জঙ্গলমহলে স্থায়ী অফিস তৈরির জন্য বাম আমলেই জমির আর্জি জানিয়েছিল সিআরপিএফ। নতুন সরকার আসার পরেও স্বরাষ্ট্র দফতর ও ভূমি দফতরকে একাধিক চিঠি দিয়েছে তারা। কিন্তু সব মিলিয়ে ১০ মাস কেটে গেলেও জমি পায়নি সিআরপিএফ। সেখানকার যা পরিস্থিতি তাতে যৌথ বাহিনী আরও কিছু দিন থাকবে ধরে নিয়েই ওই বন্দোবস্ত চাইছে তারা।
জঙ্গলমহলে এখন ৩৫ কোম্পানি সিআরপিএফ আছে। এর মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরেই ৩১ কোম্পানি এবং পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায় দুই কোম্পানি করে বাহিনী আছে।
এর বাইরে মাওবাদী দমনে সিআরপিএফের বিশেষ বাহিনী কোবরা আছে এক ব্যাটেলিয়ন। রাজ্য সরকার তাদের জন্য জঙ্গলমহলজুড়ে বেশ কিছু শিবির করে দিলেও অভিযানের সুবিধার জন্য স্থায়ী অফিস চাইছে সিআরপিএফ।
কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক কর্তা বলেন, “অভিযান ছাড়াও এত জওয়ানের অফিস সংক্রান্ত বহু কাজ থাকে। এখন কলকাতায় বসে সেগুলো করতে হচ্ছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে অফিস হলে ওই সমস্যা অনেকটাই কমবে।”
স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর, মেদিনীপুর শহরঘেঁষা এলাকায় ৫৩ একর জমি চেয়েছে সিআরপিএফ। ওই বাহিনীর আইজি বিবেক সহায় বলেন, “দুই ব্যাটেলিয়নের স্থায়ী ব্যারাক ছাড়াও সেখানে ডিআইজি (অপারেশন)-এর অফিস তৈরি হবে। জঙ্গলমহলে অভিযানের দায়িত্ব ওই অফিসারের উপরেই॥
সিআরপিএফ জমি চেয়েছে ঝাড়গ্রামেও। সেখানে ১০ একর জমি পেলে আরও এক ব্যাটেলিয়নের স্থায়ী অফিস ও ব্যারাক তৈরি করতে চায় তারা। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা বলেন, “ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলা হওয়ার পরে ওই মহকুমার প্রশাসনিক গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। ওখান থেকে জঙ্গলমহলের অভিযান নিয়ন্ত্রিত হয়। তাই কৌশলগত কারণেই ঝাড়গ্রামে জমি চেয়েছে সিআরপিএফ।”
পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত বলেন, “জমি চেয়ে সিআরপিএফের আবেদনপত্র আমি মহাকরণে ভূমি দফতর ও স্বরাষ্ট্র দফতরে পাঠিয়ে দিয়েছি। সেখান থেকে এখনও কোনও জবাব আসেনি।” রাজ্যের ভূমিসচিব রামদাস মিনা বলেছেন, “স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে এ রকম একটা প্রস্তাব এসেছে বলে জানি। কিন্তু ওরা এখনও আমাদের কিছু জানায়নি।” আর স্বরাষ্ট্র দফতরের বক্তব্য, সিআরপিএফ পশ্চিম মেদিনীপুরের কেরানিচটি এলাকায় জমি চেয়েছে। ঝাড়গ্রামেও চেয়েছে। কিন্তু কোথায় ওদের জমি দেওয়া হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
মহাকরণ সূত্রের খবর, সিআরপিএফের আইজি বিবেক সহায় সম্প্রতি রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব জ্ঞানদত্ত গৌতমকে চিঠি লিখে পুরুলিয়ার ছররায় ২০০ একর জমি চেয়েছে। সেখানে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের ৬০০ একর জমি আছে। আইজি বলেন, “পুরুলিয়ায় মাওবাদী প্রভাব বাড়ছে। অযোধ্যা পাহাড়ে তাদের একাধিক প্রশিক্ষণ শিবির রয়েছে। ছররায় জমি পেলে এক ব্যাটেলিয়ন বাহিনীর স্থায়ী অফিস ছাড়াও অন্ধ্রপ্রদেশের গ্রে হাউন্ড-এর ধাঁচে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলার পরিকল্পনা রয়েছে।”
তবে কোবরা-র জন্য স্থায়ী ব্যারাক তৈরির জমি পেয়েছে সিআরপিএফ। শালবনিতে ১৮০ একর জমির উপরে তৈরি হচ্ছে ওই ভবন।
পুলিশ সূত্রের খবর, জঙ্গলমহলে কোবরা-র ১০টি ‘অ্যাসল্ট গ্রুপ’ ছিল। অভিযান বন্ধ থাকায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশে চারটি দলকে জরুরি ভিত্তিতে ঝাড়খণ্ডের বোকারোয় পাঠিয়ে দিয়েছে সিআরপিএফ। কেন্দ্রীয় বাহিনীর আরও একটি ব্যাটেলিয়নকে ওড়িশায় পাঠানো টানাটানি চলছে রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে।
এক পুুলিশকর্তা বলেন, “ওড়িশায় অতিরিক্ত তিন ব্যাটেলিয়ন বাহিনী পাঠাতে চায় কেন্দ্র। তার জন্য এই রাজ্যে থেকে এক ব্যটেলিয়ন কেন্দ্রীয় বাহিনী তুলে নিতে চায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। রাজ্য তাতে আপত্তি জানালে আপাতত ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ওই নির্দেশ স্থগিত রেখেছে কেন্দ্র।” এর মধ্যেই জঙ্গলমহলে আরও তিন ব্যাটেলিয়ন কেন্দ্রীয় বাহিনী লাগবে বলে রাজ্যের কাছে আর্জি জানিয়েছে সেখানকার পুলিশ। |