তাঁর রথ যত এগোচ্ছে, ততই প্রধানমন্ত্রী পদ-বিতর্ক লালকৃষ্ণ আডবাণীকে জড়িয়ে ফেলছে। উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে আজ প্রথম জনসভায় সেই মহাবিতর্ক আরও উস্কে দিয়ে উমা ভারতী বললেন, “ওঁর মনের কী ইচ্ছা আমি জানি।” উমার কথায় আবেগাপ্লুত হয়ে চোখের জল মুছলেন অশীতিপর আডবাণী।
বিহার থেকে রথযাত্রা শুরু হওয়ায় আডবাণী কাল জয়প্রকাশ নারায়ণ, রামমনোহর লোহিয়ার আশ্রয় নিয়েছিলেন। উমা আজ সরাসরি বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহের সঙ্গে তুলনা টানলেন আডবাণীর। বললেন, “এই কাশী থেকে আশীর্বাদ নিয়েই বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহ বফর্সের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। আডবাণী ঠিক সে ভাবেই দেশের নেতৃত্ব দিতে পারেন। এর আগেই তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু সে দিন কারও সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই একতরফা ভাবে অটলবিহারী বাজপেয়ীর নাম এই পদের জন্য ঘোষণা করে দিয়েছিলেন আডবাণী। আমার সঙ্গে বাপ-বেটির সম্পর্ক আডবাণীর। ওঁর মনের কী ইচ্ছা আমি জানি।”
আগামী লোকসভা নির্বাচনে ফের আডবাণীর প্রধানমন্ত্রিত্ব নিয়ে এই প্রথম বিজেপির কোনও নেতা খোলাখুলি সওয়াল করলেন। কিন্তু আডবাণীর মনের ইচ্ছাটি ঠিক কী? তিনি আজও বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে নেই। কিন্তু দল এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। আমার এই যাত্রার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রিত্বের কোনও সম্পর্ক নেই। এমনকী বিজেপিরও সম্পর্ক নেই। আমি শুধু দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি।” |
কিন্তু দলের প্রথম সারির নেতাদের অনেকেই মনে করছেন, উমার এই মন্তব্য অপ্রাসঙ্গিক। তাঁকে দলে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছিলেন খোদ আডবাণী। এখন আডবাণীর প্রধানমন্ত্রিত্বের পক্ষে সওয়াল করে উমা দলে নিজের প্রাসঙ্গিকতা বাড়াতে চাইছেন। সাংগঠনিক ভাবে তাঁকে উত্তরপ্রদেশে বেঁধে রাখা হলেও, নিজেকে জাতীয় নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন তিনি।
তবে রথযাত্রায় সফরসঙ্গী এক বিজেপি নেতার মতে, “যাত্রা শুরুর আগে থেকে প্রথম তিন দিন ধরে প্রধানমন্ত্রীর বিতর্ক যে ভাবে আডবাণীর সফরসঙ্গী হচ্ছে, তা এই বর্ষীয়াণ নেতার পক্ষেই যাচ্ছে। কারণ, সঙ্ঘ
তার মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছে, আডবাণীকে আর প্রধানমন্ত্রীর প্রার্থী করা হবে না। এই পরিস্থিতিতে তাঁর যাত্রাকে ঘিরে যে ভাবে এই বিতর্ক দানা
বাধছে, তাতে তাঁর অনুকূলে একটি পরিমণ্ডল তৈরি হচ্ছে। অতীতে বাজপেয়ীর পক্ষে এই ধরনেরই পরিবেশ ছিল। এর সঙ্গে আডবাণীর ভাবমূর্তিও ক্রমশ বদল হচ্ছে। রাম আন্দোলেনর মুখ আডবাণীর ধর্মনিরপেক্ষতাও এখন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।”
কিন্তু প্রকাশ্যে সে কথা অস্বীকার করছেন আডবাণী। তাঁর কথা, “এই যাত্রার মাধ্যমে আমার নতুন ভাবমূর্তি তুলে ধরার কোনও অভিপ্রায়ই নেই।” কিন্তু আরএসএসের পছন্দের সভাপতি নিতিন গডকড়ী রামলীলায় মূর্ছা যান, রথযাত্রার প্রথম দিন দুটি সভা করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন দুই বিরোধী দলনেতা। আডবাণী কিন্তু চুরাশি বছর বয়সেও কোনও ক্লান্তি ছাড়াই রথে চড়ে একের পর এক জনসভা করে যাচ্ছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। নিরন্তর। তাঁর ঘনিষ্ঠ এক নেতার মতে, “এর ফলে আডবাণীর নেতৃত্ব ও দক্ষতাই প্রমাণিত হচ্ছে। যাত্রা যদি সফল হয়, আরএসএসও আর এক বার প্রধানমন্ত্রিত্বের বিষয়টি ভাবতে বাধ্য হবে। আর অভিজ্ঞতা তো তাঁর রয়েছেই। আম-জনতা ও সাধারণ কর্মীদের মধ্যে থেকে যদি চাপ আসে, তা হলে সঙ্ঘের কাছেও খুব বেশি উপায় থাকবে না। আর যাই হোক, দলটিকে তো নিজের হাতে গড়েছেন তিনিই।”
তাঁর এই সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের লড়াইয়ের কাহিনি বর্ণনা করতে গিয়ে উমা যখন পরোক্ষে প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রসঙ্গটি তুলছেন, চোখ থেকে জল গড়াতে শুরু করে আডবাণীর। কী ভাবে নিজের জীবনের পরোয়া না করে আডবাণী রাম মন্দির আন্দোলন করেছেন, বাজপেয়ীকে প্রধানমন্ত্রী করে ‘আত্মত্যাগ’ করেছেন এবং কেন এখন আডবাণীই পারেন মনমোহন সিংহ সরকারকে পরাস্ত করে দেশের নেতৃত্ব দিতে, আডবাণীর সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপচারিতার অনেক কথা প্রকাশ্যে তুলে ধরে উমা তা বর্ণনা করতে থাকেন।
চশমা খুলে চোখের জল মুছতে থাকেন বিজেপির এই প্রবীণ নেতা। |