অণ্ণা-প্রভাবের পরীক্ষা হিসারের ভোটে
গোলমাল তেমন কিছু হয়নি, মোটামুটি নির্বিঘ্নেই আজ শেষ হল হরিয়ানার হিসার লোকসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচন। ভোটের ফল জানা যাবে আরও চার দিন পরে। যে ফলের দিকে শুধু হিসার বা হরিয়ানা নয়, তাকিয়ে রয়েছে গোটা দেশ। কেন না অণ্ণা হজারের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ‘সামান্য’ একটি উপ-নির্বাচন এখন ‘অসামান্যে’ পরিণত। বিশেষ করে অণ্ণা শিবিরের পাশাপাশি কেন্দ্রে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি একটা প্রচার চালিয়েছে যে, এই ভোটেই হবে কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারের লিটমাস পরীক্ষা। একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগের ধাক্কায় কংগ্রেস কুপোকাৎ হচ্ছে কি না, তার প্রমাণ মিলবে হিসারেই।
হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভজনলালের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া হিসার কেন্দ্রে ভজনলাল-পুত্র তথা কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত নেতা কুলদীপ বিষ্ণোই বিজেপি সমর্থিত হরিয়ানা জনহিত কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন। বিপরীতে রয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা হরিয়ানার কংগ্রেস নেতা জয়প্রকাশ। লড়াইয়ে আছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমপ্রকাশ চৌটালার পুত্র অজয় চৌটালাও। আইএনএলডি প্রার্থী হিসেবে।
কিন্তু হিসারের লড়াই শুধু এই তিন নেতার নাম-পরিচয়ে আটকে নেই। জন লোকপাল বিল নিয়ে হিসারে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রচারে নেমে পড়েছিলেন অণ্ণা হজারে। পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে অণ্ণা হজারে ও তাঁর সহযোগীরা বলেছেন, মানুষ যেন কংগ্রেসকে ভোট না দেয়। বলা বাহুল্য, হিসারে কংগ্রেস হারলে অণ্ণারা ‘কৃতিত্ব’ নিতে চাইবেন। একই সঙ্গে কেন্দ্রের ওপর আরও চাপও বাড়াবেন।
প্রশ্ন হল, অণ্ণা ও তাঁর দলবল বিরুদ্ধে প্রচার না করলে কংগ্রেসের এই ভোটে জেতার সম্ভাবনা কতটা ছিল? হিসার বরাবরই ভজনলালের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। এমনকী কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে হরিয়ানা জনহিত কংগ্রেস গঠনের পর তাঁর ঘোর অসময়েও গত লোকসভা ভোটে হিসারে জিতেছেন ভজনলাল। উপরন্তু রাজ্যে কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতাও রয়েছে। এমনিতেই হিসারে কংগ্রেসের জয়ের বিশেষ আশা ছিল না। কংগ্রেস নেতৃত্বও বিশেষ আশাবাদী ছিলেন না। তবে অণ্ণা-শিবির প্রচার শুরু করায় মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা-সহ রাজ্যের তাবড় নেতারা গত ক’দিন ধরে আদাজল খেয়ে প্রচারে নেমেছিলেন।
রাজনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, হিসারে লড়াই কার্যত জাঠ বনাম অ-জাঠ। আর তাতেই ভোট ভাগাভাগির অঙ্ক। কুলদীপ জাঠ নেতা নন। কিন্তু কংগ্রেস ও লোকদল প্রার্থী দু’জনেই জাঠ নেতা। ফলে এমনিতেই জাঠ ভোট ভাগাভাগির আশঙ্কা রয়েছে। সেই অঙ্কে এমনিতেই কুলদীপ কিছুটা এগিয়ে। আবার বিপরীত তত্ত্বও রয়েছে। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, “জাঠেরা রাজনৈতিক দিক থেকে খুবই সচেতন। ফলে যে জাঠ নেতার জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে, তাঁকেই তাঁরা ভোট দেবেন। তা ছাড়া, যে ভোটাররা অ-জাঠ, তাঁরা যে কেউই জাঠ-প্রার্থীদের ভোট দেবেন না, এমন নয়।”
তবে কংগ্রেস নেতৃত্ব বলছেন, হিসারের ফল যা-ই হোক, অণ্ণারা কিছুই প্রমাণ করতে পারবেন না। অণ্ণার নিজের রাজ্য মহারাষ্ট্রের পুনেতেও একটি বিধানসভা কেন্দ্রে উপ-নির্বাচন হচ্ছে। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, “সেখানে কেন প্রচার করছেন না অণ্ণা? কারণ ওঁরা জানেন, ওখানে কংগ্রেসই জিতবে।” তবে হিসারে কংগ্রেস হারলে কৃতিত্ব নেওয়ার জন্য বসেই আছে অণ্ণা-শিবির। অণ্ণা নিজেও আজ বলেছেন, “১৭ অক্টোবর ফল প্রকাশের দিনের অপেক্ষায় রয়েছি।” আবার, দিগ্বিজয় সিংহকে পাল্টা চিঠি দিয়ে তিনি দাবি করেছেন, রাজনীতিতে আসার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা তাঁর নেই। এমনকী রাষ্ট্রপতি হওয়ার কথাও তিনি ভাবেন না। অণ্ণার দাবি, এক জন আরএসএস কর্মীও তাঁর অনশনে হাজির ছিলেন না।
কংগ্রেস ও অণ্ণা শিবিরের এই লড়াই বিজেপিকে সুবিধা দিচ্ছে বলেই মনে করছেন অরুণ জেটলি-সুষমা স্বরাজরা। তবে আরও একটি কারণে তাঁরা উপ-নির্বাচনের ফলের দিকে তাকিয়ে। তা হল, হরিয়ানা জনহিত কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপি এখন জোট গড়েছে। এই মুহূর্তে হরিয়ানায় বিজেপি-র একটি লোকসভা আসনও নেই। ফলে উপ-নির্বাচনে জোট প্রার্থী ভালো করলে বিজেপি-ও কিছুটা আশার দেখবে।
অপেক্ষা এখন ১৭ অক্টোবরের।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.