চিকিৎসার গাফিলতিতে শিশু মৃত্যুর অভিযোগ উঠল আরামবাগের একটি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। দুই চিকিৎসক-সহ চার জনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃত শিশুর পরিবার-পরিজন।
মঙ্গলবার ভোরে এই ঘটনার জেরে কোর্ট রোডের গায়ে ওই নার্সিংহোমে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। নার্সিংহোমের মালিক তথা প্রসূতি চিকিৎসক কালীদাস ঘোষ-সহ কর্মীদের ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখার লোকজন। সকাল ১০টা নাগাদ পুলিশ যায়। পরে থানায় অভিযোগ দায়ের হয় কালীদাস ঘোষ, শিশু চিকিৎসক অনাথবন্ধু দাস, কর্তব্যরত নার্স স্বান্তনা দাস-সহ চার জনের বিরুদ্ধে। পুলিশ জানায়, তদন্ত শুরু হয়েছে। শিশুটির দেহ ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোম সূত্রের খবর, সঙ্গীতা কোনার নামে এক প্রসূতিকে শনিবার রাত ৩টে নাগাদ ভর্তি করা হয়েছিল নার্সিংহোমে। তাঁর শ্বশুর বাড়ি গোঘাটের সীতানগর গ্রামে। বাপের বাড়ি বাঁকুড়া জেলার কোতুলপুর থানার কারকবেড়িয়ায়। প্রসব যন্ত্রণা ওঠার সময় সঙ্গীতা ছিলেন বাপের বাড়িতে। তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল কোতুলপুরের গোবরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখান থেকে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয়। পরে আনা হয় আরামবাগের নার্সিংহোমে।
রবিবার সকালে অস্ত্রোপচারের পরে ওই বধূ পুত্রসন্তান প্রসব করেন। সঙ্গীতাদেবীর মামা রঞ্জনকুমার পানের অভিযোগ, প্রসূতি চিকিৎসক বলেছিলেন, শিশুর কিছু অস্বাভাবিকতা আছে। বর্ধমানে নিয়ে যেতে হতে পারে। শিশু চিকিৎসককে ডেকে তাঁর পরামর্শ মতো পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে বলে জানান তিনি। রঞ্জনবাবুর দাবি, এরপর তাঁকে আর কিছু জানানো হয়নি। মঙ্গলবার ভোরে ভাগ্নির ফোন পান রঞ্জনবাবু। জানতে পারেন, সদ্যোজাতটির নাক-মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে। সোমবার রাতে একটি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছিল তাকে। তারপর থেকে ছটফট করছে। সঙ্গীতার মামার কথায়, “এ দিন সকাল ৬টা নাগাদ এসে দেখি বাচ্চা অনেক আগেই মারা গিয়েছে। দেহ শক্ত হয়ে পড়ে আছে। কী ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছিল, তা জানতে চাইলে চিকিৎসক ও নার্সরা দুর্ব্যবহার করেছেন।” রঞ্জনবাবুর প্রশ্ন, অবস্থার অবনতি হয়ে থাকলে কেন শিশুটিকে বর্ধমান নিয়ে যাওয়ার কথা আগে বলা হল না। চিকিৎসকদের অবহেলায় শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন সঙ্গীতার বাড়ির লোকজন।
এ ব্যাপারে কালীদাসবাবু বলেন, “ঘটনাটি দুঃখজনক। কিন্তু আমাদের কোনও গাফিলতি ছিল না। শিশুটির অনেক অস্বাভাবিকতা ছিল।” সঠিক সময়ে কেন তাকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হল না, সে প্রশ্নের সদুত্তর অবশ্য মেলেনি কালীদাসবাবুর কথায়। শিশুটির কী অস্বাভাবিকতা ছিল? অনাথবন্ধুবাবু জানান, সদ্যোজাতের ওজন ছিল মাত্র ২ কেজি ২০০ গ্রাম। শিড়দাঁড়া বাঁকা ছিল। জন্মের পরে কাঁদতে অনেক দেরি করে।” শিশুটির মৃত্যু ‘বেদনাদায়ক’ বলে মন্তব্য করে ওই চিকিৎসকের দাবি, “আমি বাড়ির লোককে পরিষ্কার বলে দিয়েছিলাম, তাঁরা চাইলে বর্ধমানে নিয়ে যেতে পারেন। সোমবার বিকেলে এসে দেখেছিলাম শিশুটি ভাল আছে।” |