পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রয়োজনে ‘একক ভাবে’ লড়াইয়ের জন্য দলীয় কর্মীদের প্রস্তুত থাকার ইঙ্গিত দিলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব।
মালদহ কলেজ অডিটোরিয়ামে জেলা কংগ্রেসের ডাকে বৃহস্পতিবার ত্রিস্তর পঞ্চায়েত কনভেনশনে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য তৃণমূলের নাম না-করেই বলেন, “আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে কারও জন্য প্রতীক্ষা করব না। আর যদি প্রতীক্ষা করতেই হয়, তবে সেটা হবে রাজনৈতিক কৌশল।” ওই কনভেনশন মঞ্চে প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যেখানে আমাদের শক্তি আছে, আগামী পঞ্চায়েত নিবার্চনে সেখানে কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়ব না!”
বস্তুত, পঞ্চায়েতের মতো নির্বাচনে যে কোনও রাজনৈতিক শিবিরেই জোট হওয়া বা না-হওয়া স্থানীয় স্তরেই ঠিক হয়ে থাকে। বৃহত্তর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের সঙ্গে স্থানীয় স্তরের সমীকরণের প্রায়শই কোনও সম্পর্ক থাকে না। সেই দিক থেকে দলীয় কর্মীদের প্রতি প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের বার্তায় খুব ‘অভিনব’ কিছু নেই। তবে কংগ্রেস যে হেতু তৃণমূলের সঙ্গে এখন রাজ্যের জোট সরকারের শরিক, তাই এই ইঙ্গিতের অন্য ‘তাৎপর্য’ও রয়েছে বলে জোট-শিবিরের একাংশের অভিমত।
কলকাতায় ২০ নভেম্বর প্রদেশ কংগ্রেস পঞ্চায়েত নিয়ে রাজ্য সম্মেলনের আয়োজন করেছে। সেই সম্মেলনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই জেলায় জেলায় সম্মেলন শুরু করেছে তারা। মালদহের সম্মেলনে এ দিন মান্নান থেকে শুরু করে রাজ্যের মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন-সহ জেলা নেতারা কংগ্রেসকে ‘ভাঙানো’র অভিযোগ তুলে তৃণমূলকে তুলোধোনা করেন। তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামার হুমকিও দেন। মান্নান দাবি করেন, “এ বার বিধানসভা নিবার্চনে জোটের কোনও যুক্তি (লজিক) ছিল না। যেখানে তৃণমূলের স্কুল কমিটি জেতার ক্ষমতা ছিল না, সেখানেও জোর করে আসন নিয়েছে! তা সত্ত্বেও জোট করেছি একমাত্র সিপিএমকে হারাতে। তৃণমূল এখন চেষ্টা করছে কংগ্রেসকে খতম করার!”
মান্নানের স্পষ্ট বক্তব্য, “জোট করা মানে আত্মসমর্পণ নয়। জোট করেছি মানুষের স্বার্থে। সাধারণ মানুষের স্বার্থ যদি ক্ষুণ্ণ হয়, তবে আমরা তার বিরোধিতা করব। রাস্তায় নামব।” মন্ত্রী সাবিনাও অভিযোগ করেন, “তৃণমূল জোট-ধর্ম পালন করছে না। পদের লোভ দেখিয়ে কংগ্রেসিদের দলে টানছে।” মন্ত্রী হয়েও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার ব্যাপারে তাঁর যুক্তি, “তৃণমূল যদি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন করতে পারে, তবে আমরা কেন আন্দোলন করতে পারব না?” পঞ্চায়েতের কাজে মানুষ কতটা উপকৃত হচ্ছেন, সে বিষয়ে দলীয় কর্মীদের নজর রাখার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা ও মন্ত্রী আবু হেনা এবং আবু নাসের (লেবু) খান চৌধুরী। ছিলেন বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীও।
ভিড় উপচে-পড়া ওই সভায় তৃণমূলের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের বিরুদ্ধে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিও অভিযোগ করেন, “কংগ্রেস পরিচালিত জেলা পরিষদ নিয়মিত টাকা পাচ্ছে না। এখনও পর্যন্ত উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের একটি টাকাও মালদহ ও উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদ পায়নি। সময়মতো টাকা না-পাঠানোয় কংগ্রেস পরিচালিত জেলা পরিষদ উন্নয়নের কাজ করতে পারছে না।” পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করতে প্রতি ব্লকে জনসভা করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। |