‘যা হওয়ার হয়েছে। পুরানো কথা ভুলে নতুন করে শুরু করুন’।
কোচবিহারের টাকাগছের বাসিন্দা মৌমিতা সাহার (রায়) বাবা-মাকে ওই অনুরোধ জানালেন বিগ বি, অমিতাভ বচ্চন। তাতেই দু’বছরের মাথায় বরফ গলল। মৌমিতার বাবা রণজিৎবাবু বললেন, “সত্যিই তো, যা হওয়ার হয়েছে। আমি মৌমিতার মাকেও বোঝাব যাতে আর তিক্ততা না-থাকে।” বাবা-মায়ের অমতে ২০০৯ সালে বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন আলিপুরদুয়ার কলেজের স্নাতক রবীন্দ্র সঙ্গীতের বিশারদ মৌমিতা। পাত্র কোচবিহারেরই টাকাগছ এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি সংস্থার কর্মী বাবন রায়। ওই ঘটনায় রুষ্ট হয়ে মৌমিতার বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী রণজিৎ সাহা কিংবা মা তপতী দেবী দীর্ঘদিন মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি। গত বছর মৌমিতার মেয়ে হওয়ার পরে রণজিৎবাবু মাঝেমধ্যে নাতনিকে দেখতে মেয়ের বাড়িতে যান বটে, তপতী দেবী এ পর্যন্ত মাত্র একবারই মেয়ের বাড়িতে গিয়েছেন। গত সোমবার ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’ অনুষ্ঠানে সে কথাই অমিতাভ বচ্চনকে জানিয়েছিলেন মৌমিতা। তার পরেই ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানে মৌমিতার বাবা-মাকে ওই অনুরোধ জানান বলিউডের সুপারস্টার। অনুষ্ঠান চলার সময়ে কোচবিহারে লোডশেডিং হয়ে যাওয়ায় অনুষ্ঠানের ওই অংশটি দেখতে পাননি রণজিৎবাবু। অনুষ্ঠানটি দেখেন কাশ্মীরে বেড়াতে ব্যস্ত তপতী দেবীও। তবে প্রতিবেশী এবং আত্মীয়স্বজনের কাছে সমস্ত ঘটনা জানার পরে মনে আর কোনও দ্বিধা রাখতে চান না রণজিৎবাবু। স্ত্রী বাড়িতে ফিরলে তাঁকে বোঝানোর দায়িত্ব স্বেচ্ছায় নিয়েছেন। |
মঙ্গলবার খাগড়াবাড়ির বাড়িতে বসে রণজিৎবাবু বলেন, “মেয়ের বিয়ে সব আত্মীয়স্বজন যাতে আসেন সেই জন্য আমরাও কারও আমন্ত্রণ মিস করতাম না। সেই মেয়েকে নিজেরা বিয়ে দিতে পারিনি বলে অনেকে নানা কথা বলেন। তবে মেয়ের বিয়ের আয়োজন করতে না-পারার দুঃখ আমরাও ভুলতে চাই। ওঁর মা ফিরলে তাঁকেও বোঝাব আক্ষেপ ধরে না-রাখতে।” ওই মেগা টিভি শো’য়ে মৌমিতা জিতেছেন নগদ ৮০ হাজার টাকা। মৌমিতার দাবি, ‘ফোন অব ফ্রেন্ড’-এ ভুল উত্তরের খেসারতে আর এগোনো হয়নি তাঁর। এদিন মৌমিতার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দেখা গেল টেবিলে স্মারক ও ৮০ হাজার টাকার চেক সাজান। সকাল থেকে সে সব দেখতে আত্মীয়, বন্ধু, পরিচিতেরা ভিড় করছেন। সেই তালিকায় কেবল নেই মৌমিতার বাবা-মা। মৌমিতার কথায়, “নিজে পছন্দ করে বিয়ে করেছি বলে আমাদেরই সবসময়ে মনে হয় মা-বাবা বুঝি পুরোপুরি মেনে নিতে পারেননি। ২০০৯ সালে বিয়ের পরে মা মাত্র একদিন শ্বশুরবাড়িতে আসায় নিজেরও খারাপ লাগে। এসব শুনে অমিতাভজি ওই শোতেই বাবা-মা’র উদ্দেশ্যে সব কিছু ভুলে নতুন করে শুরুর আর্জি জানিয়েছিলেন। জানি না ওঁরা শো’টা দেখেছেন কি না।” পাশেই দাঁড়ানো মৌমিতার শাশুড়ি সবিতা রায় বলছিলেন, “একমাত্র মেয়ে নিজে পছন্দ করে বিয়ে করেছে বলে ওঁর বাবা-মায়ের দুঃখ হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। আমি অবশ্য এসব ভাবিনি। ওকে মেয়ের মতোই কাছে টেনে নিয়েছি। আশা করছি, এ বার আত্মীয়তার বন্ধন আরও দৃঢ় হবে।” ওই টেলিভিশন শো’য়ে মৌমিতা কোচবিহারের রাজ পরিবারের কুলদেবতা মহনমোহনের ছবি অমিতাভ বচ্চনের হাতে তুলে দেন। রাজবাড়ির ছবিও অমিতাভ বচ্চনের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য উদ্যোক্তাদের হাতে দিয়েছেন। মৌমিতা বলেন, “মদন মোহনের ছবিটা বিগ বি বারবার দেখেছেন। অনুষ্ঠানের পরেও ওঁকে ছবিটা একা দেখতে দেখেছি।” |