লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে কেনা হয়েছিল অত্যাধুনিক শয্যা। প্রতিটি শয্যার জন্য ছিল কম্পিউটারচালিত বিশেষ ‘সিস্টেম’। এর পর থেকে পেরিয়ে গিয়েছে সাত-সাতটি বছর। কিন্তু এখনও চালু হল না চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ)। অত্যাধুনিক ব্যবস্থাযুক্ত বিভাগটি এখন হাসপাতালের ব্যবহার্য জিনিসের গুদাম ঘরে পরিণত হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, মূলত দক্ষ কর্মীর অভাবেই বিভাগটি চালু করা যাচ্ছে না। ফলে, সদর হাসরপাতালে এসেও সঙ্কট কাটছে না মুমুর্ষূ হৃদরোগীদের। |
হুগলি জেলার সদর হাসপাতাল ইমামবাড়ায় ২০০৪ সালে তদানীন্তন বাম সরকারের আমলে বিভাগটি তৈরি করা হয়েছিল। হাসপাতাল সূত্রের খবর, বিভাগটি তৈরি করতে খরচ হয়েছিল ৩০ লক্ষাধিক টাকা। ৮ শয্যা বিশিষ্ট এই বিভাগে ৪ জন মহিলা এবং ৪ জন পুরুষ রোগীর চিকিৎসা হওয়ার কথা ছিল। যাতে, জেলার বিভিন্ন প্রান্তের হৃদরোগ-সংক্রান্ত চিকিৎসা এখানে করা যায়। যদিও, চিকিৎসা শুরুই করা যায়নি এখানে। তার বদলে এই বিভাগ এখন হাসপাতালের দৈনন্দিন ব্যবহৃত সরঞ্জাম, ওষুধের ‘গুদাম ঘর’।
হাসপাতালের পিছন দিকে নবনির্মিত ভবনের দোতলায় উঠলেই চোখে পড়বে ‘আইসিইউ’ লেখা সবুজ পর্দা ঢাকা বন্ধ জানলা। একটু এগোলে দেখা যাবে চেন-তালা লাগানো বন্ধ দরজা। দরজার পাশেই সাবধানতার ফলকটি এখনও উজ্জ্বল। কাচের ভিতরে চোখ রাখলে রোগীর দেখা অবশ্য মিলবে না। দেখা যাবে, ডাঁই করে রাখা গজ, সিরিঞ্জ, অক্সিজেন সিলিন্ডার-সহ হাসপাতালের ব্যবহার্য নানা সামগ্রী। আর চোখে পড়বে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা অব্যবহৃত ‘কম্পিউটারাইজড মনিটরিং’ ব্যবস্থাযুক্ত বেহাল শয্যাগুলি। সেগুলি আদৌ ব্যবহারের অবস্থায় আছে কিনা, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই সে ব্যাপারে সন্দিহান। সেখানে জমেছে পুরু ময়লা। যে বিভাগে বাইরের ধুলো-ময়লা এবং দূষিত আবহাওয়া থেকে সম্পূর্ণ বিপন্মুক্ত পরিবেশ থাকা দরকার, সেখানে এখন যেন ধুলোর চাষ হচ্ছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, স্বাস্থ্য দফতর থেকে দক্ষ কর্মী (টেকনিসিয়ান) বরাদ্দ না করায় বিভাগটি চালু করা যাচ্ছে না। এর ফলে, জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা রোগীরা উপযুক্ত চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এখান থেকে কলকাতার পথে সেই রোগীকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রেই মুমুর্ষূ রোগীকে স্থানান্তরিত করার পথে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটেছে।
হাসপাতাল সুপার শ্যামলকুমার চক্রবর্তী বলেন, “সাত বছর আগে ইউনিটটি তৈরি হয়েছিল। তখন আমি এই হাসপাতালে ছিলাম না। এখন এটুকু বলতে পারি, প্রকৃত পরিকাঠামোর অভাবে বিভাগটি চালু করা যাচ্ছে না। আমরাও চাই যত দ্রুত সম্ভব পরিকাঠামোর মানোন্নয়ন ঘটিয়ে আইসিইউ-র মতো একটি জরুরি বিভাগ চালু হোক।”
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক উন্মেষ বসু বলেন, “আইসিইউ-র জন্য যে লোকবল বা অন্য পরিকাঠামো প্রয়োজন হয়, তা এখানে নেই। রাজ্য সরকারের কাছে এ ব্যাপারে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। নতুন করে ৬ লক্ষ টাকাও বরাদ্দ হয়েছে। পরিকল্পনা চলছে। যত শীঘ্র সম্ভব সদর হাসপাতালে এই জরুরি বিভাগটি চালু করার চেষ্টা চলছে।”
পরিকল্পনা কবে বাস্তবায়িত হয়, আপাতত তার উপরেই নির্ভরশীল বহু হৃদরোগীর আধুনিক চিকিৎসা। |