ঈদ কেটেছে বিনা বেতনে। পুজোও গেল বেতন না পেয়েই। দীপাবলির আগেও বেতন না পাওয়ার আঁধার কাটবে কি না তার নিশ্চয়তা মেলেনি।
সরকারি ক্ষেত্রে মাস পয়লা বেতন পাওয়ার নয়া রেওয়াজ চালু হলেও তিন তিনটি উৎসবের ভরা মরসুমেও মুর্শিদাবাদ জেলার জুনিয়ার হাইস্কুলগুলির শতাধিক অতিথি-শিক্ষকের কপালে তিন মাস পরও বেতন জোটেনি। অথচ এ বার উৎসবের দিনগুলি রাজ্য সরকারে কর্মী ও শিক্ষকদের বেতন মাস শেষ হওয়ার কয়েক দিন আগেই মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবুও মুর্শিদাবাদ জেলার সদর মহকুমা বহরমপুর এলাকার ৭টি ব্লকের ৭২টি জুনিয়ার হাইস্কুলের শতাধিক অতিথি-শিক্ষকের গত জুলাই মাস থেকে ৩ মাসের বেতন আজও বকেয়া কেন?
মুর্শিদাবাদ জেলা বিদ্যালয় (মাধ্যমিক) পরিদর্শক শুভেন্দুবিকাশ দত্ত বলেন, “বেতন সংক্রান্ত রিকিউজিশান বিল নিয়ে কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায় এমন ঘটেছে। দ্রুত সমাধান করে কয়েক দিনের মধ্যে বেতন মেটানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” জেলা শিক্ষাভবনের যে করণিকের ‘খামখেয়ালি নির্দেশ’-এর খেসারত দিতে ৩ মাস ধরে বেতন পাননি ওই শিক্ষকেরা সেই দাপুটে করণিক শ্যামসুন্দর ভাদুড়ির জবাব, “ওই বিষয়ে আমি কোনও কথা বলব না।”
বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব হতে হবে ২ কিলোমিটারের মধ্যে। বিগত রাজ্য সরকারের ওই নীতি রূপায়ণের জন্য ২০০৮-২০০৯ শিক্ষাবর্ষে মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রায় আড়াইশোটি ‘আপার প্রাইমারি’ অর্থাৎ পঞ্চম শ্রেণি থকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত জুনিয়র হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওই সব স্কুলে পঠনপাঠনের জন্য হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক যাঁদের বয়স ৬৫ বছরের মধ্যে ও যাঁরা পেনসন পাচ্ছেন তাঁদের মধ্যে থেকে অতিথি-শিক্ষক নিয়োগ করার নীতি গৃহীত হয়। অবসরের মাসের প্রাপ্য বেতন থেকে পেনসনের টাকা বাদ দিয়ে যে টাকা থাকে সেটিই ওই অতিথি শিক্ষকের বেতন হিসাবে প্রাপ্য বলে সরকারি ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অতিথি শিক্ষকদের বেতন সংক্রান্ত ওই সব হিসাব লেখা কাগজকে ‘রিকিউজিশান বিল’ বলা হয়। প্রতিমাসের বেতন পাওয়ার জন্য প্রতিটি জুনিয়ার হাইস্কুল থেকে শিক্ষা বিভাগের মহকুমা কার্যালয়ে ওই ‘রিকিউজিশান বিল’ জমা দিতে হয়। ‘রিকিউজিশান বিল’-এ স্বাক্ষর করতে হয় সংশ্লিষ্ট স্কুলের ‘অ্যাডহক’ পরিচালন সমিতির সম্পাদক তথা ওই এলাকার প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শক এবং সংশ্লিষ্ট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষককে। তার পর ‘রিকিউজিশান বিল’ জমা দেওয়া হয় শিক্ষা বিভাগের সংশ্লিষ্ট মহকুমা কার্যালয়ের নির্দিষ্ট করণিকের হাতে। মুর্শিদাবাদ জেলার অন্য কোনও মহকুমায় কোনও সমস্যা দেখা না দিলেও জট পাকিয়ে যায় বহরমপুর মহকুমার ক্ষেত্রে।
বহরমপুর মহকুমার তথা জেলা শিক্ষাভবনের ওই নির্দিষ্ট করণিকের নাম শ্যামসুন্দর ভাদুড়ি। অতিথি শিক্ষকদের অভিযোগ, জুলাই মাসের বেতনের ‘রিকিউজিশান বিল’ জুন মাসের ২৫ তারিখের মধ্যে তাঁর কাছে জমা দিতে হবে বলে শ্যামসুন্দরবাবু ফরমান জারি করেন। সেই মতো জমাও পড়েও। ওই বিল অনুমোদনের জন্য শ্যামসুন্দরবাবু এ বার নিয়ম অনুসারে পাঠিয়ে দেন শিক্ষাভবনের আর এক করণিক প্রশান্ত দাসের কাছে।
ইতিমধ্যে জুলাই মাসের মাঝামাঝি ওই সব স্কুলের বেশ কয়েকটিতে স্কুল সার্ভিস কমিশন থেকে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। তার ফলে ওই নিয়োগের দিনই সংশ্লিষ্ট পদের অতিথি শিক্ষকরা অবসর নেন। কিন্তু ইতিমধ্যে ‘রিকিউজিশান বিল’-এ ওই সব অতিথি শিক্ষকদের পুরো জুলাই মাসের বেতন প্রাপ্য বলে আগে থেকে দেখানো হয়েছে। জেলা শিক্ষাভবনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের করণিক প্রশান্ত দাস বলেন, “তার ফলে আমার কাছে পাঠানো অনুমোদন করা আগের রিকিউজিশান বিল অনুসারে বেতন দেওয়া হলে প্রাপ্যের অতিরিক্ত সরকারি টাকা বিলি করা হয়ে যাবে। ফলে আগের জমা দেওয়া রিকিউজিশান বিল সংশোধন করতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই বিল সংশোধন হয়নি, তার ফলে জুলাই মাস থেকে বেতনও দেওয়া যায়নি।” |