হারিয়ে গিয়েছে সুখাদ্যের গোপন ঠিকানা
বিভক্ত বাংলার বরিশাল জেলার অখ্যাত গ্রাম মির্জাপুরে আশ্বিনের সন্ধ্যা নামত অন্য ভাবে। গ্রামের সবার উপরে সকাল বেলাতেই ‘ফরমান’ জারি করে দিতেন যোগ দিদা, ‘আজ দুপুরে পাক হবে।’ ব্যস। সে খবর মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ত স্নানের ঘাট থেকে প্রতিটি বাড়ির অন্দরমহলে।
তারপরে দুপুরে খাওয়াদাওয়া শেষ করে হেঁসেল গুছিয়ে আধ ঘণ্টা টাক বিশ্রাম। এরপরে এক এক করে সব বাড়ির বৌদের পা পড়ত যোগমায়াদেবীর উঠোনে। সেখানেই ঠিক হয়ে যেত, সেই দিন কার বাড়িতে পাক হবে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলে উঠোনে জ্বলে উঠত হ্যারিকেন, কুপি, লম্ফ। তাতে যতটুকু আলো পৌঁছয় পৌঁছল। বাকিটা অন্ধকার। সেখানেই গ্রামের মহিলারা গোল হয়ে বসে নীরবে তৈরি করছেন অবিশ্বাস্য সব সুখাদ্য। আর মাঝখানে জলচৌকির উপরে মধ্যমণি হয়ে বসে রয়েছেন প্রবীণা যোগমায়াদেবী। তাঁর সস্নেহ কিন্তু কড়া চোখ থেকে রক্ষা নেই কারও। সব সারা হতে হতে রাত ৮টা।
ছোট বেলায় দেখা সেই কোজাগরীর প্রস্তুতির কথা শোনাচ্ছিলেন নিভারানি সাহা। মধ্য ষাটের নিভারানিদেবীর দিদিমা ছিলেন যোগমায়াদেবী। নাতনির কথায়, “দিদিমা যে কত রকমের খাবার জানতেন, বলতে পারি না। আমাদের এলাকার গৌরব ছিলেন তিনি। তাঁর হাতের আস্তিনে রাখা থাকত, নানা সুখাদ্যের গোপন ঠিকানা। আর সেটাই বিজয়া দশমী থেকে লক্ষ্মীপুজোটয় কেল্লা ফতে করে দিত। অন্য এলাকার কেউ সুখাদ্যের পাল্লা দিয়ে পারত না।” কী না থাকত সেখানে। তক্তি থেকে নাড়ু, মোয়া থেকে পিঠে। খাজা থেকে গজা। সব থেকে আশ্চর্য, যোগমায়াদেবীর নিয়ম ছিল, এক এক দিন এক একটি বাড়ির জন্য খাবার তৈরি হবে। কিন্তু তা তৈরিতে অংশ নেবেন পাড়ার সকলেই। নিভারানি বলেন, “এই উৎসাহের মধ্যে দিয়েই আমাদের ছোটবেলায় কোজাগরীই ছিল সব থেকে বড় উৎসব।” কিন্তু তখন লক্ষ্মীসরার গায়ে বেশিরভাগ সময়ে আঁকা হত রাধাকৃষ্ণ বা দুর্গার চিত্ররূপ। পিছনে বিরাট কলাবৌ, তার সামনে সরা, আর সবার সামনে ঘট। এই পুজোকে ঘিরেই সমারোহ যেন কখনও কখনও দুর্গাপুজোকেও ছাপিয়ে যেত। সেই দিন কী হারিয়ে গিয়েছে?
চাকরিজীবী আল্পনা মল্লিক বলেন, “সেই সব দিনের সঙ্গে আমাদের প্রধান পার্থক্য সময়ের অভাব। প্রতিবেশীদের প্রতি ভালবাসা যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে সংস্কৃতির প্রতি টান। আর সুখাদ্য কে না খেতে চায়? কিন্তু সময় কোথায়?” রত্না হাজরার বক্তব্য, “ছোট ছোট পরিবার হয়ে যাওটাও একটা সমস্যা। এখন পরিবারে লোক কম। রুচিও তাই বদলে যাচ্ছে। যেটুকু সময় মিলছে, তা কাটানোর জন্য লোক বেছে নিচ্ছেন সোজা বিনোদন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.