দীপাবলির দিন গোনা শুরু হিলোড়ায়
হিলোড়া অপেক্ষায় দীপাবলির।
আলোর রোশনাই আর জৌলুসে কালীপুজোই এখানে সব থেকে বড় উৎসবের চেহারা নেয়। ঘরে ঘরে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে প্রস্তুতি। কোনও কোনও বাড়িতে আবার একটা নয়, চলছে একাধিক পুজোর আয়োজন। সেই শ্রাবণ মাসের গোড়া থেকেই প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেছেন মৃৎশিল্পীরা।
কোজাগরী লক্ষ্মী পূর্ণিমার পর থেকে এই ছবিটাই দেখা যায় হিলোড়া ও জাজিগ্রামে। মুর্শিদাবাদ ও বীরভূমের সীমান্তের এই গা ঘেঁষা দু’টি গ্রামের সব থেকে বড় উৎসব কালীপুজো। লক্ষ্মীপুজো শেষ হতেই দিন গোনা শুরু করে দেন এলাকাবাসী। বছর ভর এই সময়টার জন্যই তো অপেক্ষা। আর মাত্র কয়েকটা দিন।
অমাবস্যার রাতে উৎসবে মাতবে গোটা গ্রাম। শতাধিক প্রতিমার বিসর্জনের শোভাযাত্রা দেখতে এলাকায় ভিড় করেন দু’টি পড়শি জেলার হাজার হাজার মানুষ। পুজো উপলক্ষে বসে মেলাও।জাজিগ্রামে নিজের বাড়িতে তিন-তিনটে পুজোর আয়োজন করেন মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায়। অনেক বাড়িতেই একাধিক কালীপুজোর আয়োজন করা হয়। এই রীতিই চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে। অনেক গৃহস্থেরই একাধিক পুজো করার সাধ্য নেই। রেওয়াজ মেনে পুজো করতে হিমসিম খেতে হচ্ছে অনেককেই। তবুও বছরের সব থেকে বড় আলোর এই উৎসবে কোনও ফাঁক রাখেন না কেউই। সাধ্যমতো প্রস্তুতি নেন সকলেই।
মৃণালবাবু বলেন, “আজও গ্রামের অনেক জায়গায় কূর্মপৃষ্ঠাকৃতি ভূমি দেখা যায়। ধারণা করা হয়, ওই ভূমিতে বসেই সাধনা করতেন তান্ত্রিকেরা। স্থান-কাল ভেদে তাই কালীমূর্তির নামকরণেও বৈচিত্র রয়েছে। কোনওটির নাম বকুলেশ্বরী, কোনওটি দিগম্বরী, কোনওটি আবার শিয়ালেশ্বরী, বাঞ্ছাময়ী, নিত্যকালী, ভাটেশ্বরী, ইচ্ছাময়ী। আরও বহু নামে দেবী এই দুই গ্রামে পূজিত হন।”
তবে সব থেকে প্রাচীন কালীপুজো হিসাবে গ্রামে আজও পূজিত হয়ে আসছেন বৃদ্ধামাতা। এই কালীমূর্তির দুই কানে ঝোলানো শিশুমূর্তি। চুলে পাক ধরেছে।
এই পুজোর উদ্যোক্তা ৮০ বছরের হরিসদয় মজুমদার বলেন, “মহেশপুরের রাজাদের জমিদারি ছিল এই এলাকায়। তাঁরাই তন্ত্র সাধকদের কাছ থেকে বৃদ্ধামাতার পুজোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন। পরে সেই দায়িত্ব আমাদের উপরে পড়ে। অথচ আমাদের বাড়িতেই বাঞ্ছাময়ী কালীর পুজো হয়ে আসছে প্রায় ১১২ বছর ধরে। দুটো পুজো সামলাতে প্রাণান্তকর অবস্থা। তবুও পুজো করতেই হয়।”
তিনি জানালেন, নিমগাছের নিচে বেদির উপরে বৃদ্ধামাতার পুজোর আয়োজন করা হয়। মাথার উপরে কোনও আচ্ছাদন থাকে না। এর জেরে অকাল বৃষ্টিতে পুজোর রাতে বিপত্তিও হয়েছে বহুবার।
গ্রামেরই পঞ্চায়েত সদস্য বিশ্বজিৎ বাগ বলেন, “গ্রামে শ’খানেক পুজো হলেও পরম্পরা মেনেই পুজো করেন সকলে। কালীপুজোর রাতা বৃদ্ধামাতাকে বেদিতে তুলে বিশেষ ধরণের পটকা ফাটানো হয়। সেই পটকার আওয়াজ শোনার পরেই দুই গ্রামের সমস্ত দেবীমূর্তিকে থানে তোলা হয়। বৃদ্ধামাতার পুজো শুরু হলে দ্বিতীয় পটকা ফাটানো হয়। সেই আওয়াজ শুনে গ্রাম জুড়ে দেবীর পুজো শুরু হয়। শেষ পটকা ফাটে বলিদানের সময়ে। রাত গড়িয়ে যায় গ্রামের প্রায় আড়াইশো বলিদান সম্পূর্ণ হতে।
এই দুই গ্রামে বিভিন্ন পুজোর রীতিও আলাদা আলাদা। মণালবাবু বলেন, “প্রায় সব পুজোতে গঙ্গাজলকে শুদ্ধ মেনেই আয়োজন চলে। তবে দিগম্বরী কালীপুজোয় গঙ্গাজল নিষিদ্ধ। মদ দিয়ে ভরা হয় দিগম্বরী কালীর ঘট। কোশাকুশিতেও জলের বদলে দেওয়া হয় মদ। কালীর চক্ষুদান করা হয় ছাগল বলি দিয়ে। পঞ্চমুণ্ডির নির্দিষ্ট আসনে বসানো হয় দেবীমূর্তি। দয়াময়ী কালীর ভোগ হয় ইলিশ, পোলাও এবং পোস্ত বড়া দিয়ে।”
তবে জাজিগ্রামের তুলনায় খানিকটা জৌলুস হারিয়েছে হিলোড়ার পুজো। গ্রামের পরিমল খামারু বলেন, “হিলোড়ার বাজারেশ্বরী কালীপুজোর আয়োজকেরা থাকেন দুর্গাপুরে। গ্রামের মুক্তকেশী কালীপুজো এক সময়ে পারিবারিক পুজো ছিল। তবে এখন তা বারোয়ারি। একই ভাবে বারোয়ারি হয়ে গিয়েছে আশাপূর্ণা কালীও। বামা কালীর উদ্যোক্তারা পুজো সারতে কয়েক দিনের জন্য মালদহ থেকে গ্রামে আসেন।” তিনি জানান, কালীপুজোই এই গ্রামদু’টির সব থেকে বড় উৎসব। এই পুজো উপলক্ষে গ্রামের প্রতি ঘরে ঘরেই আত্মীয়-কুটুম্বদের ভিড় হয়। এখন থেকেই গ্রামে সাজো সাজো রব। উৎসবের আমেজে মেতেছে হিলোড়া ও মাজিগ্রাম।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.