লাগামছাড়া লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ বীরভূমের সাধারণ মানুষ। একে অক্টোবরের মাঝমাঝি সময়েও প্যাচপ্যাচে গরম। বেলায় প্রখর রোদের তাপ। ঘরে বসে ফ্যান চালিয়েও ঘাম আটকানো যাচ্ছে না। তার উপরে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দফায় দফায় বিদ্যুৎ না থাকায় জনজীবন জেরবার। উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে ছোট-মাঝারি কল-কারখানাগুলিতে। হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রও লোডশেডিংয়ের কবলে পরে রোগীদের পরিষেবা ঠিকমতো দিতে পারছে না। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি জেলার চিকিৎসক, রাজনৈতিক নেতা, স্বাস্থ্যকর্তাসকলেরই গলায় ক্ষোভ ফুটে উঠছে।
বস্তুত, পুজোর কিছুদিন আগে থেকেই জেলায় লোডশেডিংয়ের দাপট বাড়ছিল। পুজোর চার দিন কোনও রকমে সামাল দেওয়া গেলেও গত কয়েক দিনে পরিস্থিতি অসহ্য হয়ে উঠেছে। মঙ্গলবারও জেলায় লোডশেডিং হয়েছে। ঘরে ঘরে লক্ষ্মী-আরাধনাও হয়েছে তারই মধ্যে। মানুষের ক্ষোভ বাড়লেও বিদ্যুৎ দফতর আশু কোনও সুরাহার কথা শোনাতে পারছে না।
বোলপুর শহরের গুরুপল্লির বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক তপন মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “এমনিতেই প্রচণ্ড গরম। তার উপর এই লোডশেডিং। এক কথায় হাঁফিয়ে উঠেছি।” বোলপুর সিয়ান মহকুমা হাসপাতালের সুপার সুদীপ মণ্ডল মঙ্গলবার বললেন, “জেনারেটর থাকায় অপারেশন থিয়েটার বা ব্লাড ব্যাঙ্কের পরিস্থিতি কোনও ভাবে সামাল দেওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে রোগীরা প্রচণ্ড কষ্ট পাচ্ছেন।” |
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক আশিস মল্লিকও জানিয়েছেন, লোডশেডিংয়ের ফলে জেলার অধিকাংশ হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রই সমস্যার মুখে পড়েছে। কোথাও পাম্প না চলায় জল উঠছে না, কোথাও জেনারেটর দিয়ে আলো জ্বললেও পাখা বন্ধ রয়েছে। সাঁইথিয়ার মনোহারি ব্যবসায়ী জয়দেব দে বা ওষুধ ব্যবসায়ী শ্যামল মিত্রদেরও একই কথা, “এ রকম অবস্থা আর সহ্য করা যাচ্ছে না!”
সমস্যায় পড়েছে কারখানাগুলিও। দুবরাজপুর, সাঁইথিয়া-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় থাকা সর্ষে তেলের কল মালিকদের দাবি, “লোডশেডিংয়ের জেরে উৎপাদন ঠিকমতো হচ্ছে না। দফায় দফায় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কারণে এক কুইন্টাল সর্ষে পিছু যে পরিমাণ তেল এমনিতে মেলে, তার চেয়ে অনেক কম পাওয়া যাচ্ছে। ফলে সব দিক থেকেই আর্থিক লোকসানের বোঝা বেড়েছে।” সিউড়ির রোলিং মিলের মালিক নিখিল অগ্রবালের ক্ষোভ, “বিদ্যুতের অতিরিক্ত মাসুলের জন্য এমনিতেই দু’টি শিফটে মিল চলে। আর গত ক’দিনে লোডশেডিংয়ে আমরা একদম নাজেহাল হয়ে গিয়েছি। সোমবার রাত ১০টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত একটা শিফটের কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে স্রেফ বিদ্যুৎ না থাকার কারণে। তার উপর লো-ভোল্টেজের সমস্যা তো বছরভর লেগেই রয়েছে। তার প্রভাবও উৎপাদনে পড়ছে।”
মহম্মদবাজারের পাঁচামি, রামপুরহাটের শালবাদরা এবং নলহাটির পাথর শিল্পাঞ্চলও লোডশেডিংয়ের জন্য সমস্যায় পড়েছে, শালবাদরা পাথর শিল্প মালিক সংগঠনের সম্পাদক মইনুদ্দিন হোসেন বলেন, “বিদ্যুৎ না থাকায় কম হচ্ছে। কেউ কেউ জেনারেটর দিয়ে ঠেকনা দিচ্ছেন বটে। তবে তাতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ।” একই অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন নলহাটি পাথর শিল্প মালিক সংগঠনের সম্পাদক তথা নলহাটির পুরপ্রধান বিপ্লব ওঝা। তাঁর কথায়, “আগে এমন ব্যাপক হারে লোডশেডিং হয়নি। তাই শুধু শিল্পাঞ্চল নয়, সাধারণ মানুষের প্রাণও ওষ্ঠাগত।”
তবে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার সিউড়ির ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণকান্ত মিশ্র বলেন, “লোডশেডিং কেবল বীরভূমের ময়, গোটা রাজ্যের সমস্যা। আসলে কয়লার অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। কোথাও কোথাও ইউনিট বসে গিয়েছে।” |