|
|
|
|
মমতার নির্দেশে পাহাড়ে রাস্তা মেরামতে তৎপরতা |
কিশোর সাহা • শিলিগুড়ি |
‘নিরাপত্তা’ নিশ্ছিদ্র করতে তাঁকে অনেক ঘুরপথে ব্যাংডুবি-মিরিক-সুখিয়াপোখরি দিয়ে দার্জিলিঙে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখান থেকে ডুয়ার্সে যাওয়ার সময়েও ঘুম-তাকদা-মংপু রুটে চালসায় পৌঁছনো হয়েছে তাঁকে। কিন্তু, নিত্য জনতার ভিড়ে মিশে যিনি সুখ-দুঃখের কথা শুনে থাকেন, ঘুরপথে যাতায়াত করানোর আড়ালে ‘আসল ব্যাপার’ ধরে ফেলতে এতটুকুও সময় লাগেনি তাঁর।
কারণ, তাঁর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তাই তিনি পাহাড় থেকে ডুয়ার্স চার দিনের সফরে যে কটি সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে প্রশাসনকে ‘যুদ্ধকালীন তৎপরতায়’ কাজে নামার নির্দেশ দিয়েছেন তার প্রথমেই রয়েছে বেহাল রাস্তার হাল ফেরানোর বিষয়টি। ওই কাজে বিন্দুমাত্র গাফিলতি যে তিনি পছন্দ করবেন না, সেই ‘কড়া বার্তা’ও পৌঁছে গিয়েছে প্রশাসনের কাছে। কোথাকার রাস্তা, কোন দফতরের অধীনে রয়েছে তা নিয়ে ঠেলাঠেলিতে যাতে কাজে দেরি না-হয়, সেই ব্যাপারে সমন্বয়ের নির্দেশ দিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবকে।
পাহাড়ে এখন পর্যটকের ঢল। রাস্তা মেরামত আরও জরুরি হয়ে উঠেছে। তাই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পরে অপেক্ষা না-করে চার দিনের সফর চলাকালীনই জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ, পূর্ত দফতর, পার্বত্য পরিষদ ও এসজেডিএ-র সঙ্গে সমন্বয়ের কাজে নেমে পড়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। ইতিমধ্যেই পার্বত্য পরিষদের প্রশাসক অনিল বর্মার সঙ্গে আলোচনা করে পাহাড়ে রাস্তা দ্রুত সারানো ও পুনর্গঠনের রূপরেখার খসড়াও হয়ে গিয়েছে। গৌতমবাবু বললেন, “বাগডোগরা থেকে শিলিগুড়ি ঢোকার রাস্তার অনেকটা এলাকা বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। পাহাড়ের হিলকার্ট রোড, রোহিণী রোডের হাল ভয়ঙ্কর খারাপ। পাঙ্খাবাড়ির রাস্তাও অনেক জায়গায় খুবই খারাপ। যত দ্রুত সম্ভব ওই সব রাস্তার হাল ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই মতো কাজ শুরু হয়েছে। সব দফতরকে জানিয়ে দিয়েছি, মিলেমিশে কাজটা তাড়াতাড়ি করে ফেলতে হবে। ঠেলাঠেলি বরদাস্ত করা হবে না।” |
|
বেহাল হিলকার্ট রোড। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
বস্তুত, শিলিগুড়ি, দার্জিলিং পাহাড় ও ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকায় রাস্তা বলে যেন কিছু নেই। বাগডোগরা থেকে শিলিগুড়ি ঢোকার রাস্তা অর্থাৎ ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে অসংখ্য গর্ত হওয়ায় নিত্য দুর্ঘটনা ঘটছে। ২০১০ সালে দার্জিলিঙের যাওয়ার মূল রাস্তা হিলকার্ট রোডে পাগলাঝোরার কাছে বিশাল ধস নেমে তা বন্ধ হয়ে যায়। আজও সেই রাস্তা সারানো যায়নি। ফলে শিলিগুড়ি থেকে কার্শিয়াং পর্যন্ত হিলকার্ট রোড বন্ধ। রোহিণী দিয়ে কার্শিয়াং যাওয়া যেত। কিন্তু, ওই রাস্তার সিংহভাগ অংশে পিচ-পাথর নেই! ধুলো উড়ছে অনেক জায়গায়। কোথাও আবার বিপজ্জনক সব গর্ত। ডুয়ার্সের রাস্তারও একই হাল। শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি, ধুপগুড়ি, ফালাকাটা যাতায়াতের রাস্তাও পুরোপুরি বেহাল।
রাস্তা ‘বিপজ্জনক’, তাই ‘নিরাপত্তা’র কারণে মুখ্যমন্ত্রীকে এ বার বাগডোগরা থেকে সোজা ব্যাংডুবি দিয়ে অপেক্ষাকৃত ভাল রাস্তা দিয়ে পাহাড়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ-প্রশাসন। পরে সেখান থেকে ডুয়ার্সেও কিছুটা ভাল রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু, যাতায়াতের পথেই সফরসঙ্গীদের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় মুখ্যমন্ত্রী বারেবারেই খারাপ রাস্তাগুলি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর এক সফরসঙ্গীর কথায়, “অন্য অনেক সমস্যা আছে। কিন্তু, সবার প্রথমে যোগাযোগ ব্যবস্থা মানে যাতায়াতের রাস্তাটা ভাল রাখা যে জরুরি সেটা মুখ্যমন্ত্রী বারেবারেই বলেছেন। গাড়িতে বসেই সে কথা জানিয়ে ক্রমাগত মহাকরণে নির্দেশ পাঠিয়েছেন। দার্জিলিঙে পৌঁছে মোর্চার প্রতিনিধি থেকে শুরু করে প্রশাসনিক অফিসারদেরও সে কথা জানিয়ে কাজে নামতে বলেছেন।”
এই পরিস্থিতিতে জোরকদমে কাজে নামতে বাধ্য হয়েছে প্রশাসন। পার্বত্য পরিষদের প্রশাসক অনিল বর্মা বলেছেন, “পাহাড়ে যাতায়াতের রাস্তাগুলি যে সব দফতরের সারানোর দায়িত্ব, তাদের জরুরি বার্তা পাঠানো হয়েছে। অনেক জায়গায় কাজও শুরু হয়েছে।” শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যও ইতিমধ্যে কয়েক দফায় বৈঠক করেছেন। রুদ্রনাথবাবু বলেন, “এসজেডিএ-এর আওতায় থাকা সব রাস্তা শীতের মধ্যেই পুরোপুরি সারাতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী তেমনই নির্দেশ দিয়েছেন। অফিসার-ইঞ্জিনিয়ারদের ডেকে সে কথা জানিয়ে দিয়েছি। আশা করি সময়ে কাজটা হবে।” |
|
|
|
|
|