|
|
|
|
প্রধান শিক্ষিকার পদ নিয়ে জলঘোলা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আসানসোল |
সাসপেন্ড হওয়া প্রধান শিক্ষিকার পুনবর্হাল ঘিরে চাপানউতোরের জেরে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে আসানসোলের মণিমালা উচ্চ বিদ্যালয়ে। হাইকোর্টের নির্দেশে পূর্বতন প্রধান শিক্ষিকা কাজে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু পরিচালন সমিতি সভা ডেকে সিদ্ধান্ত না জানানো পর্যন্ত এত দিন কাজ চালিয়ে আসা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা তাঁকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে রাজি নন। দু’জনেই নিজের মতো কর্তৃত্ব করার চেষ্টা চালানোয় স্কুলের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ।
শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৪ সালে ওই স্কুলে প্রধান শিক্ষিকা পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৩ বছর পরে, ২০০৭ সালে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক কারণ দেখিয়ে স্কুল পরিচালন সমিতি তাঁকে বরখাস্ত করে। মমতাদেবী বলেন, ‘‘এই বরখাস্তের বিরুদ্ধে আমি হাইকোর্টে আবেদন করি। ২০১০ সালে হাইকোর্ট আমার পক্ষে রায় দেয়।” সেই রায়ে বলা হয়েছিল, প্রধান শিক্ষিকার পুনর্নিয়োগের পরে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলির ফের তদন্ত করতে পারে পরিচালন সমিতি। প্রয়োজনে তদন্ত চলাকালীন তাঁকে সাসপেন্ডও করা যেতে পারে।
আদালতের রায় হাতে পেয়ে মমতাদেবী পুনর্নিয়োগ চেয়ে তৎকালীন পরিচালন সমিতির কাছে আবেদন করেন। তাঁর কথায়, “গত বছর ১৫ জুন আমাকে ফের নিয়োগ করা হয়। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্তের জন্য ১৫ ডিসেম্বর আমাকে ফের সাসপেন্ড করে পরিচালন সমিতি।” ইতিমধ্যে পরিচালন সমিতির নির্বাচনে সিপিএম প্রভাবিত অভিভাবক প্রতিনিধিরা অপসারিত হন। নতুন সম্পাদক নির্বাচিত হন তৃণমূল সমর্থিত দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, “আগের পরিচালন সমিতি মমতাদেবীকে অন্যায় ভাবে সাসপেন্ড করেছিল। আমি তাঁকে পুনরায় প্রধান শিক্ষিকা পদে বহাল করে স্কুলের কাজ চালানোর নির্দেশ দিয়েছি। ওঁকে সব দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকাকে বলেছি।”
কিন্তু ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা কল্যাণী রায় সেই ‘নির্দেশ’ মানতে রাজি নন। তাঁর যুক্তি, “পরিচালন সমিতির সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে আমায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমার থেকে দায়িত্ব বুঝে নিতে হলে পরিচালন সমিতির সভা ডেকেই নিতে হবে।” বস্তুত, বর্তমান পরিচালন সমিতিতে দেবাশিসবাবু-সহ ছয় অভিভাবক প্রতিনিধি তৃণমূল সমর্থিত হলেও ন’জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী প্রতিনিধির প্রায় সকলেই সিপিএম প্রভাবিত। ফলে দেবাশিসবাবুদের প্রস্তাব সেখানে পাশ না হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। সিপিএমের আসানসোল জোনাল কমিটির সদস্য তথা এবিটিএ-র লোকাল কমিটির সম্পাদক প্রদীপ মণ্ডলের মতে, “স্কুলের বর্তমান সম্পাদক পরিচালন সমিতিকে এড়িয়ে নিজের খেয়ালখুশি চরিতার্থ করতে চাইছেন। সে কারণেই ওঁরা সভা ডাকতে চাইছেন না।”
দেবাশিসবাবুর পাল্টা বক্তব্য, “প্রধান শিক্ষিকা হাইকোর্টের রায়ে পুনবর্হাল হয়েছেন। ওঁকে দায়িত্ব বুঝিয়ে করার জন্য ডাকার কোনও প্রয়োজন নেই।” মমতাদেবীকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া না হলে বেতনের চেকে সই করবেন না বলেও তিনি জানিয়ে দিয়েছেন। বস্তুত, তিনি চেকে সই না করায় পুজোর মাসে শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা বেতনও পাননি। সমস্যার সুরাহার জন্য দু’পক্ষই জেলা স্কুল পরিদর্শক ও সহকারী পরিদর্শকের দ্বারস্থ হয়েছেন। সহকারী জেলা স্কুল পরিদর্শক দেবপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদককে পরামর্শ দিয়েছি, সভা ডেকে প্রধান শিক্ষিকাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে। আর কোনও রাস্তা নেই।” |
|
|
|
|
|