চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট আর আইনজীবীরা
কোচিং নিয়ে কিছু বলতে পারেন না: ডার্বি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
হয় পদত্যাগ করুন, নয়তো শনিবারই বহিষ্কার। স্টিভ ডার্বিকে এই চরম বার্তা পাঠিয়ে দিল মোহনবাগান।
ব্রিটিশ কোচও যুদ্ধের মেজাজেই। মোহনবাগানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে কোনও বিক্ষুব্ধ কোচ যা করতে পারেননি, তা করে দেখালেন তিনি। মোহনবাগান প্রেসিডেন্ট এবং সচিবকে পরোক্ষে চূড়ান্ত বিদ্রুপ করে। প্র্যাক্টিস সেরে যুবভারতী থেকে বেরোনর সময় তাঁর সাফ কথা, “কোচিংটা তো আমি করাচ্ছি। কোনও আইনজীবী বা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট তো এই নিয়ে কিছু বলতে পারেন না। আমি ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড, লিভারপুলের ধাঁচেই প্র্যাক্টিস সূচি তৈরি করেছি।”
মোহনবাগান প্রেসিডেন্ট টুটু বসু আইনজীবী। সচিব অঞ্জন মিত্র পেশায় চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট। ক্লাবে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। টুটু বিদেশে। অঞ্জন কালিম্পংয়ে। সেখান থেকে মোহনবাগান সচিবের রাগত জবাব, “ওঁর জবাব আমি দেব না। যা করার শনিবার কলকাতা ফিরে করব।”
সচিব-প্রেসিডেন্টকে পরোক্ষে বিদ্রুপের পাশাপাশি ডার্বি আর একটি কাজ করেছেন, যা টুটু-অঞ্জনের জমানায় নজিরহীন। কর্তারা তাঁর বিরুদ্ধে দেখে তিনি সরাসরি মেল করেন বিজয় মাল্যর ছেলে সিদ্ধার্থকে। ক্লাবের বর্তমান চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থকে তাঁর অভিযোগই জানান। ফলে সকাল থেকে মোহনবাগানে তোলপাড়। ইউ বিতেও। ক্লাবকর্তাদের খবর, এক বিদেশি কোচের পরামর্শেই ডার্বি মাল্য পর্যন্ত দরবার করেছেন। ফলে কলকাতার ইউ বি প্রতিনিধিরা ডার্বিকে সরানোয় সায় দিলেও বেঙ্গালুরুর প্রধান দফতর থেকে সবুজ সঙ্কেত আসেনি।
|
ডার্বি সম্পর্কে কর্তারা অবশ্য এতটাই ক্ষুব্ধ, আর ইউ বি-র সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে নেই। সচিব কর্মসমিতির সব সদস্যর সঙ্গে কথা বলে কোচ তাড়ানোর ঘুঁটি সাজিয়ে নিয়েছেন। এক কর্তা বললেন, “সাপোর্টিং স্টাফ, ফুটবলারদের কেউ ওর সঙ্গে নেই।” দফায় দফায় ইউ বি প্রতিনিধি ও ডার্বির এজেন্টের সঙ্গে কর্তাদের কথা হয়। সন্ধ্যায় ডার্বি এজেন্টকে বলেন, “শুক্রবার ভাবব, কী করা যায়।”
তিনি কি নিজে সত্যিই সরে যাবেন? না অপেক্ষা করবেন? ক্লাব কর্তাদের মতো ইউ বি-র স্থানীয় কর্তারাও তাঁর পাশ থেকে সরে গিয়েছেন দেখে, ভাবা গিয়েছিল, ডার্বি বৃহস্পতিবার প্র্যাক্টিসের পরেই সরে যাবেন। কোথায় কী? প্র্যাক্টিস ম্যাচে ৫-১ জুনিয়র অ্যাকাডেমিকে হারিয়ে, বেরোনর সময় মোহন কোচের সরাসরি কথা, “কোনও ফুটবলার আমার কোচিংয়ে খুশি নয় বলুক। সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে চলে যাব। কিন্তু ক্লাব কর্তারা কী বললেন তা শুনে পদত্যাগ করব না। কর্তারা কেউ তো আমার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেননি।”
বরখাস্ত হওয়ার মুখে দাঁড়িয়ে ডার্বি ছিলেন ডোন্ট কেয়ার মনোভাব নিয়ে। ক্লাব-কোচ ডামাডোল নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এটাই তো প্রথম প্রশ্ন হবে মনে করেছিলাম। এটা দু’নম্বরে কেন?” ক্লাবের সঙ্গে তা হলে সমস্যাটা তৈরি হল কোথায়? ডার্বির সংক্ষিপ্ত জবাব, “সেটাই তো বুঝতে পারছি না। সমস্যাটা মিডিয়াই আমাকে জানাচ্ছে।”
|
আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের ম্যাচ |
• ডার্বির তোপ সচিব-প্রেসিডেন্টকে।
• কর্তাদের বার্তা, হয় পদত্যাগ নয় বহিষ্কার।
• ডার্বির নালিশ বিজয় মাল্যর ছেলেকে।
• কর্তাদের তিন দফা অভিযোগপত্র তৈরি।
• ডার্বির বার্তা, সরে যাওয়া নিয়ে ভাবছি।
• কর্তাদের সিদ্ধান্ত, শনিবার পর্যন্ত অপেক্ষা। |
|
ডার্বির বিরুদ্ধে অল্প সময় অনুশীলন করানোর অভিযোগ উঠছিলই ক’দিন ধরে। তা নিয়ে প্রশ্ন করতেই চটে যান ডার্বি। কিন্তু তিনি শুক্রবারও ছুটি দিয়েছেন ফুটবলারদের। তাঁকে বহিষ্কার করার ক্ষেত্রে এটাই অন্যতম অস্ত্র হচ্ছে কর্তাদের। দ্বিতীয় অস্ত্র, সচিব-প্রেসিডেন্টকে আক্রমণ। তৃতীয় অস্ত্র, ফেডারেশন কাপের ব্যর্থতা।
কোচ নিয়ে অভূতপূর্ব টানাপোড়েনের জন্য আই লিগ শুরুর মুখে মোহনবাগানের প্রস্তুতি যেন থমকে দাঁড়িয়ে। সন্ত্রস্ত্র, নির্বাক ফুটবলাররাও। |