চড়া দামে বিদ্যুৎ কিনলেও মিটল না ঘাটতি
বিদ্যুৎ সঙ্কট মেটাতে শেষ পর্যন্ত অন্য রাজ্য থেকে চড়া দামে বিদ্যুৎ কেনা শুরু করল রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। একই সঙ্গে কয়লা সংস্থাগুলোর কাছে যে পাঁচশো কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে, তার মধ্যে ৬০ কোটি মিটিয়ে দেওয়া হবে বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।
তবে বিদ্যুৎ দফতরের বক্তব্য, যে হেতু ইসিএল-ই টাকা চেয়েছে তাই সম্ভবত তাদেরই দেওয়া হবে পুরো টাকাটা। ইসিএল অবশ্য বৃহস্পতিবার থেকে কয়লা পাঠানো শুরু করেছে। তবু ঘাটতি মেটানো যায়নি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজ্যে বিদ্যুৎ ঘাটতি পৌঁছে যায় ৮৭৫ মেগাওয়াটে। যার মধ্যে জেলায় ৭০৫ মেগাওয়াট এবং সিইএসসি এলাকায় ১৭০ মেগাওয়াট।
অবশ্য শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই বিদ্যুৎ পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক। জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের অবস্থা খুবই করুণ। এর বড় কারণ, কয়লার জোগান কমে গিয়েছে লক্ষ্যণীয় ভাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা মূলত তেলেঙ্গানা আন্দোলনের জের। এর ধাক্কায় সিঙ্গারেনি কয়লাখনিতে ধর্মঘট চলছে। এই কয়লাখনি থেকে পশ্চিমবঙ্গের জন্য যেমন কয়লা আসে, তেমনই যায় দেশের অন্যান্য প্রান্তেও। এখন ধর্মঘটের জেরে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। যার ফলে পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, গোয়া এবং পুদুচেরি-সহ দক্ষিণের ছ’রাজ্যও গভীর সঙ্কটের মুখে। সঙ্কটের মুখে কর্নাটকের রাজধানী তথা দেশের তথ্যপ্রযুক্তি রাজধানী বেঙ্গালুরুও।
কয়লার সঙ্কটে পশ্চিমবঙ্গের মতো ভুগছে দেশের সব থেকে বড় বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থা এনটিপিসি-ও। তাদের পাঁচটি কেন্দ্রে যে কয়লা রয়েছে তাতে বড়জোর দু’দিন চলবে। তাদেরই উত্তরপ্রদেশের উনচাহার বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যেখান থেকে দিল্লিতেও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়, তার অবস্থাও একেবারেই ভাল নয় বলে সূত্রের খবর। হরিয়ানার পানিপথে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি রয়েছে, তাতেও দু’দিনের মতো কয়লা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, তেলেঙ্গানার আন্দোলন তো আছেই। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে দেশের বিভিন্ন অংশে বন্যার প্রকোপ। যার ফলে কয়লা পরিবহণে সমস্যা হচ্ছে। অথচ দেশের বেশির ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রই কয়লার উপরে নির্ভরশীল। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এনটিপিসি-সহ সরকারি বিদ্যুৎ সংস্থাগুলিকে কয়লা আমদানির অনুমতিও দিয়েছে।
এই অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎ দফতরের কর্তারা মনে করছেন, পরিস্থিতির মোকাবিলায় অন্য রাজ্য থেকে বেশি বিদ্যুৎ আনতে গেলে সেটা বিরাট ঝুঁকির কাজ হয়ে যাবে। কারণ, জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের অবস্থা খুবই খারাপ। বিদ্যুৎ দফতর সূত্রের খবর, বিদ্যুৎ সংবহণ গ্রিড বসে গিয়ে (‘গ্রিড ফেলিওর’) দেশ জুড়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গ্রিডে বিদ্যুৎ পরিবহণের হার হঠাৎ করে কমে গিয়েছে। আর একটু কমলেই বসে যাবে জাতীয় গ্রিড।
গ্রিডের এই পরিস্থিতির জন্য মূলত তেলেঙ্গানার আন্দোলনকেই দায়ী করছেন বিদ্যুৎ কর্তারা। পাশাপাশি তাঁদের অভিযোগ, অন্য রাজ্য নিয়ম মানলেও উত্তরপ্রদেশ কোনও ভাবেই গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ টানার পরিমাণ কমাচ্ছে না। ফলে গ্রিডে বিদ্যুৎ সংবহনের হার নেমে যাচ্ছে।
রাজ্যের পরিস্থিতি কেমন?
বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের কোলাঘাট ও সাঁওতালডিহি কেন্দ্রে একটি করে ইউনিট উৎপাদন শুরু করায় এ দিন ঘাটতি বুধবারের চেয়ে ১০০ মেগাওয়াট কম ছিল। বৃহস্পতিবার ইসিএল মোট ১২ রেক কয়লা পাঠায়। এর মধ্যে কোলাঘাট পায় পাঁচটি, বক্রেশ্বর চারটি এবং সাগরদিঘি তিনটি।
বিদ্যুৎ দফতর সূত্রের খবর, ঘাটতি কমাতে সোমবার থেকে বুধবারের মধ্যে তিন দিনে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা অন্য রাজ্য থেকে চড়া দরে চার কোটি ১০ লক্ষ টাকার বিদ্যুৎ কিনেছে। আর শুধু বৃহস্পতিবার কেনা হয়েছে দু’কোটি টাকার বিদ্যুৎ। দিনের সময় অনুসারে বিদ্যুতের দামেরও
রকমফের হয়েছে। সর্বনিম্ন ইউনিট-প্রতি পাঁচ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ন’টাকা দরে কেনা হয় বিদ্যুৎ। এত দাম দিয়ে অন্য রাজ্য থেকে বিদ্যুৎ আর কত দিন কেনা যাবে, তা নিয়েও সংশয়ে রয়েছেন বিদ্যুৎ কর্তারা।
রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের কাছে কয়লা সংস্থারা এখনও পর্যন্ত ৫০০ কোটি টাকা পায় বলে বিদ্যুৎ দফতরের খবর। তার মধ্যে ৬০ কোটি টাকা এখনই নিগম মিটিয়ে দেবে বলে বৃহস্পতিবার রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই টাকা নিগমকে দেবে রাজ্য সরকার। বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত বলেন, সম্ভবত যোজনা বরাদ্দের খাত থেকেই টাকাটা অগ্রিম দেওয়া হবে নিগমকে। তিনি বলেন, প্রয়োজনে আরও টাকা দেওয়া হবে। এই অবস্থাতেও রাজ্য সরকার কেন বিদ্যুৎ মাসুল বাড়াচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিদ্যুৎ দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, এই বিষয়টি রাজ্য সরকারের বিবেচনাধীন।
কয়লার হাল-হকিকত
কেন্দ্র মজুত * চলবে
কোলাঘাট ১৬ ২০ ঘণ্টা
বক্রেশ্বর ১৪ ১ দিন
মেজিয়া ২৮ ১ দিন
সাগরদিঘি ১৫ ২ দিন
ব্যান্ডেল ১৮ ৩ দিন
ফরাক্কা ৯১ ৩ দিন
সাঁওতালডিহি ৩০ ৫ দিন
* হাজার টন
এই ৬০ কোটি টাকায় সমস্যা কিছুটা মিটবে বলে মনে করছেন নিগমের কর্তারা। তবে বিদ্যুৎ দফতরের খবর, সম্ভবত পুরো টাকাটাই দেওয়া হবে ইসিএল-কে। নিগমের এক কর্তা বলেন, নিগমের কাছে ইসিএল পায় ১৮৫ কোটি টাকা, বিসিসিএল ১৫০ কোটি, মহানদী কোলফিল্ডস ৩০ কোটি, বেঙ্গল-এমটা ৪৫ কোটি আর বিদেশি কয়লা আমদানি সংস্থা ৯০ কোটি টাকা। মোট বকেয়া ৫০০ কোটি টাকা।
এদের মধ্যে কেবল ইসিএল-ই টাকা না পেয়ে কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল। এখন ইসিএল যদি বকেয়া টাকার অংশ পেয়ে যায়, তা হলে অন্য সংস্থাগুলিও একই ভাবে কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে চাপ দেবে। নিগম কর্তাটির আশঙ্কা, এর ফলে রাজ্যের ঘাড়ে খরচের বোঝা আরও বাড়বে।
এই পরিস্থিতিতে সিইএসসি-রও ঘাটতি রয়েছে।
কিন্তু তাদের বক্তব্য, গ্রিড বিপর্যয় হলে তা থেকে বাঁচার পরিকল্পনা এখনই সংস্থা ছকে ফেলেছে। সিইএসসি-র এক কর্তা বলেন, গ্রিড বসে গেলে বাকি গ্রিড থেকে তাঁরা নিজেদের বিচ্ছিন্ন করার ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই করে রেখেছেন। সে ক্ষেত্রে গোটা দেশ অন্ধকারে ডুবে গেলেও সিইএসসি-র নিজস্ব উৎপাদন নিরাপদে থেকে যাবে বলেই তাঁদের দাবি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.