প্রশ্ন জঙ্গলমহলে
‘হচ্ছে-হবে’ প্রশাসনে দুঃখমোচন হবে কি
ন্নয়নের ওষুধে জঙ্গলমহলের ‘অ-সুখ’ সারাতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে শুরু করে সরকারের প্রত্যেক কাজকর্মেও তিনি আনতে চাইছেন তড়িৎ-গতি। আন্তরিকতা বোঝাতে জুলাইয়ের পর ফের কাল, শনিবার জঙ্গলমহলে আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ‘আঠারো মাসে বছরে’র প্রশাসনিক-রুটিনে বদল কি আর সহজ কাজ!
লালগড়ের ধরমপুর অঞ্চলের চ্যামিটাড়া গ্রামের পদ্মলোচন পাল অন্তত মুখ্যমন্ত্রী-নির্দেশিত ‘দ্রুতি’র কোনও হদিস পাচ্ছেন না।
মাসখানেক আগে কাজ চেয়ে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন করেছিলেন পদ্মলোচনবাবু। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে তড়িঘড়িই পদক্ষেপ করেন মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব (তাং ৭ সেপ্টেম্বর ২০১১)। আবেদনকারী যাতে অন্তত একশো দিনের প্রকল্পেও কাজ পান, সে জন্য দ্রুত পদক্ষেপ করার জন্য পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসককে নির্দেশ দেন ওই সচিব। কিন্তু মাস ঘুরলেও এখনও কাজ পাননি পদ্মলোচন। এক দফতর থেকে অন্য দফতরে চিঠি দেওয়া-নেওয়াই শুধু চলছে। এই সময়ের মধ্যে প্রশাসনের কোনও প্রতিনিধিই তাঁর বাড়িতে আসেননি। হতাশায় ভুগছেন পদ্মলোচন। তাঁর কথায়, “আমরা গরিব মানুষ। কাজ পাওয়ার আশাতেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছিলাম। এখনও কিছুই হল না!”
চ্যামিটাড়ার বাড়িতে অণিমা ও পদ্মলোচন পাল। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
শনিবার মুখ্যমন্ত্রী ঝাড়গ্রামে আসছেন বলে শুনেছেন। তাঁর সঙ্গে এক বার দেখা করার ইচ্ছাও রয়েছে বছর আটচল্লিশের পদ্মলোচনের। কিন্তু দেখা করা আদৌ সম্ভব কি না, তা বুঝতে পারছেন না। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্তের বক্তব্য, “বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।” লালগড়ের বিডিও অভিজিৎ সামন্ত জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত-প্রতিনিধিকে পদ্মলোচনবাবুর পারিবারিক অবস্থা সম্পর্কে জানাতে বলা হয়েছে ইতিমধ্যে।
এক সময় সন্ত্রাসের আগুনে দ্বগ্ধ হয়েছে লালগড়ের ধরমপুর অঞ্চল। সেখানেই বাস পদ্মলোচনের। এক ছেলে, এক মেয়ে। স্কুলে পড়ে। সামান্য জমি রয়েছে। কিন্তু সেচের সমস্যা। চাষ তেমন হয় না। স্ত্রী অণিমাদেবী ঠোঙা তৈরি করেন। মুড়ি ভাজেন। কোনও রকমে সংসার চলে। আগেও কাজ চেয়ে স্থানীয় স্তরে অনেক দরবার করেছেন। কিন্তু কাজ মেলেনি। বিপিএল তালিকায় নাম ওঠানোর জন্য চার-চার বার আবেদন করেছেন। কিছুই হয়নি।
পদ্মলোচনের মতো মানুষ কিন্তু জঙ্গলমহলে অসংখ্যই। বস্তুত, তিনি সেই ‘পিছিয়ে পড়া’ অঞ্চলের অগণন গরিবের এক প্রতিনিধি মাত্র। তাঁকে নিয়ে আলোচনা এ কারণেই যে, কাজের আশায় সস্ত্রীক পদ্মলোচন গত ৩ সেপ্টেম্বর হাজির হয়েছিলেন কলকাতার কালীঘাটে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতেই। ভিতরে অবশ্য ঢুকতে পারেননি। তবে সেখানে এক মহিলা তাঁদের দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে একটি আবেদন লেখান।
মাত্র ৪ দিনের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব পদক্ষেপও করেন। জেলাশাসককে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। তার পর থেকে শুধুই চলেছে চিঠি চালাচালি। জেলাশাসকের কাছ থেকে অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত), সেখান থেকে মহকুমাশাসক, তার পর বিডিও....। প্রশাসনিক প্রক্রিয়া চলছেই! বৃহস্পতিবার সকালে চ্যামিটাড়া গ্রামে পদ্মলোচনবাবুর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, অণিমাদেবী কাগজ কেটে ঠোঙা তৈরি করছেন। তিনি বলেন, “পুজোয় মেয়েকে নতুন জামাটুকুও দিতে পারলাম না। কলকাতায় যেতে-আসতেই কত টাকা খরচ হল। কিন্তু কিছুই তো হল না! কলকাতায় না-গেলে হয়তো মেয়েটাকে অন্তত জামাটা দিতে পারতাম!”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.