল্লির ঘনিষ্ট কংগ্রেস নেতা দেবপ্রসাদবাবু মুখ খুলতে চাননি। বুধবার মমতা বন্দোপাধ্যায়কে দেওয়া সাত পাতার স্মারকলিপির প্রথম অনুচ্ছেদেই তিস্তার জল বন্টন নিয়ে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ‘দৃঢ় অবস্থানকে’ স্বাগত জানিয়ে, উত্তরবঙ্গে তিস্তা প্রকল্পের রূপায়ণে ঢিলেমির জন্য অতীতের বাম সরকারের কার্যকলাপকে দুষেছেন দেবপ্রসাদবাবু।
|
দেবপ্রসাদ রায়ের ১১ আর্জি-প্রস্তাব |
১) উত্তরবঙ্গের কৃষি অর্থনীতির মূল স্তম্ভ তিস্তা প্রকল্পের দ্রুত রূপায়ণের জন্য আইনি জটিলতা নিরসনে রাজনৈতিক আলোচনা শুরু করতে হবে।
২) বন্যা নিয়ন্ত্রনে ভারত-ভুটান নদী কমিশন গঠন করে, সীমান্তবর্তী নদী নিয়ন্ত্রণে ‘রিভার ম্যানেজম্যান্ট ইন বর্ডার এরিয়া’র কাজকর্মে কেন্দ্রের কাছে অর্থ দাবি।
৩) ডুয়ার্সে হাতি মৃত্যু ঠেকাতে রানিনগর থেকে নিউ কোচবিহার পর্যন্ত ডবল লাইন করে জঙ্গলকে পাশ কাটিয়ে বিকল্প রেলপথ।
৪) আলিপুরদুয়ারে তপসিখাতা ভেষজ উদ্যান প্রকল্প দ্রুত শেষ করার দাবি।
৫) চা বাগানের অতিরিক্ত জমি আদিবাসী চা শ্রমিকদের মধ্যে বণ্টন।
৬) আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের হিন্দিতে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
৭) আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় সংবিধানের পঞ্চম তফসিলের পরীক্ষামূলক প্রণয়ন।
৮) জঙ্গল পর্যটন ও সাধারণ পর্যটনকে এক করে ইকো পর্যটনের প্রসার।
৯) উত্তরবঙ্গে স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি, জলপাইগুড়িতে বেসরকারি উদ্যোগে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনে সরকারি সাহায্য দাবি।
১০) জলপাইগুড়ির প্রতিটি পঞ্চায়েতকে সংযুক্ত করার জন্য প্রতিটি নদীতে সেতু তৈরি।
১১) উত্তরবঙ্গে জাতীয় সড়কগুলির হাল ফেরানো। |
|
বর্তমান রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের সদ্দিচ্ছার জোরে তিস্তা প্রকল্পের দ্রুত রূপায়ণে আশাবাদী কংগ্রেসের এই বিধায়ক। তিস্তা প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে ৫৪ টি মামলা বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন। প্রকল্পের কাজ দ্রুত সারতে মামলাকারীদের সঙ্গে রাজনৈতিক স্তরে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন দেবপ্রসাদবাবু। তাঁর মতে, মুখ্যমন্ত্রী রাজনৈতিক ভাবে মামলাকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে আদালতের বাইরে সমাধান সুত্র বের করতে পারলে প্রকল্পের কাজে আইনি বাধা থাকবে না। উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক নেতাদের এই দৌত্যের কাজে নিয়োগ করার আর্জি মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন তিনি। একই রকম ভাবে ডুয়ার্সে বারবার ট্রেনের ধাক্কায় হাতি মৃত্যু ঠেকাতে বন দফতর ও রেলের মধ্যে বৈঠক হলেও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেবপ্রসাদবাবু। রাতে ডুয়ার্সের লাইনে ট্রেন চালানোর ‘বাধ্যবাধকতা’ স্বীকার করে রানিনগর থেকে নিউ ময়নাগুড়ি এবং নিউ ময়নাগুড়ি থেকে নিউ কোচবিহার পর্যন্ত ডবল লাইন তৈরি করে জঙ্গলকে ‘বাইপাস’ করে সেই বিকল্প পথে ট্রেন চালানোর প্রস্তাবও রয়েছে স্মারকলিপিতে। ফি বছর বর্ষায় উত্তরবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি এড়াতে ভারত-ভুটান নদী কমিশন গঠন এবং ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের মতো ভারত-ভুটান সীমান্তবর্তী নদীগুলির নিয়ন্ত্রণের জন্য কেন্দ্রের কাছে বরাদ্দ চাওয়ার আর্জি রাজ্য সরকার জানাতে পারে বলে স্মারকলিপিতে জানানো হয়েছে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে যাওয়া জাতীয় সড়কগুলির বেহাল দশা কাটাতে কেন্দ্রকে চাপ দেওয়া, সেই সঙ্গে রাজ্য সরকারেরও নিজের মতো করে উদ্যোগী হওয়ার দাবিও রয়েছে স্মারকললিপিতে। ডুয়ার্সের ভুমিহীন আদিবাসীদের জন্য চা বাগানের অতিরিক্ত জমির ব্যবস্থা করে দেওয়া, আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের জন্য উত্তরবঙ্গের কলেজগুলিতে হিন্দিতে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা, সেই সঙ্গে আদিবাসীদের উন্নয়নে সামিল করতে সংবিধানের পঞ্চম তফসিল যেখানে জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে আদিবাসীদের বিশেষ সংরক্ষণের প্রস্তাব রয়েছে, তা লাগু করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। |
|
|
|
|
|