প্রায় গোটা মরসুমটা মারকাটারি খেলার পরে শেষবেলায় দম ফুরিয়ে গেল বর্ষার।
পুরো জুন, অগস্ট আর সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৫ দিন অঝোর ধারায় বৃষ্টি হয়েছে। এমনকী, বর্ষার দাপট দেখে একটা সময়ে পুজো-কর্তাদেরও মাথায় হাত পড়েছিল। শেষমেশ পুজো মোটামুটি উতরে গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেই যে বৃষ্টি উধাও হল, আর তার দেখা মিলল না। স্লগ ওভারে এসে সে হাঁফিয়ে গেল।
ফলে ৪ অক্টোবর দুপুরের একপশলা বাদে গত ১৫ দিনে বৃষ্টিই হল না দক্ষিণবঙ্গে।
বর্ষার বিদায়বেলায় তাই চরম অস্বস্তিকর আবহাওয়া। গত দু’সপ্তাহ যাবৎ মাঝেমধ্যে আকাশ মেঘলা করে এলেও বৃষ্টি নামেনি। ঘরে-বাইরে হাসফাঁস অবস্থা। গত বছর ঘাটতি বৃষ্টিতে রাজ্যের দশ-দশটা জেলা খরার কবলে পড়া সত্ত্বেও অক্টোবরের প্রথম পনেরো দিনে মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি হয়েছিল। উত্তুরে বাতাস তাড়াতাড়ি ঢুকে আসায় রাতের দিকে ঠান্ডা ঠান্ডা ভাবও ছিল।
কিন্তু এ বার আগে অতিবৃষ্টি দিয়েও শেষলগ্নে অতি কৃপণের মতো আচরণ করে আমজনতাকে ভুগিয়ে ছাড়ল বর্ষা। বস্তুত কার্পণ্যের ‘বদনাম’ ঘাড়ে নিয়েই বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিদায় নিতে হল তাকে।
বিদায়লগ্নে তার এমন আচরণ কেন?
আবহবিদদেরা ব্যাখ্যা: এই সময়ে মৌসুমি বায়ু দুর্বল থাকে। খুব শক্তিশালী নিম্নচাপ না-হলে দুর্বল মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হতে পারে না। তাই বৃষ্টির জন্য গরম ও ঠান্ডা হাওয়ার সংঘাতের উপরে নির্ভর করতে হয়। বছরের এই সময়টায় পরিমণ্ডলে অল্প অল্প উত্তরের শীতল হাওয়া ঢোকে। তার সঙ্গে গরম বায়ুর সংঘাতে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়, তা থেকেই বৃষ্টি নামে। এ বার সেই শীতল বায়ুস্রোত এখনও অনুপস্থিত। তাই বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হতে পারছে না। বৃষ্টিরও দেখা নেই।
কেন ঢুকতে পারছে না ঠান্ডা হাওয়া? |
অস্বস্তির পারদ |
দিন |
২০১০ |
২০১১ |
(অক্টোবর) |
সর্বোচ্চ * |
সর্বনিম্ন * |
সর্বোচ্চ * |
সর্বনিম্ন * |
৮ |
২৬.৭ |
২৪.৭ |
৩৫.০ |
২৭.০ |
৯ |
২৮.৭ |
২৪.৩ |
৩২.৫ |
২৫.৬ |
১০ |
২৯.৬ |
২৩.২ |
৩৩.৯ |
২৫.৬ |
১১ |
৩২.২ |
২৩.৬ |
৩৩.৮ |
২৫.৬ |
১২ |
৩৩.১ |
২৫.০ |
৩৪.৬ |
২৬.৭ |
১৩ |
৩২.৬ |
২৪.৭ |
৩৪.১ |
২৬.০ |
* তাপমাত্রা, ডিগ্রি সেলসিয়াসে |
|
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “মায়ানমার ও বাংলাদেশ উপকূলে পুজোর সময় থেকে একটা নিম্নচাপ অক্ষরেখা রয়েছে। যার ফলে বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প ঢুকছে। তা আবার উত্তুরে বাতাসের পথে বাধার সৃষ্টি করছে।”
এবং ওই অত্যধিক জলীয় বাষ্পের কারণেই অস্বস্তিসূচক বেড়ে যাচ্ছে। ঘেমেনেয়ে একশা হতে হচ্ছে দিনভর।
গোটা জুন, অগস্ট ও সেপ্টেম্বরের বেশির ভাগটায় ঘন ঘন নিম্নচাপ অক্ষরেখার দরুণ জাঁকিয়ে বৃষ্টি নেমেছে দক্ষিণবঙ্গে। এ বারের নিম্নচাপ অক্ষরেখা থেকে বৃষ্টি হচ্ছে না কেন?
আবহবিদেরা বলছেন, এটি পরিমণ্ডলে জলীয় বাষ্প ঢোকাতে সমর্থ হলেও একেবারে দুর্বল হয়ে পড়া মৌসুমি অক্ষরেখাকে কোনও ভাবেই সক্রিয় করতে পারেনি। তাই বৃষ্টি হচ্ছে না। ওঁদের বক্তব্য: বর্ষা এ তল্লাট থেকে পাকাপাকি ভাবে বিদায় নেওয়ায় এখন পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টি নামাতে পারবে শুধুমাত্র শক্তিশালী কোনও নিম্নচাপ অক্ষরেখা বা নিম্নচাপ কিংবা দুই বায়ুপ্রবাহের সংঘাত। মায়নমার-বাংলাদেশ উপকূলবর্তী নিম্নচাপটির শক্তিবৃদ্ধির কোনও সম্ভাবনা আছে কি?
আলিপুরের কর্তারা তেমন মনে করছেন না। বরং তাঁদের পূর্বাভাস: অক্ষরেখাটি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়বে। তবে তার আগে সে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে কিছুটা বৃষ্টি দিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে নিয়ে আসবে শীতের বার্তাও। কী ভাবে?
আবহবিদেরা বলছেন, নিম্নচাপ অক্ষরেখা দুর্বল হয়ে গেলেই বাতাসে ঢুকে পড়বে শীতল উত্তুরে বাতাস। বাড়বে গরম ও ঠান্ডা হাওয়ায় টক্করের সম্ভাবনা। যার ফলে স্থানীয় ভাবে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়ে নামবে বৃষ্টি।
আর তারই জেরে ধীরে ধীরে ঠান্ডার আমেজ আসবে। ঘাসের ডগায় দেখা যাবে শিশিরবিন্দু। |