সংস্থার আর্থিক সংকট চলাকালীন শ্রমিকদের বেতন থেকে যে টাকা কেটে নেওয়া হয়েছিল, তা ফেরতের দাবিতে মঙ্গলবার কাজ বন্ধ করে দিলেন হাওড়ার সাঁকরাইলের ডেল্টা জুটমিলের বেশিরভাগ শ্রমিক। ফলে এ দিন কারখানায় উৎপাদন ব্যহত হয়।
এই চটকলে রয়েছে তিনটি ইউনিট। সংস্থা সূত্রের খবর, ২০০৬ সালে এখানে আর্থিক সংকট দেখা দেয়। ওই সময়ে দু’টি ইউনিটের শ্রমিকদের বেতন থেকে প্রতিদিন যথাক্রমে ২৫ এবং ১৫ টাকা করে কেটে নেওয়ার প্রস্তাব দেন কর্তৃপক্ষ। শ্রমিক সংগঠনগুলি ওই প্রস্তাবে রাজি হয়। কথা হয়, তিন বছর ধরে টাকা কেটে নেওয়া হবে। তিন বছর পর থেকে যে ভাবে টাকা কাটা হয়েছিল সেই ভাবেই টাকা ফেরত পাবেন শ্রমিকেরা। সেই মতো, ২০০৬ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দু’টি ইউনিটের শ্রমিকদের কাছ থেকে প্রতিদিন টাকা কেটে নেওয়া হয় বলে কারখানা সূত্রের খবর।
শ্রমিকদের দাবি, ২০০৯ সাল থেকে কেটে নেওয়া টাকা ফেরত দেওয়ার কথা। অভিযোগ, বার বার বলা সত্ত্বেও বকেয়া টাকা ফেরত দেননি কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার একটি ইউনিটে সকালের শিফট্-এ কাজ হলেও দুপুরের শিফট্-থেকে কাজ বন্ধ করে দেন শ্রমিকেরা। অন্য ইউনিটে সকাল থেকেই কাজ বন্ধ করা হয়। তৃতীয় ইউনিটে অবশ্য কাজ হয়েছে। তিনটি ইউনিট মিলিয়ে কাজ করেন প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক। তার মধ্যে প্রায় চার হাজার শ্রমিক এ দিন কাজ বন্ধ করে দেন।
সংস্থার পক্ষে প্রতীপ বক্সি বলেন, “কারখানায় কিছু সমস্যা রয়েছে। কিন্তু কাজ বন্ধ করে দিলে তো সমাধান হবে না। আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করতে হবে। সোমবার রাতেও শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে এ ব্যাপারে আমাদের আলোচনা হয়েছে। অথচ মঙ্গলবার সকাল থেকে শ্রমিকেরা কারখানা ছেড়ে চলে গেলেন।”
বেশিরভাগ শ্রমিক সংগঠন অবশ্য জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে দাবি আদায় করতে না-পেরে শ্রমিকেরা নিজেরাই কর্মবিরতির রাস্তা বেছে নিয়েছেন। কর্মবিরতি পালন করার আগে তাঁদের সঙ্গে শ্রমিকেরা কোনও আলোচনা করেননি বলে এই সব সংগঠনের নেতারা জানান।
কারখানায় আইএনটিইউসির সভাপতি মোশারফ মোল্লা বলেন, “আমরা বহু বার কর্তৃপক্ষের কাছে শ্রমিকদের টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। শেষ পর্যন্ত সেই টাকা না-পেয়ে শ্রমিকেরা নিজেরাই কর্মবিরতি পালন করেছেন। আমরা আর কী করব?”
সিটু নেতা স্বপন কাঁড়ার বলেন, “শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি মানেননি কর্তৃপক্ষ। তার ফলেই শ্রমিকেরা কর্মবিরতির পথে গিয়েছেন। মালিকপক্ষই এই পরিস্থিতির জন্য অনেকটা দায়ী।” অন্য দিকে, কারখানায় তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের নেতা শেখ আহমেদ বলেন, “আমাদের দলের নির্দেশ হল উৎপাদন চালু রেখে আন্দোলন করতে হবে। কর্মবিরতি না-করার জন্য আমরা শ্রমিকদের বুঝিয়েছি। কিন্তু বেশিরভাগ শ্রমিক আমাদের কথা শোনেননি।”
কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছেন এই ঘটনার পরেও তাঁরা আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধানে আগ্রহী। এ বিষয়ে প্রতীপবাবু বলেন, “কারখানায় লকআউট ঘোষণা করা হয়নি। শ্রমিকেরা চাইলে কাজে যোগ দিতে পারেন। উৎপাদন চালু রেখে আলোচনার দরজা সব সময় খোলা রয়েছে।” |