সীমান্তে পাচারের রমরমা আবার আচমকা বেড়ে গিয়েছে বলে উদ্বিগ্ন ডোমকলের মানুষ। তবে পুলিশ প্রশাসন সে কথা মানতে নারাজ। মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মৃণাল মজুমদার বলেন, “মাঝে মাঝেই অভিযান চালিয়ে গবাদি পশু পাচার কমানো হয়েছিল, কিন্তু এই টানা উৎসবের সময়টা জুড়ে পুলিশ ব্যস্ত থাকায় সেই সুযোগটাই নিয়েছে চোরাপাচারকারীরা। আমরা আবার অভিযানে নামব।”
এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্য, সীমান্তের কিছু অংশ জুড়ে কাঁটা তারের বেড়া থাকায় এবং সীমান্তরক্ষীদের কড়া প্রহরার ফলে পাচার সম্প্রতি সত্যিই কমে গিয়েছিল। কিন্তু এখন পদ্মা সংলগ্ন এই অঞ্চলে যেখানে কাঁটা তারের বেড়া নেই, সেই এলাকা দিয়ে প্রকাশ্যে গবাদি পশু পাচার হচ্ছে। অবস্থা এমনই যে, গত সপ্তাহান্তে রানিনগরের মোহনগঞ্জে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জওয়ানেরাও আক্রান্ত হয়েছিলেন পাচারকারীদের হাতে। কাতলামারি ২ পঞ্চায়েতের প্রধান কংগ্রেসের মহম্মদ মোল্লা বলেন, “পাচারকারীরা এতটাই দুঃসাহসী হয়ে উঠেছে যে বিএসএফের গায়েও হাত দিচ্ছে। ফলে এলাকার মানুষ তো ভয়ে অতিষ্ঠ।” স্থানীয় বাসিন্দা ইকবাল শেখ বলেন, “পাচারকারীরা এই এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। দিনের বেলাতেই রাস্তা দিয়ে গরুর দল নিয়ে যাচ্ছে তারা।” স্থানীয় এক স্কুলের শিক্ষক বলেন, “ডোমকল বা ইসলামপুর থেকে রানিনগর আসতে রাজ্য সড়ক ধরে ২০ মিনিট লাগত এক সময়। এখন সেই পথটুকুই পেরোতে সময় লাগছে দেড় ঘণ্টা। কারণ, ওই রাজ্য সড়ক ধরেই পাচারের জন্য নিয়ে যাওয়া গরুর দল।” তিনি বলেন, “রাস্তায় প্রতিবাদ করতে গেলে আমাদেরই আক্রান্ত হতে হয়। তাই ভয়ে কেউ কিছু বলেন না।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, এই এলাকায় কিছু দিন আগে বিএসএফের একটি নতুন ব্যাটালিয়ন এসেছে। এলাকার চরিত্র জানতে তাদের সময় লাগবে। সেই সুযোগটাই নিচ্ছে পাচারকারীরা। তারা বিএসএফের উপরে চাপ তৈরি করার চেষ্টা করছে। তা ছাড়া, এখন ওপারে গরুর চাহিদাও বেশি। বেশি দর মিলছে পাচার করা গরুর। সেই সঙ্গে এলাকার মানুষের বক্তব্য, বিএসএফের চাপে অনেক পাচারকারীই অন্য জীবিকায় চলে গিয়েছিল। কিন্তু পঞ্চায়েতের প্রধান মহম্মদ মোল্লা বলেন, “সম্প্রতি পাচারের রমরমা বাড়ায় পুরনো পাচারকারীরাও এখন আবার ওই অন্ধকার ব্যবসায় নেমেছে। অনেকগুলো দলও তৈরি হয়েছে।” এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, এখন পাচারকারীদের মধ্যে রয়েছে অনেক পদ্মার ওপারের বাসিন্দাও। তারা এই এলাকায় ঢুকে পড়ছে। বিএসএফের বক্তব্য, ওপার থেকে যারা আসছে, তারাই প্রধানত গণ্ডগোল করছে। এই বিষয়ে খুব তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জলঙ্গির বিধায়ক সিপিএমের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “বছর খানেক ধরে সীমান্তে চোরাপাচারের প্রবণতা খুব বেড়ে গিয়েছে। কারণ ওপারের পাচারকারীরা এদেশে এসে সক্রিয় হয়ে উঠছে। ওরা খুবই দুঃসাহসী। ওদের হাতে অস্ত্রও রয়েছে। এর ফলে গোটা ডোমকল মহকুমা জুড়ে একটা অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে।” তিনি বলেন, “অনেক মানুষের হাতে কাঁচা টাকা আসছে। সেই সঙ্গে নেশার প্রবণতাও বাড়ছে।” তাঁর কথায়, “এই এলাকায় অশিক্ষার হার বেশি। তাই এমনকী পাচারের মতো কাজ করে চটজলদি কাঁচা টাকার রোজগারের প্রতি লোভও বেশি। সেই কারণে পাচার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে যাঁরা বিকল্প জীবিকায় গিয়ে সুস্থ জীবনে ফিরে গিয়েছিলেন, তাঁরা আবার পাচারে নামছেন, এমন খবরও পাচ্ছি।” ডোমকলের মহকুমাশাসক মনোজ চক্রবর্তী বলেন, “পাচারের রমরমা বেড়ে যাওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। ইতিমধ্যেই জেলাশসক এই বিষয়টির উপরে নজর রাখতে একটি কমিটি তৈরি করেছেন। তাতে বিএসএফ, শুল্ক দফতরের কর্তা, স্থানীয় প্রশাসনিক আধিকারিকেরা রয়েছেন। আগামী শনিবার ওই কমিটি বৈঠকে বসছে।” |