এসো মা লক্ষ্মী বসো ঘরে। লাল পেড়ে সাদা তসরের শাড়ি পরা প্রবীণা লক্ষ্মী পুজোর উপাচার গুছোতে গুছোতে গুনগুন করে মুখস্ত পাঁচালি সুর করে গেয়ে চলেছেন। চাকদহ থেকে বনগাঁর রাস্তায় কয়েক কিলোমিটার গেলেই সিলিন্দা মোড়। আসপাশে বেশ কয়েকটি গ্রাম দরাপপুর, হিংনাড়া, হরিআঁখি। পুজোর আনন্দে ভাসছে গোটা অঞ্চল।
দুর্গা পুজোর বিজয়া থেকেই এখানে উৎসবের শুরু। প্রবাসীরা বাড়ি ফেরেন। এলাকার মানুষজন ঘর সাজান, আলপনা দেন। লক্ষ্মীর সরা তৈরি করেন। দুর্গা পুজোর মতো করেই এখানে লক্ষ্মী পুজো হয়। কোজাগরী পূর্ণিমায় লক্ষ্মী পুজোর সূচণা। আর তার দু’দিন পরে বিজয়া হয়। বিজয়ায় মেলা বসে। বারোয়ারি লক্ষ্মী পুজো বিভিন্ন জায়গায় হলেও চাকদহের এই অঞ্চলের লক্ষ্মী পুজোর বৈশিষ্ট্য হল এই মেলা। মেলায় চারপাশের কয়েক’শ প্রতিমা আসে।
বারোয়ারি পুজো ছাড়াও বেশ কয়েকটি বড় বাজেটের বাড়ির পুজো হয়। এর মধ্যে একটি হল হিংনাড়া বল্লভপুরে। মাস্টার মুকুন্দচন্দ্র মল্লিকের বাড়ির পুজোর এবার ৫৬ বছর। এখানেও থিম হয়েছে বারো মাসে তেরো পার্বণ। বাড়ির আঙিনায় ছোট ছোট মণ্ডপ করে তেরো পার্বণএর উপমা তুলে ধরা হয়েছে। বাড়ির সদস্য প্রভাস মল্লিক বলেন, “লক্ষ্মী ধন ও ধানের দেবী। আমাদের এখানে সাবেকী প্রতিমা হয়। লক্ষ্মী পেঁচা আসে। কল্পিত কাহিনীও আছে। দুর্গা পুজোর থেকেও বড় আকারে এখানে লক্ষ্মী পুজো হয়ে আসছে বহু বছর ধরে।” হরিআঁখির অগ্রদূত সংঘের পুজোয় এবারের থিম রাজস্থানের মন্দির। কমকর্তাদের একজন অজিত পাল বলেন, “আমাদের এখানে লক্ষ্মী পুজোই সবথেকে বড় উৎসব। দুর্গা পুজো হয় ঠিকই। কিন্তু তেমন জাঁক-জমক হয় না। পাঁচশ’রও বেশি লক্ষ্মী পুজো হয় এই এলাকায়। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি বাড়ির পুজো। পুজো এক দিন হলেও তারপর দু’দিন ধরে চলতে থাকে উৎসব। বহু দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসেন পুজো দেখতে। এখন তো বহু থিমের মণ্ডপ হয়।” দরাপপুর নিলম সংঘের পুজোয় দক্ষিনের মহাবলিপুরমের মন্দির। রায় বাড়ির পুজোও হয় ধূমধাম করে। সারা রাত ধরে চলে পুজো-পাঠ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান লক্ষ্মী পুজোয় পেঁচা দেখা গেলেই তাঁদের বিশ্বাস মায়ের আবির্ভাব হয়েছে। বছরভর ধানের গোলা আর সবজির খেত ভরা থাকবে। |