শহরের ভিতরে প্রধান প্রধান রাস্তা মোরাম বা পাথরের। ওই সব রাস্তা দিয়ে ভারী, হালকা সব ধরনের যানবাহন চলাচল করে। এর ফলে রাস্তা থেকে ধুলো ওড়ায় সমস্যায় পড়েছেন পথচলতি মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা। স্বভাবতই দাবি উঠেছে, ধুলোর দূষণ ঠেকাতে পুরসভা অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। না হলে তাঁরা শহরের জায়গায় জায়গায় পথ অবরোধ করতে বাধ্য হবেন। সমস্যাটি রামপুরহাট শহরের।
ওই দাবিতে ইতিমধ্যে শহর যুব কংগ্রেস ও কংগ্রেস নেতৃত্ব শহরের ব্যস্ততম এলাকা পাঁচমাথা মোড়ে ঘণ্টাখানেক অবরোধ করেছিলেন। শহরের রাস্তাগুলি পিচ করার ক্ষেত্রে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার হুঁস নেই বলে অভিযোগ এলাকার বাসিন্দাদের। যদিও পুরসভার আশ্বাস, পিচ কেনা হয়ে গিয়েছে। শুকনো আবহওয়া পেলে পিচ করা হবে।
সম্প্রতি অতিবর্ষণ, নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে শহরের ভিতরে ভারী যানবাহন চলাচলের দাপটে খানাখন্দে ভরে গিয়েছে রামপুরহাট শহরের প্রধান প্রধান রাস্তা। সংস্কারের কাজ মাসখানেক আগে শুরু করেছিল তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা। রাস্তা সংস্কারে পাথরের সঙ্গে মোরাম ব্যবহার করা হয়েছিল। এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাস্তা সংস্কারে নিম্নমানের মোরাম ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে বৃষ্টিতে মোরামের কাদায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রামপুহাটের সানঘাটা মোড় থেকে কামারপট্টি যাওয়ার রাস্তায় দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন অন্তত ১৫ জন মোটরবাইক আরোহী। তাঁদের মধ্যে নলহাটি থানার বুজুং গ্রামের ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বাইক দুর্ঘটনায় জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। |
তবুও পুজোর আগে রাস্তা পিচ করেনি পুরসভা। যদিও দুর্গাপুজোর চার দিন মোরাম ও পাথরের ধুলো ঠেকাতে পুরসভার তরফ থেকে দিনে একবার রাস্তাগুলিতে জল ছিটানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন করার পরের দিন থেকেই রাস্তায় জল দেওয়া বন্ধ করে দেয় পুরসভা। ফলে আগের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পাঁচমাথা মোড় থেকে বিদ্যাভবন স্কুল, সানঘাটা মোড় থেকে কামারপট্টি মোড়, ধূলাডাঙা রোড, কামারপট্টি মোড় থেকে পালিরামের মোড়, রামপুরহাট চাঁদমারি রেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকাগুলি হালকায় আকাশ যানবাহন চলাচল করলেই ধুলোয় ছেয়ে যাচ্ছে।
সানঘাটামোড় থেকে কামারপট্টি যাওয়ার রাস্তায় খাবারের দোকান রয়েছে বদ্রি প্রসাদের। তিনি বলেন, “মোরামের ধুলো থেকে বাঁচতে সব সময় ঝাড়ু মারতে হচ্ছে।” রাপুরহাট শহরের অন্যতম ইন্টারনেট সাইবার ক্যাফের দোকানের মালিক অমৃতলাল গুপ্ত ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “ধুলোর জন্য দেরিতে দোকান খুলি। কিন্তু ধুলোর দাপট এতটাই দোকানে বসে থাকতে ইচ্ছে করে না।” মুদি দোকানের মালিক বিনয়কুমার ভকতের কথায়, “ভোর থেকে দশ চাকার ট্রাক রাস্তায় চলছে। ধুলোয় জানালা-দরজা খোলা রাখা যায় না। বাড়িতে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ধুলোর জন্য অসুস্থ হয়ে পড়ছে।” অন্য এক ব্যবসায়ী কল্যাণ ঘোষ বলেন, “রাস্তার হাল এমন মোটরবাইক চললেও ধুলো উড়ছে।”
ধুলোর জন্য শুধু ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়েছেন তা না। ভুগছেন বাসিন্দারাও। জিতেন্দ্রলাল বন্দ্যোপাধ্যায় রোডের বাসিন্দা কার্তিক প্রসাদের ক্ষোভ, “পাকা রাস্তা সংস্কারে মোরাম ব্যবহার করা হচ্ছে। তাও আবার মোরামের গুণগত মান ভাল হলে কথা ছিল।” রাস্তার হাল এমন, মনে হচ্ছে এটা পুরসভার রাস্তা নয় পঞ্চায়েতের রাস্তা। ক্ষোভ এতটাই কেউ বলছেন, “পঞ্চায়েতে তাও এখন ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে গ্রামে গ্রামে ঢালাই রাস্তা হচ্ছে। দুর্গা পুজো গেল, লক্ষ্মী পুজো শেষ হয়ে গেল। সামনে শুধু কালী পুজো। কিন্তু পুরসভার কবে হুঁস ফিরবে কে জানে!”
অন্য দিকে, পড়ুয়া সায়ন হাজরা, ছাত্রী জয়শ্রী চন্দ্র, ব্রততী দাস, বৈভব শর্মাদের ক্ষোভ, “মোরামের জলে জামাকাপড় নোংরা হয়ে যায়। ভয়ে ভয়ে ছিলাম দুর্গাপুজোয় বৃষ্টি হলে নতুন জামাকাপড় পরে ঠাকুর দেখতে যাওয়াটাই মাটি হয়ে যাবে।”
পুরপ্রধান তৃণমূলের নির্মল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাফাই, “পিচ কেনা হয়ে পড়ে আছে। পরিষ্কার আবহাওয়া না পেলে পিচ করাটা ঠিক হবে কি? আমি তো ইঞ্জিনিয়ার নই। তাঁরা জানিয়েছেন, রাস্তা শুকলো পিচের কাজ শুরু করা ভাল। না হলে পিচ উঠে যাবে।” |