নিজস্ব সংবাদদাতা • কাটোয়া |
খুনের অভিযোগে ধৃত তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের লোকজনের ‘অত্যাচারে’ জীবন অতিষ্ঠ। এমন অভিযোগ তুলে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিলেন কেতুগ্রামের মৌগ্রাম পঞ্চায়েতের নতুনগ্রামের বাসিন্দারা। চিঠির প্রতিলিপ পাঠানো হয়েছে ডিআইজি, জেলাশাসক, পুলিশ সুপার-সহ প্রশাসনের ছয় কর্তার কাছেও।
এই চিঠি পাওয়ার পরে মঙ্গলবার কেতুগ্রাম থানার পুলিশ ওই গ্রামে তল্লাশি চালায়। তবে কেউ ধরা পড়েনি। পুলিশ জানায়, নতুনগ্রামের চার দিকে রয়েছে ভাগীরথী ও বাবলা নদী। এক পারে মুর্শিদাবাদ, অন্য পারে নদিয়া জেলা। মৌগ্রাম বা কল্যাণপুর ঘাট থেকে নৌকা করে পুলিশ নতুনগ্রাম যাওয়ার সময়ে দুষ্কৃতীরা খবর পেয়ে যাচ্ছে। ভৌগলিক অবস্থানের জন্য তারা পালানোর সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। কেতুগ্রাম থানার আইসি রঞ্জন সিংহ বলেন, “দুষ্কৃতীদের ধরার জন্য আমাদের বিকল্প পথ বের করতে হবে। আমরা আপাতত সেই চেষ্টাই করছি।”
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর শেরফুল শেখ নামে এক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার হয় নদিয়ার কালীগঞ্জ থানার মানিকডিহিতে। শেরফুলকে খুনের অভিযোগ ওঠে মৌগ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য হাসিবুল শেখ-সহ ছ’জনের বিরুদ্ধে। পুলিশ হাসিবুলকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, শেরফুলকে প্রথমে শ্বাসরোধ করে নতুনগ্রামে ভাগীরথীর ধারে খুন করা হয়। তার পরে নৌকা করে নিয়ে গিয়ে নদিয়ায় দেহটি ফেলে রেখে আসে দুষ্কৃতীরা। নিহত শেরফুলের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে ডাকাতির অভিযোগ ছিল। ধৃত হাসিবুল এখন জেল হেফাজতে রয়েছেন।
এই খুনের ঘটনার পিছনে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব রয়েছে বলে দাবি এলাকার কিছু বাসিন্দার। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি নতুনগ্রামে বন্যা হয়েছিল। প্রশাসনের তরফে ওই গ্রামে ত্রাণ পাঠানো হয়। সেই ত্রাণ বিলি নিয়ে সিপিএম থেকে সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া হাসিবুলের সঙ্গে দলেরই কয়েক জনের বিবাদ বাধে। এর জেরে ওই গ্রামে ত্রাণ বিলি বন্ধও হয়ে যায়। পরে জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা নতুনগ্রামে গিয়ে ত্রাণ বিলির ব্যবস্থা করেন। স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ, সিরাজুল ইসলামরা বলেন, “সে দিন প্রশাসনের কর্তাদের কাছে ভর্ৎসিত হন হাসিবুল। শেরফুলের সঙ্গেও তাঁর বিবাদ শুরু হয়।” জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে ওই গ্রামে শেরফুলের প্রভাব বাড়ছিল। সেই সময়ে হাসিবুল সিপিএম থেকে তৃণমূলে যোগ দেন। এলাকায় প্রতিপত্তি নিয়েই দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল।” কেতুগ্রাম ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি বিকাশ মজুমদার অবশ্য বলেন, “ওই গ্রামে আমাদের দলে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। গ্রামবাসীর অভিযোগের ব্যাপারে পুলিশ উপযুক্ত ব্যবস্থা নিক।”
হাসিবুল গ্রেফতার হওয়ার পরে তাঁর অনুগামীদের অত্যাচারে গ্রামে থাকা দায় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো চিঠিতে তাঁরা জানিয়েছেন, তোলাবাজি থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকম হুমকি দিচ্ছে ওই সব লোকজন। গ্রামবাসী প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না। এলাকার বাসিন্দা সামশুল আলম, শামিম মণ্ডলদের আর্জি, “পুলিশ-প্রশাসন ওই সব দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করে আমাদের শান্তিতে বসবাসের ব্যবস্থা করে দিক।”
জেলা পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীরের আশ্বাস, “দুষ্কর্ম করে কেউ পার পাবে না। সব দিক খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |