ডানলপের সাহাগঞ্জ কারখানায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র (ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট) তৈরিতে নীতিগত কোনও আপত্তি নেই বলে জানিয়ে দিল রাজ্য সরকার। কারখানা পুনরুজ্জীবনে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র সহায়ক হলে, তার অনুমোদন সংক্রান্ত সমস্ত বিষয়ে সাহায্য করতেও রাজ্য প্রস্তুত।
এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, “কারখানা সুষ্ঠু ভাবে চালাতে ডানলপ কর্তৃপক্ষকে সুযোগ দেওয়া উচিত। ওঁরা ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরির কথা বলছেন। এই প্রকল্পটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ডানলপ কর্তৃপক্ষকে সাহায্যের জন্য তৈরি সরকার।”
তবে বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার বিষয়টিকে সামনে রেখে কারখানায় উৎপাদন শুরু নিয়ে কর্তৃপক্ষের দীর্ঘসূত্রতা রাজ্য যে বরদাস্ত করবে না, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন শ্রমমন্ত্রী। তিনি বলেন, “ডানলপের শ্রমিকেরা দীর্ঘদিন ধরেই সমস্যায় রয়েছেন। তাই কারখানা খোলা নিয়ে আর দেরি করা ঠিক নয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরিতে সব রকম সাহায্য করবে সরকার। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যে, সেই কাজ সামনে রেখে ডানলপে উৎপাদন শুরুর বিষয়টি যেন বিলম্বিত না হয়। এ নিয়ে দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকতে আর রাজি নয় রাজ্য। পুরো বিষয়টি নিয়ে শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে কথাও বলব আমি।”
এ প্রসঙ্গে ডানলপ কর্তৃপক্ষর বক্তব্য, “অর্থ নয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির জন্য আবশ্যিক অনুমতিটুকুই চাইছি আমরা।” সংস্থার অভিযোগ, “অনেক আগে থেকেই এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার জন্য পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র পেতে সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে কোনও সাড়া মেলেনি।”
ডানলপের সাহাগঞ্জ কারখানাকে প্রায় গোড়া থেকেই তাড়া করে ফিরছে বিদ্যুৎ নিয়ে সমস্যা। বিশেষত এই কারখানা বন্ধ থাকার সময় পুঞ্জীভূত প্রায় ১৩ কোটি টাকা বকেয়া বিদ্যুৎ বিল। পূর্বতন বাম সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে প্রথমে টানাপোড়েন তৈরি হলেও, বাম জমানার শেষের দিকেই ওই টাকা মিটিয়ে দিতে রাজি হয় সংস্থা। একই সঙ্গে প্রস্তাব দেয় সংস্থার নিজস্ব বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হলে, তার ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম (ডব্লিউবিএসইডিসিএল)-এর গ্রিডে দিতে পারবে ডানলপ। ওই কেন্দ্রে ইউনিট-পিছু বিদ্যুৎ তৈরির খরচ কত, তা নির্ধারণ করবে বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। পর্ষদ রাজি হলে ওই খরচের সঙ্গে আরও ১৭ শতাংশ অতিরিক্ত ধরে নির্ধারিত দামে তা গ্রিডে দিতে পারবে সংস্থা। এই সব ক্ষেত্রে সাধারণত যা লাভজনক হয় সংস্থার পক্ষে। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, এই ‘ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট’ গড়তে পারলে প্রায় শূন্যে এসে দাঁড়াবে কারখানায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের খরচ। একই সঙ্গে, আয়ের পাকা রাস্তাও তৈরি করে ফেলতে পারবে সংস্থা।
এই ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির জন্য প্রাথমিক ভাবে পরিবেশ দফতরের অনুমতি প্রয়োজন। সেই অনুমতি মিললে তবেই অন্যান্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন জোগাড়ের চেষ্টা করতে পারে সংস্থা। কিন্তু বাম জমানায় ওই প্রাথমিক অনুমতিটুকুই মেলেনি বলে রুইয়া গোষ্ঠীর অভিযোগ। সোমবার শিল্পমন্ত্রী ও শ্রমমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার অনুমোদন দ্রুত পাওয়ার জন্যই আর্জি জানিয়েছেন ডানলপ কর্তৃপক্ষ।
সরকার ও কর্তৃপক্ষের দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পর কারখানার দরজা খোলার দাবি নিয়ে নিজেদের অবস্থান ঠিক করতে আজ, বুধবার ফের বৈঠকে বসছে সদ্য গঠিত ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’। ডানলপে এই কমিটি তৈরি হয়েছে তিন শ্রমিক সংগঠন সিটু, আইএনটিইউসি এবং আইএনটিটিইউসি মিলে। যেখানে শ্রমিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূল ও সিটু-র একই ছাতার তলায় আসাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে।
ডানলপের সিটু ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বিতান চৌধুরী বলেন, “পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে বুধবার দুপুরের বৈঠকে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করা হবে।” জেলা আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি বিদ্যুৎ রাউতের বক্তব্য, “কারখানা খুলতে সরকারের পদক্ষেপ করার পাশাপাশি কর্তৃপক্ষেরও ইতিবাচক ভূমিকা প্রয়োজন।” |