দুর্গাপুজোর চার দিন রায়গঞ্জে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ব্যাপারে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামার হুমকি দিল উত্তর দিনাজপুর জেলা কংগ্রেস। মঙ্গলবার রায়গঞ্জে দলের তরফে ওই আন্দোলনের নামার কথা জানানো হয়। আন্দোলন কর্মসূচি ঠিক করতে আজ, বুধবার জেলা কংগ্রেসের তরফে বৈঠক ডাকা হয়েছে। জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সন্দীপ বিশ্বাস বলেন, “জেলা পুলিশ সুপারের গাফিলতির জেরে পুজোর দিনগুলিতে রায়গঞ্জে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছিল। বুধবার মোহিতবাবুর নেতৃত্বে জেলা কংগ্রেস কমিটির সদস্যরা আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। ঘেরাও, বিক্ষোভ, পথ আবরোধের মধ্য দিয়ে আন্দোলনে নামা হবে।” জেলা পুলিশ সুপার দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, “কংগ্রেসের অভিযোগ ভিত্তিহীন। পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ তুলে মোহিতবাবুরা রাজনীতি করছেন। পুজোর চারদিন পুলিশ সক্রিয় ছিল। দুর্ঘটনা, খুন এ সব আগাম জানিয়ে হয় না। কোনও রাজনৈতিক চাপের কাছেই পুলিশ নতি স্বীকার করবে না। প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রীকে সব জানাব।” রায়গঞ্জের বিধায়ক বলেন, “পুজোয় আইনশৃঙ্খলা দিকে নজর না-দিয়ে পুলিশ সুপার পুজোর চার দিন বিভিন্ন মণ্ডপে গিয়ে ঢাক বাজিয়েছেন। শিলিগুড়ি মোড়ে নবমীর রাতে আমি নিজে যান নিয়ন্ত্রণের কাজে নেমেছি। জেলা পুলিশের কাজকর্মের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামা ছাড়া উপায় নেই।” পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভের কথা সোমবারই একটি অনুষ্ঠান মঞ্চে জেলার পুলিশ সুপারের সামনেই উত্থাপন করেছিলেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রায়গঞ্জের বিধায়ক। সোমবার রায়গঞ্জের সুপার মার্কেট এলাকার আয়োজক ছিল একটি বেসরকারি সংগঠন। বিভিন্ন পুজো কমিটিগুলিকে শারদ সম্মান দিতে অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল। রায়গঞ্জের বিধায়কের সমালোচনায় ক্ষুব্ধ হয়ে মঞ্চ ছেড়ে চলে যেতে উদ্যত হন পুলিশ সুপার। উদ্যোক্তাদের অনুরোধে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এর পর বক্তব্য রাখতে উঠে পুলিশ সুপারও মোহিতবাবুর বিরুদ্ধে শারদ সম্মান অনুষ্ঠানে রাজনীতি করার অভিযোগ তোলেন। তা নিয়ে দু’জনের মধ্যে বাকবিতন্ডাও হয়। মোহিতবাবুর অভিযোগ, পুজোর চারদিন শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায়নি পুলিশ কর্মীদের। বদলে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ১৮ বছরের কমবয়সী সিভিল ডিফেন্স, এনসিসি এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীদের। সেই কারণেই পুজোর দিনগুলিতে রোজই বাইক দুর্ঘটনা ঘটেছে। বাইকের দৌরাত্ম্যে রাস্তায় নিশ্চিন্তে হাঁটাচলা করতে পারেনি দর্শনার্থীরা। শিলিগুড়ি মোড় এলাকায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে পুজোর ৪ দিন ব্যাপক যানজটে দর্শনার্থীদের নাজেহাল হতে হয়। নবমীর রাতে রায়গঞ্জের বন্দর পোদ্দারপাড়া এলাকার বাসিন্দা সহদেব পোদ্দার (২২) নামে এক যুবক খুন হন। তার মাথায় ভারি কিছু দিয়ে আঘাত করে দুষ্কৃতীরা। শীতলা মন্দির এলাকা থেকে উদ্ধার করে রায়গঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করার পর তিনি মারা যান। ওই ঘটনায় এক কিশোর-সহ ৩ যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করে। জেলা পুলিশ সুপার খুনের ঘটনাটিকে বাইক দুর্ঘটনা হিসাবে চালাতে চাইছিলেন বলেও মোহিতবাবুর অভিযোগ। পরে দলের চাপে ময়নাতদন্তের পর খুনের মামলা শুরু করে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ সুপারের বক্তব্য, ভিত্তিহীন অভিযোগ। |