মায়ানমারের জঙ্গলে ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে উত্তরপূর্বাঞ্চলের অন্তত ২৫০টি জঙ্গি গোষ্ঠী। অবিলম্বে সেই ঘাঁটিগুলি নির্মূল করার জন্য মায়ানমারকে এ বার সরাসরি অনুরোধ করছে ভারত।
চার দিনের ভারত সফরে নয়াদিল্লি এসে পৌঁছেছেন মায়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন। সঙ্গে তাঁর ১৯ জন মন্ত্রী। আগামী কাল দিনভর ভারতীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। সেই আলোচনায় উত্তর পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত নিয়ে নিজেদের উদ্বেগকে তুলে ধরতে চাইছে নয়াদিল্লি। অরুণাচলপ্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মণিপুর এবং মিজোরাম উত্তরপূর্বাঞ্চলের এই চারটি রাজ্যের সঙ্গে ১৬০০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে মায়ানমারের। আলফা, এনএসসিএন (খাপলাং), ইউএনএলএফ-এর মতো উত্তরপূর্বাঞ্চলের জঙ্গি গোষ্ঠীর সশস্ত্র ঘাঁটি যে সে দেশে রয়েছে, সে ব্যাপারে ধারাবাহিক ভাবে গোয়েন্দা রিপোর্ট এসেছে নর্থ ব্লকের কাছে। পাশাপাশি আলফার ‘সেনাপ্রধান’ পরেশ বড়ুয়া যে মায়ানমারে আত্মগোপন করে থাকছেন, সে ব্যাপারেও নিঃসন্দেহ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সেখান থেকে তিনি নিয়মিত চিনেও যাতায়াত করেন। গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশ ও উত্তরপূর্ব ভারতে অস্ত্র চোরাচালানের মাথা (কিংপিন) হিসাবে পরেশ এখন জমিয়ে ব্যবসা করছেন। সেই কারণেই আলফার অন্য নেতারা সরকারের সঙ্গে আলোচনায় এগিয়ে এলেও তিনি ‘লড়াই’ চালিয়ে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। কিন্তু পরেশকে হাতে পেতে চায় দিল্লি। মায়ানমারের সঙ্গে ভারতের প্রত্যর্পণ চুক্তি নেই। তা সত্ত্বেও নয়াদিল্লি থেইন সেইনকে অনুরোধ করবে, বাংলাদেশের মতো মায়ানমার প্রশাসনও যাতে এই আলফা জঙ্গিকে আটক করে সীমান্তে ভারতের হাতে তুলে দেয়। |
দীর্ঘদিন বাদে সংসদীয় নির্বাচন হয়েছে মায়ানমারে। এপ্রিলে প্রেসিডেন্টের আসনে বসেছেন থেইন সেইন। তার পরে চিন ও ইন্দোনেশিয়া সফর করলেও এই প্রথম তিনি ভারত সফরে। স্বাভাবিক ভাবে এই সফরকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে দিল্লিও। কৃষি থেকে শক্তি বিভিন্ন মন্ত্রকের সর্বোচ্চ প্রতিনিধিরা এসেছেন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। তাঁদের সঙ্গে পৃথক ভাবে বৈঠক হবে ভারতীয় মন্ত্রীদের। ফলে কৃষি, বাণিজ্য, শক্তি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, বিনিয়োগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে বেশ কিছু চুক্তি হতে চলেছে, আজ তার ইঙ্গিত দিয়েছেন বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা। পাশাপাশি তিন বছর আগে শুরু হওয়া ‘কালাদান মাল্টিমোডাল প্রকল্প’ দ্রুত শেষ করার প্রশ্নে জোর দেওয়া হবে। সম্পূর্ণ ভারতীয় অর্থসাহায্যে তৈরি এই ‘ট্রানজিট কাম ট্রান্সপোর্ট’ প্রকল্পটি শেষ হলে উত্তরপূর্ব ভারতের সঙ্গে মায়ানমারের দক্ষিণ অংশের সরাসরি যোগাযোগ সম্ভব হবে। বাণিজ্য-যোগাযোগের ক্ষেত্রে যা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের ‘লুক ইস্ট’ নীতি বাস্তবায়নে সম্প্রতি যথেষ্ট সক্রিয় হয়েছে নয়াদিল্লি। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব বাড়ানোর জন্য অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত এই দু’ধরনের কূটনীতিতেই জোর দেওয়া হয়েছে। গত কালই ভিয়েতনামের সঙ্গে ছ’টি চুক্তি সই করেছে ভারত। চিনের উপরেও এর ফলে পরোক্ষে চাপ বাড়বে। প্রকাশ্যে অবশ্য চিনের উদ্দেশে প্ররোচনামূলক কোনও মন্তব্য করছে না বিদেশ মন্ত্রক। মন্ত্রকের মুখপাত্র বিষ্ণুপ্রকাশ বরং আজ বলেছেন, “চিনের সঙ্গে টক্কর দেওয়া আমাদের লক্ষ্য নয়। ভারত-মায়ানমার সম্পর্ককে চিনের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখাটাও ঠিক নয়।” কিন্তু ঘটনা হল, চিনের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলিতে ভারতের প্রভাব বাড়লে, তা অবশ্যই বেজিংয়ের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। চিনের সঙ্গে সীমান্ত-সহ বিভিন্ন বকেয়া হিসাব মেটাতে এই চাপ কিছুটা প্রয়োজনীয় বলেই মনে করছে নয়াদিল্লি। |