সারের মূল্যবৃদ্ধিতে সঙ্কটে কৃষিজীবীরা
চমকা সারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় রাজ্য জুড়ে সার-সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে।
চাহিদার তুলনায় যোগান কম হওয়ায় সারের বাজার এখন অগ্নিমূল্য। সম্প্রতি নবদ্বীপ রেলগেটের কাছে স্থানীয় বিক্রেতা এবং চাষিরা ইউরিয়া বোঝাই একটি লরি আটক করেন। খবর পেয়ে নদিয়ার বিভিন্ন এলাকার চাষিরাও ঘটনাস্থলে পৌঁছে লরি ঘেরাও করে রাখেন। পরে কৃষি দফতরের আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তাঁদের কাছে নির্ধারিত দামে ওই সার বণ্টনের দাবি তোলেন এলাকার কৃষিজীবী মানুষ। প্রশাসন অবশ্য ওই সার বাজেয়াপ্ত করে।
চাষিদের কথায়, খোলা বাজারে সারের দাম আকাশছোঁয়া। যেমনইউরিয়া ৫০ কিলো বস্তা ২৭৮ টাকা ৮৬ পয়সা অথচ বাজারে ৩৮০ টাকা। আর এখন ধানের মরশুমে সব থেকে বেশি চাহিদা ইউরিয়া সারের। শুধু ইউরিয়া কেন, সুফলা ৩৭২ টাকার বস্তা এবারে ৬১৫ টাকায় কিনতে হয়েছে। নাইট্রোজেন-পটাশ-ফসফেট এর মিশ্রণ, যা ১০-২৬-২৬ নামে বেশি পরিচিত, ৪৫০ টাকার বস্তা ৭২০-৭২৫ টাকায় কিনতে হয়েছে চাষিদের। ডিএপি ৪৮৪ টাকার বস্তা কম-বেশি ৯০০ টাকায় কিনতে হয়েছে। সারের আকাশছোঁয়া দামে ধানের মরশুমে সমস্যায় পড়েতে হয়েছে চাষীদের। তাঁদের আশঙ্কা, সার সঙ্কটের প্রভাব পড়তে চলেছে সামনের আলু চাষের মরশুমেও। আলু চাষের মরশুমে ১০-২৬-২৬ সারের চাহিদা অনেকাংশে বেড়ে যায় প্রতিবারই। তবে এ বারের সার-সঙ্কটে আলু চাষেও ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
স্বাভাবিক ভাবেই চাষিদের পক্ষে এই বর্ধিত দামে সার কেনা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এর পাশাপাশি বাড়ছে সার নিয়ে দুর্নীতি ও কালোবাজারি। আর সার নিয়ে কালোবাজারি হওয়ার কথা স্বীকার করেন বিভিন্ন জেলার কৃষি দফতরের আধিকারিকরাও। নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের যুগ্ম কৃষি অধিকর্তা হরেন্দ্রকুমার ঘোষ বলেন, “এর সুযোগ গ্রহণ করে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী কৃত্রিম ভাবে বাজারে আকাল তৈরি করে চড়া দামে সার বিক্রি করছে। এক জেলার জন্য নির্দিষ্ট সার বেআইনিভাবে অন্য জেলায় গোপনে পাচার করা হচ্ছে। গত অগস্ট মাসে এ সব কারণে আমরা নদিয়াতে ৫৬ জন সার ব্যবসায়ীকে বরখাস্ত করেছি। আর শো-কজ করা হয়েছে প্রায় দেড়শো জনকে।”
সার নিয়ে গরমিলের জেরে মুর্শিদাবাদ জেলা কৃষি দফতর ৫৭০ জন সার ব্যবসায়ীর মধ্যে ২৫০ জনকে শো-কজ করেছে। ৫০ জনের সার বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে আর বরখাস্ত করেছে ১০ জনকে। হরেন্দ্রবাবু বলেন, “সারের চাহিদা রয়েছে সর্বত্রই। নদিয়া লাগোয়া বর্ধমানে সারের চাহিদা অনেক বেশি। তাই ছুটির দিনে বা সরকারি অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর গোপনে ওই পাচার চলছে।”
এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ কৃষি উপকরণ ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য সম্পাদক নরেশ দাস বলেন, “প্রয়োজনের তুলনায় কম সার যোগানের ফলেই ওই সমস্যা তৈরি হয়েছে। নদিয়ায় যেমন সাত হাজার টন ইউরিয়া প্রয়োজন কিন্তু এসেছে মাত্র সাড়ে ৫ হাজার টন। ফলে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।” তবে খোলা বাজারে সারের আকাশছোঁয়া দামের কারণ কী? নরেশবাবু অবশ্য বলেন, “এর সঠিক কারণ আমার জানা নেই।”
তিনি জানান, ১ টন সার বিক্রি করে লাভ ১৮০ টাকা। তার মধ্যে পরিবহণ খরচও রয়েছে। এই দর ১৯৮০ সাল থেকে চলে আসছে। অথচ গত ৩০ বছরে পরিবহণ মূল্য কত বেড়েছে তা হিসেবে বাইরে। এই অবস্থায় গত সপ্তাহে সরকার পরিবহণ ব্যয় বহণ করতে রাজি হয়েছে। এতে কিছুটা সুরাহা হবে। সার ব্যবসায়ীদের দাবি, ওই ১৮০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৮০০ টাকা করতে হবে।
পূর্বস্থলীর সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, “সারের সঙ্কটের পিছনে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি কারণ রয়েছে। আমাদের রাজ্যে চাষিদের রাসায়নিক সার ব্যবহারের প্রবণতা অত্যন্ত বেশি। এখানকার চাষিরা জৈব সার ব্যবহার করতে চান না। মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি কমে গিয়েছে। এ দিকে জনসংখ্যার বৃদ্ধির সঙ্গে জমির পরিমাণ বাড়ছে না। স্বভাবতই চাপ পড়ছে জমির উপরে। অতিরিক্ত ফলনের চাহিদা মেটাতে চাষিদের রাসায়নিক সার ব্যবহারের প্রবণতাও বাড়ছে। এতে সার সঙ্কট তীব্র হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.