বিদ্যুৎ, রাস্তার মতো সাধারণ মানুষের জীবনের জন্য অপরিহার্য পরিষেবার ক্ষেত্রগুলিতে রাজ্য সরকারের দিশার অভাব প্রকট হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ করল সিপিএম। রাজ্যের বর্তমান বিদ্যুৎ সঙ্কটের জন্য বামফ্রন্ট জমানায় বিদ্যুৎ নীতি না-থাকাকেই দায়ী করা হচ্ছে রাজ্য সরকারের তরফে। প্রধান বিরোধী দল সিপিএমের কিন্তু পাল্টা অভিযোগ, বিদ্যুৎ সঙ্কট মোকাবিলার ক্ষেত্রে নতুন সরকারের নীতির অভাবই স্পষ্ট।
বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের বিষয়ে বলতে গিয়ে প্রত্যাশিত ভাবেই কাটোয়া এবং রাজারহাটের ঘটনা তুলে আনছে সিপিএম। জমির প্রশ্ন তুলে তৃণমূল আন্দোলনে নামায় বাম আমলে কাটোয়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। রাজারহাটে বিদ্যুতের খুঁটি পুঁততে বাধা দেওয়ার অভিযোগও বার বার উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অধুনা বিরোধী দল সিপিএমের অভিযোগ, তদানীন্তন বিরোধী দল তৃণমূলের কাজকর্মের জন্যই রাজ্যে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে বহু সমস্যার সুরাহা হয়নি। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের কথায়, “অদূর ভবিষ্যতে রাজ্যের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা কী, সেটাই বোঝা যাচ্ছে না! চাহিদার সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ফারাক বেড়েই চলেছে। এই ঘাটতি মেটানোর জন্যই কাটোয়ায় বিদ্যুৎ প্রকল্পের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কাটোয়ায় যে ঘটনা ঘটেছিল, তার থেকেই স্পষ্ট, বিদ্যুতের চাহিদা সম্পর্কে ওঁদের (তৃণমূল) মনোভাব কী!” সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সূর্যবাবুর বক্তব্য, কাটোয়ার প্রকল্প ছিল এনটিপিসি-র। সেখানে রাজ্যের পক্ষ থেকে সব বিষয়ে শর্ত চাপাতে গেলে কাজ হওয়া মুশকিল ছিল।
আলিমুদ্দিনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বিদ্যুৎ-প্রসঙ্গও ওঠে। বৈঠকের পরে প্রশ্নের জবাবে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন (যিনি কিছু দিন বিদ্যুৎও সামলেছেন) বলেন, “বর্তমান সরকারের পুরনো প্রকল্প ভাল করে চালু রাখার চেয়ে নতুন প্রকল্প ঘোষণা করার দিকে বেশি আগ্রহ! বিদ্যুৎ সমস্যা যে কী রকম, তা সাধারণ মানুষ ভালই উপলব্ধি করতে পারছেন।”
বামফ্রন্ট সরকারের বিদ্যুৎ নীতি ছিল না, এই অভিযোগও নস্যাৎ করে দিয়েছেন সূর্যবাবু। বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, “আমাদের সরকার থাকাকালীন এক সময় বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ১ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি দিতে হয়েছে। আবার এক সময় রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ ১ হাজার কোটি টাকা উদ্বৃত্তও করেছে। বিদ্যুৎ নীতি না-থাকলে ১ হাজার কোটি ঘাটতি থেকে ১ হাজার কোটি উদ্বৃত্তে যাওয়া যায় না!” প্রাক্তন মন্ত্রী সূর্যবাবু বৃহস্পতিবার আরও বলেন, “আমরা যা করতে চেয়েছিলাম, তাতে অনেক ক্ষেত্রেই বাধার মুখে পড়েছি। বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাধার উদাহরণ কাটোয়া। আবার উৎপাদনের পরের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া। সেখানেও রাজারহাটে খুঁটি পুঁততে সমস্যা তৈরি করা হয়েছে।”
ইসিএল ইচ্ছামতো কয়লার দাম বাড়ানোর জন্য বিদ্যুতে সমস্যা হচ্ছে বলে যে যুক্তি রাজ্য সরকারের তরফে দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। সূর্যবাবু এ দিন বলেন, “ওঁরা রাজ্যে সরকার চালাচ্ছেন, দিল্লিতেও সরকারে আছেন। কেন্দ্রে ৭ জন মন্ত্রী। এত কিছু আদায় করতে পারছেন! ইসিএলের বিষয়টা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলছেন না কেন? মুখ্যমন্ত্রী দিল্লিতে কথা বললেই তো অনেক কাজ হয়ে যায়!” কেন্দ্রে বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ আইন পাশের সময় তাঁরা বিরোধিতা করেছিলেন এবং কংগ্রেস, বিজেপি (তৃণমূল তখন এনডিএ-তে) যে সমর্থন করে তা পাশ করিয়েছিল, সেই কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। তাঁর বক্তব্য, শহরের চেয়েও মফস্সল বা গ্রামীণ এলাকার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। সূর্যবাবুর কথায়, “কোথাও ১০, ১২, ১৬ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ থাকছে না। এর পরে রবি শস্য, বোরো ধানের সময়। বিদ্যুতের জন্য সেচের সমস্যা দেখা দেবে।”
এই সূত্রেই রাস্তার বেহাল দশার প্রসঙ্গ তুলেছেন সূর্যবাবু। তাঁর বক্তব্য, “রাজ্য সরকারের না-হয় টাকা নেই। কিন্তু ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক, দিল্লি রোড বা অন্যান্য জাতীয় সড়কের কী অবস্থা? সেগুলি তো জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের আওতাধীন। সেগুলির মেরামতি হচ্ছে না কেন? পুজো চলে গেল, দেওয়ালি আসছে! আসলে রাস্তা, বিদ্যুৎ, খাদ্য নিরাপত্তা, মুদ্রাস্ফীতি সব ক্ষেত্রেই ছবিটা মলিন। প্রদীপের নীচেই নিকষ কালো অন্ধকার জমছে!” |